রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনেও পড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সবকিছুর দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে যে যতটুকু আমাদের নিজস্ব গ্যাস আছে, তাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখাটাই কষ্টকর ব্যাপার হয়ে গেছে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, সেই বিষয়টাও আপনাদের আমি জানাতে চাই। আমাদের যতটুকু পারা যায় বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে হবে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে।
বুধবার (৬ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’, ‘শেখ জামাল ডরমিটরি’ এবং ‘রোজী জামাল ডরমিটরি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। সরকারপ্রধানের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কষ্টকর হয়ে গেছে। আর এই কারণে উৎপাদন সীমিত রাখতে হচ্ছে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে লোডশেডিংও করতে হচ্ছে।
গণবভন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে সতর্ক করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের পর আমেরিকা রাশিয়ার ওপর স্যাংশন দিল, ইউরোপ স্যাংশন দিল। অবস্থাটা কিন্তু এই দাঁড়িয়েছে এখন তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে, ডিজেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে।’
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। ওইদিন থেকেই শুরু হয় যুদ্ধ। বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ার দূরত্ব প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটার আর ইউক্রেনের প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার। এত দূরে থেকেও পূর্ব ইউরোপীয় এই ২ দেশের দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের বাজারে তেল, গমসহ অন্যান্য অনেক খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে গেছে।
বিশ্বে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন একটি অর্থনৈতিক যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর। বিশেষ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশ রাশিয়াকে দমানোর জন্য নেয়া এ যাবতকালের সবচেয়ে কঠোরতম উদ্যোগটি নিয়েছে।
তারা রাশিয়ার প্রথম সারির কয়েকটি ব্যাংকের ওপর সুইফট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেই সমমনা দেশগুলো রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক একাউন্টগুলোও জব্দ করে দেয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ আমদানি-রপ্তানিসহ নতুন নতুন আরও এক গাদা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্বব্যাপী।
ফার্নেস অয়েল, এলএনজি, কয়লা, ডিজেলসহ বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণের দাম বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন একটা ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে সারাবিশ্ব যাচ্ছে। স্যাংশনটা যদি না হতো, তাহলে কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধও করত, আবার তাদের তেল, ফার্টিলাইজার, গম ও অন্যান্য সাপ্লাইটাও ঠিক থাকত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশীয় পণ্যের দাম যেমন বেড়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি যেসব পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে তারও দাম বেড়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমরা সবার ঘরে দিয়েছি এটা ঠিক, আবার বর্তমানে আমাদের লোডশেডিংও করতেই হবে, উৎপাদনও আমাদের সীমিত রাখতে হবে। যাতে আমাদের ভর্তুকিটা না দিতে হয়।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমদানি করা গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখার জন্য সরকারকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে, সেটা কতক্ষণ দিতে পারবে। কারণ, আমাদের মানুষের খাদ্য দিতে হবে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, গৃহহীনদের ঘর দিতে হবে… প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন একটাই উপায়, ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি, প্রত্যেক এলাকাভিত্তিক কখন, কোন এলাকায় কত ঘণ্টা লোডশেডিং হবে, এটার একটা রুটিন তৈরি করে সেভাবেই লোডশেডিং ডিজাইন করতে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেন মানুষ সেই সময়টায় প্রস্তুত থাকতে পারে। মানুষের কষ্টটা যেন আমরা লাঘব করতে পারি। সেই বিষয়টাই এখন আমাদের নজরে নিতে হবে। আমি আশা করি দেশবাসী অন্তত এই ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করবেন।’