সরকারের পদত্যাগসহ একদফা এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে আজ বুধবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানান।
দাবি আদায়ে গতকাল মঙ্গলবার চতুর্থ দফায় দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্র্মসূচি করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দিলে পরদিন থেকে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে দলটি। এ পর্যন্ত চার দফায় পাঁচদিন এবং ১১ দফায় ২৩ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী জানান, আজ বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলমান আন্দোলনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেবেন। এ সময় রিজভী অভিযোগ করেন, রাশিয়া ও ভারতের ওপর ভর করে সরকার ‘একতরফা’ নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি ভোটারদের নিরুৎসাহিত করতে লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে দলটি। বিএনপি নেতারা মনে করেন, আন্দোলন চলমান থাকলেও সরকার ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করে ফেলবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরও আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
২৪ ঘণ্টায় ২২৫ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার : রিজভী জানান, গতকাল বিকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে পুলিশ আরও ২২৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার এবং ৮টি মামলায় ৭৯৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দিলীপকে না পেয়ে তার ভাগিনা এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তাসকিন জোভানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। অথচ তাসকিন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
রাশিয়া ও ভারতের সমর্থনে একতরফা নির্বাচন : সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গোটা জাতি ভয়ঙ্কর জঙ্গলের মধ্যে বাস করছে। এখানে চারদিক থেকে ঘিরে আছে ভয় ও আতঙ্কের ব্যারিকেড। একদলীয় ভোটারবিহীন নির্বাচন নিশ্চিত করতে এই ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা বেপরোয়া। উনি ভাবছেন রাশিয়া আছে, ভারত আছে – আমার আবার ভয় কিসের।
রিজভী বলেন, তাদের (রাশিয়া ও ভারত) কর্তাব্যক্তিরা প্রায়ই স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকুক বা না থাকুক- ভারত ও রাশিয়ার যায়-আসে না। তাদের নিজ দেশে গণতন্ত্রের বিশাল ঘাটতি একনায়কতন্ত্রের শাসন। তাদের সমর্থনে আজ শেখ হাসিনার পোয়াবারো।
ভারত নিজে গণতান্ত্রিক দেশ; কিন্তু সে অন্য দেশের গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা গণতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হোক- তা চাচ্ছেন না। যে ক’জন কর্তাব্যক্তিরা এসেছেন, তারা প্রত্যেকেই জনগণের ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে জনসমর্থনহীন সরকারকে সমর্থন দিচ্ছেন। এতে বাংলাদেশের মানুষ বিস্মিত হতবাক। ভারতের কাছ থেকে তো এটা কামনা করা যায় না। কিন্তু যারা আধিপত্যবাদী শক্তি, তারা সব সময় চায় তার আশপাশের ছোট দেশগুলোকে কব্জা করতে। ভারতের বর্তমান অবস্থানকে ‘বড় দুর্ভাগ্যজনক’ অভিহিত করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।