বিশ্বব্যাপী করোনার চোখরাঙানি যেন কমছেই না! বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা মহামারি আবারও ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। বিশেষত করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিএফ.৭ ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় আগের চেয়ে অধিক আকারে বিস্তার লাভ করছে নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট। আক্রান্তের সংখ্যা পুনরায় বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে চীন। আমাদের দেশেও যাতে এই ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার না ঘটতে পারে, সেজন্য সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ইতিমধ্যে। কিন্তু আমরা জানি, করোনা ভাইরাস মহামারি রোধে একক পদক্ষেপ কখনোই যথেষ্ট নয়। কোভিডের বিস্তার রোধে সর্বসাধারণের সচেতনতার বিকল্প নেই।
করোনা ভাইরাস নতুন কিছু নয়। ২০১৯ সালে প্রথম বারের মতো চীনে করোনা ভাইরাস মহামারি রূপ ধারণ করে। এরপর এর বিস্তার বাড়তে থাকে বিশ্বব্যাপী। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে দেশে দেশে। বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কারণে মৃত্যুবরণ করেছে ৬৬ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি মানুষ। ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে করোনা ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে তা কেড়ে নেয় প্রায় ২৯ হাজারের বেশি প্রাণ। আগের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, করোনা মহামারি বাংলাদেশসহ বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। মহামারি আকারে দেখা দেওয়ার পরপরই অক্সিজেন, ওষুধ, মেডিক্যাল সরঞ্জামসহ চিকিত্সাব্যবস্থায় চরম দৈন্য দেখা দেয়। সক্ষমতার অভাবে বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে! হাসপাতালগুলোতে বাড়তে থাকে মৃত্যুর মিছিল। প্রয়োজনীয় সেবার অভাবে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে বেড়াতে হয় ভুক্তভোগীদের। বাস্তবতা হলো, করোনা ভাইরাস শুধু একটি ঘাতকই নয়, কোটি কোটি মানুষের গৃহবন্দি থাকার কারণ, লাখ লাখ মানুষের অনাহারে দিনযাপনের কারণ। করোনার কারণে আজ বহু মানুষ ঘুরছে আত্মীয়স্বজন হারানোর ব্যথা বুকে নিয়ে। তাই ভবিষ্যতেও যাতে আমাদের আবার একই রকম বিভীষিকার সম্মুখীন হতে না হয়, সেজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সচেতনতা অবলম্বন। যেহেতু কারো একার পক্ষে এই ভাইরাসের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, তাই এই মহামারি রুখতে গঠনমূলক ও কার্যকর উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।
করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতায় বলা হয়েছে—করোনার নতুন ধরন বিএফ.৭ অতিমাত্রায় সংক্রমণশীল। এটি বিএ.৫-এর একটি উপ-ভ্যারিয়েন্ট। এটি একজনের দেহ থেকে ১৮ জনকে সংক্রমিত করতে পারে। অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের থেকে এর সংক্রমণের মাত্রা চার গুণ বেশি। যদিও নতুন এই ভ্যারিয়েন্টে মৃত্যুর হার কম, তবু এর থেকে সুস্থ থাকতে ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিকল্প নেই। যেহেতু এটি সহজেই বেশিসংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তাই পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে তার দ্বারা তার আশপাশের লোকদেরও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এজন্য এর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আমাদের উচিত মাস্ক ব্যবহার করা, সাবান ও স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও বাড়ির আশপাশ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা ও টিকা গ্রহণ করা। বর্তমানে দেশে করোনার চতুর্থ ডোজ টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে আমাদের নির্দেশিত টিকা গ্রহণ করতে হবে। উপেক্ষা নয়, কেবল সচেতনতা ও সম্মিলিত পদক্ষেপই পারে করোনার প্রকোপ থেকে আমাদের রক্ষা করতে। মোট কথা, করোনা প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই।