গতকাল রাত পর্যন্তও মর্তের জমিনে ছিলেন ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলে। প্রাণহীন নিথর দেহে পড়েছিলেন কফিনে। কিন্তু দুনিয়ার জমিনে এখন তিনি শুধুই স্মৃতি। গতকাল রাতেই যে সমাধিস্থ হয়েছেন ফুটবলের রাজা। কিংবদন্তি পেলের ইচ্ছা অনুযায়ীই তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে সান্তোসের সমাধিস্থল নেক্রোপোল একুমেনিয়াতে। ১৪তলা ভবনের ৯ম তলায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন তিনি।
আগের দিন ব্রাজিলের সাধারণ মানুষকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দিতে কিংবদন্তি পেলের মরদেহ রাখা হয়েছিল সান্তোস ক্লাবের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। সেখানে অস্থায়ী মঞ্চে রাখা কফিনে ঘুমিয়ে থাকা পেলেকে সারা দিন শ্রদ্ধা জানান ব্রাজিলিয়ানরা। সান্তোসের শ্রদ্ধার্ঘ শেষে গতকাল শুরু হয় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মূলপর্বে। পাঁচ বারের বিশ্বকাপজয়ীর মরদেহ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে করে সান্তোসের চারদিকের রাস্তায় প্রদক্ষিণ করা হয়। এটাই ব্রাজিলিয়ানদের ঐতিহ্য। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এ পর্বে অংশ নেন শুধুই কিংবদন্তি পেলের পরিবারের সদস্য ও কাছের মানুষেরা।
সান্তোসের রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার পৈতৃক ভিটায়। সেখানে চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে পড়া ছেলেকে শেষ বারের মতো বিদায় জানান তার শতবর্ষী মা ডোনা সেলেস্তে অরান্তেস। ১০০ বছর বয়সী ডোনা সেলেস্তে অরান্তেস নিজেও অবচেতন অবস্থায় শয্যাশায়ী। ছেলের মৃত্যুর বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরেছেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তবে শয্যাশায়ী অবস্থাতেই তাকে কিংবদন্তি পেলের কফিনের কাছে নেওয়া হয়।
এরপর ফুটবলের রাজাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির খুব কাছেই নেক্রোপোল একুমেনিয়াতে। সেখানে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে সমাধিস্থ হন পেলে। সঙ্গে সঙ্গেই সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার বন্দি হয়েযান শুধুই স্মৃতির পাতায়।
দীর্ঘ দিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ব্রাজিল কিংবদন্তি অবশেষের হার মেনেছেন গত বৃহস্পতিবার। সান্তোসের আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে ফুটবল দুনিয়ায় নেমে আসে শোকের ছায়া। রাজা পেলের মৃত্যুতে ব্রাজিলে ঘোষণা করা হয় তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। ততদিন পেলের মরদেহ হাসপাতালেই রাখা ছিল। এরপর পেলের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার প্রিয় ক্লাব সান্তোসের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। যে স্টেডিয়ামের মাঠ, ঘাস, দেয়াল, ড্রেসিংরুম, প্যাভিলিয়ন, টানেল-পেলের হাজারো কীর্তির স্বাক্ষী।