বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য বেড়েছে। আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম হওয়ায় বড় বাণিজ্যঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬১ কোটি ডলার।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ৫ হাজার ৩৯৩ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই ৯ মাসে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।
এছাড়া আমদানির বিপরীতে এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৯৩২ কোটি ডলারের পণ্য। যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময়ে ৩ হাজার ৬৪৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। টানা বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিলেও কয়েক মাসে এর পরিমাণ কিছুটা কমেছে। এলসি খোলা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে এমন সফলতা এসেছে। অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় ধীরে ধীরে আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধান কমে আসছে। এসব পদক্ষেপের কারণে আগামীতে ঘাটতি আরও কমে আসবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে ডিসেম্বর শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি ছিলো ১ হাজার ২৩০ কোটি ডলার। মার্চ শেষে যার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৬১ কোটি ডলার। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ২৩১ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ শেষে সেবা খাতে দেশের আয় হয়েছে ৬৫০ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় ৯৪০ কোটি ডলার। এতে সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৮৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৭৯ কোটি ডলার।
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স এখন ঋণাত্মক। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) চলতি হিসাবে ঘাটতি হয়েছে ৩৬৪ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিলো ১ হাজার ৪৩৪ কোটি ডলার।
এছাড়া সামগ্রিক লেনদেনেও বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। মার্চ শেষে সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৮১৬ কোটি ডলারে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে (ঋণাত্মক) ৩০৯ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল। তবে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই বেড়েছে। আলোচ্য এই ৯ মাসে এফডিআই এসেছে ৩৭৮ কোটি ডলার। যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৩৫৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এসেছিল।
এদিকে গত বছরের শুরু থেকেই দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমছে ধারাবাহিকভাবে। ডলার সংকট কাটাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভের পরিমাণও কমছে ধারাবাহিকভাবে। অর্থবছরের শুরুতে রিজার্ভ ছিল ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বর্তমানে তা কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে।