হিজাব না পরার অপরাধে গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশ হেফাজতে থাকা মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠেছে ইরান। এ সময় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৫ জন নিহত হয়েছেন। এই সময় আহত হয়েছেন অনেকেই।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশে জনগণের বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
গত সপ্তাহে পুলিশি জিম্মায় ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনি নামের ওই তরুণীর মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো দেশজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ।
বিশ্ব গণমাধ্যম জানাচ্ছে, হিজাব না পরার কারণে গত সপ্তাহে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ মাশা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। কুর্দিস্তান প্রদেশে নৈতিকতা পুলিশের জিম্মায় থাকাকালীন অসুস্থ হয়ে কোমায় যাওয়া ওই তরুণীর মৃত্যুর পর রাজধানী তেহরানসহ দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে রাস্তায় নেমে লোকজন বিক্ষোভ করেছেন।
দেশটির স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা হেঙ্গাও মানবাধিকার টুইটারে এক বার্তায় বলেছে, আমিনির নিজ শহর সাকেজে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দু’জন নিহত হয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে ছোড়া গুলিতে দিভান্ডারেহ শহরে আরও দু’জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া দেহগোলান শহরে পঞ্চম একজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
তবে পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারীদের প্রাণহানির তথ্য নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও বিক্ষোভকারীদের প্রাণহানির ব্যাপারে কোনও তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, ইরানের সাতটি প্রদেশের বেশ কয়েকটি শহরে ‘সীমিত’ পরিসরে বিক্ষোভ হয়েছে। তবে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভ থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভে আহত দুই যুবককে দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলা মৃত্যুর অভিযোগও অস্বীকার করা হয়েছে।
আমিনির মৃত্যুর পর দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ফার্সি হ্যাশ ট্যাগ মাশাআমিনি (#MahsaAmini) ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। এই হ্যাশ ট্যাগ ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ টুইট করেছেন দেশটির বিক্ষোভকারীরা।
জানা গেছে, পড়াশোনা সূত্রে ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশে থাকতেন মাশা আমিনি। গত সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে রাজধানী তেহরান এসেছিলেন। হিজাব ও বোরকা না পরে বাড়ির বাইরে বের হওয়ায় বৃহস্পতিবার মাশা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায় ইরানের নৈতিকতা পুলিশ। হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার দু’ঘণ্টা পরই গুরুতর আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, গুরুতর শারীরিক নির্যাতনের জেরেই মৃত্যু হয়েছে মাশার।