সংবিধান অনুযায়ী জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে বদ্ধপরিকর বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে দাবি করেছে বাংলাদেশ সরকার। সোমবার জেনেভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে এই বক্তব্য তুলে ধরেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার সংবিধান অনুযায়ী জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে বদ্ধপরিকর। নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে, বিশ্বাসযোগ্যভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে এজন্য তাদের যথেষ্ট ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিকে অসাংবিধানিক হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘এটি অসাংবিধানিক ও অবৈধ।’
সংবিধানের বাধ্যবাধকতার প্রেক্ষিতে সরকার সব রাজনৈতিক দলকে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ সমাবেশের, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের অনুমোদন দিচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘আমরা দেখছি বিএনপির কর্মীরা সহিংসতা ছড়াচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমকর্মী, নিরপরাধ মানুষ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্কুলকে সহিংস হামলার লক্ষ্য বানিয়েছে।’ কোনো রকমের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ আটক করছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)-এর চতুর্থ পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সবশেষ এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের মে মাসে। তৃতীয় সেই পর্যালোচনায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মোট ১৭৮ সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছিল উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, এর সবগুলো বাস্তবায়নে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।
বাংলাদেশের বিরোধী দলের উপর রাজনৈতিক দমন পীড়নের অভিযোগ থাকলেও বর্তমান সরকারের অধীনে বরং তারা বেশি সুযোগ পাচ্ছে বলে আনিসুল হক দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক সুযোগের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে। সংসদে বিরোধী দলগুলো সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে। আগের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিপরীতে সংসদীয় কমিটিতে কয়েকটি সভাপতির পদ বিরোধীদের দেয়া হয়েছে। আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বিরোধী সংসদ সদস্যদের মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনো মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ড করে থাকলে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি। জানান, ২০১৫ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৬৯২টি ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। ৮ হাজার ৪৮৮ জন পুলিশের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২৪টি মামলা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ‘বাংলাদেশে পূর্ণ মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে’। গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে সরকার অনলাইন ও অফলাইনে মতো প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিয়েছে। বর্তমানে দেশে ৩৯টি টিভি চ্যানেল, ৫৭৬টি সংবাদপত্র ও ১৮২টা অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে। ২৩২৮ টি স্থানীয় এনজিও ও ২৬৭টি বিদেশি এনজিও কোনো ধরনের বাধা বা সেন্সরশিপছাড়া কাজ করতে পারছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ ইউপিআর এর সুপারিশগুলো নিয়মিতভাবে ফলোআপ করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন সরকার জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস মেকানিজমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ‘সামনের দিনে আন্তর্জাতিক অন্য বাধ্যবাধকতাগুলোতে প্রবেশের আগে বাংলাদেশের জাতীয় প্রাতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারে আমাদের মনযোগী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে,’ বলেন তিনি।
এছাড়াও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ আইএলও কনভেনশন বাস্তবায়ন করছে বলে জানান তিনি। ন্যূনতম মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ঘটনাকে সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার নাশকতা হিসেবে দেখছে বলেও জানান। এক্ষেত্রে সরকার শ্রমিকদের রক্ষা ও অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ায় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
সবশেষে মন্ত্রী বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমরা সবশেষ ইউপিআর এর প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছি। তারপরও সবসময়ই উন্নতির সুযোগ থাকে।’