বিদেশে সম্পদ আছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে যাদের সম্পদ আছে এমন ব্যক্তিরাই এখন সরকারের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। তাদের অবস্থা এখন ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা-নীতি, অন্যদিকে সরকারকে সহযোগিতা করা, কোন দিকে যাবেন তারা? যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা-নীতির কারণে এখন যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রেখে সরকারকে সহযোগিতা করার সুযোগ নেই। উলটো সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপরও কেউ কেউ। কারণ তারা সরকার পরিবর্তন হলেই উড়াল দেবেন আমেরিকায়। সব ধরনের ব্যবস্থা তারা করে রেখেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে গোয়েন্দারা বিদেশে সম্পদ আছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ কিনেছেন এমন ব্যক্তিদের তালিকা করছেন। প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, বিদেশে সম্পদ গড়া ব্যক্তিদের মধ্যে শীর্ষে আছেন আমলারা। এছাড়া বড় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য আছেন। অনেকের স্ত্রী আমেরিকায় নাগরিকত্ব নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সন্তানরাও সেখানে পড়াশোনা করছে। নিজের পাসপোর্টেও লম্বা মেয়াদে আমেরিকার ভিসা লাগানো আছে। এই ধরনের ব্যক্তিরা সরকারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাদের কেউ কেউ আমেরিকাকে খুশি করার চেষ্টা করছেন।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি এক জন রাজনৈতিক নেতা এমন বক্তব্য দিয়েছেন যাতে সরকারের সমালোচনা কিংবা বেকায়দায় পড়ে। অত্যন্ত পরিচিত, শিক্ষিত ঐ নেতা রাষ্ট্রের একটি বিভাগ নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন সেটা কোনোভাবেই তার করার কথা না। কেন তিনি এমন মন্তব্য করলেন? সেই বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে গোয়েন্দারা দেখেছেন, ঐ নেতার আমেরিকায় সম্পদ রয়েছে। এখন তিনি কারো পরামর্শে, না আমেরিকাকে খুশি করতে এমন মন্তব্য করলেন সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। এছাড়া আমলাদের মধ্যে যারা আমেরিকায় সম্পদ করেছেন তাদের অনেকেই গত ১০-১২ বছরে সরকারের ঘনিষ্ঠ সেজে সম্পদ করেছেন। এদের অনেকেই সরকার বদল হলে নিজের অবস্থানও বদলে ফেলবেন। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা-নীতিতে বিচলিত তারা।
ঔ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, অনেকেই লেবাস পরিবর্তন করে গত এক-দশকে সরকারপন্থি হয়ে পদোন্নতিসহ নিজের আখের গুছিয়েছেন। বিদেশে করেছেন সম্পদের পাহাড়। এরাই এখন সরকারের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছেন। তারা নিজে বাঁচবেন, না সরকারকে সহযোগিতা করবেন? কোন দিকে যাবেন তারা? সবকিছু ছেড়ে এখনই চলেও যেতে পারছেন না? দারুণ বেকায়দায় পড়েছেন এসব ব্যক্তি। তাদের নিয়ে আবার বেকায়দায় পড়েছে সরকারও। যে কোনো সময় এরা ভোল পালটে সরকারকে সংকটে ফেলে দিতে পারেন। গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তালিকা পাওয়ার পর এদের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার।
অনেক ব্যবসায়ী সরকারের সহযোগিতায় ব্যবসা করে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হয়েছেন, তাদের কেউ কেউ এখন সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে যুক্ত হয়েছেন। এসব ব্যবসায়ীর টাকার বড় একটা অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে। গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বের হয়ে আসছে।