বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতে বাকি আর মাত্র ৫ দিন। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল মরুভূমির দেশ কাতারেড় মাটিতে বসবে বিশ্বকাপের মহারণ। সেই বিশ্বকাপের উম্মাদনা ছুঁয়ে গেছে এদেশের অগণিত ফুটবল ভক্তদেরও। সারাদেশের মত বগুড়ার মানুষও মেতে উঠতে শুরু করেছে ফুটবলের উন্মাদনায়। ফুটবলভক্ত মানুষরা নিজেদের বাসা-বাড়িতে বা দোকানে তাদের প্রিয় দলের পতাকা টানিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতে শুরু করেছে। কেউ কেউ জার্সি গায়ে দিয়ে কোন দলের সমর্থক তাও জানিয়ে দিচ্ছে।
হাজার মাইল দূরে ৩২ দলের এই খেলার সমর্থকরা যে দেশকে পছন্দ করেন সেই পতাকা এখন তৈরি হচ্ছে বগুড়ার প্রত্যন্ত এক গ্রামে। যারা তৈরি করছে তাদের মধ্যেও শুরু হয়েছে একই উন্মাদনা।
বগুড়া শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে ছোট এক গ্রাম চকঝপু। শহর থেকে সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা যেতে সড়কের পাশেই এই গ্রামটি। রাস্তা থেকে নেমে মেঠো পথ দিয়ে সামান্য কিছুদূর গেলেই চকঝপু গ্রাম।
গ্রামেরই বাসিন্দা আব্দুর রউফ (৪৩), তার বাড়িতেই চলছে বিশ্বকাপ ফুটবলের পতাকা তৈরির কাজ। আব্দুর রউফ পেশায় একজন ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী। শহরের চাঁদনীবাজারে (কাঁঠালতলা) মশারী ও তার নেট বিক্রি করেন তিনি। এখন সেগুলোর সঙ্গে সিজন অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের পতাকা তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহও করেন।
শুধু বিভিন্ন দেশের নয়, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাও তৈরি করেন তিনি। আব্দুর রউফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির বারান্দায় বসে তার স্ত্রী রাজিয়া খাতুনসহ বেশ কয়েকজন নারী বিভিন্ন দেশের পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত। একটুও অবসর সময় পাচ্ছেন না তারা। কারণ সময় আর বেশি নেই,তাই তারাও কাজের ফুরসত পাচ্ছেন না। বিশ্বকাপ ফুটবলে ৩২টি দল অংশগ্রহণ করলেও ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার পতাকার চাহিদা বেশি। তাদের তৈরি পতাকা যাবে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
পতাকা তৈরি করতে করতেই মুন্নী বেগম জানালেন,বিশ্বকাপ ফুটবলের আগে এই পতাকা তৈরি করে বাড়তি আয় হচ্ছে। বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগে থেকেই এসব কাজ করছেন।
আব্দুর রউফ জানালেন, তিনি সাধারণত মশারী তৈরি ও বিক্রি করে থাকেন। ১৯৯৬ সালের দিকে কিছু পতাকা বাইরে থেকে এনে বিক্রি শুরু করেন। বিশ্বকাপ ফুটবল ছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সারা বছর বিক্রি করেন। এভাবেই প্রতিটি বিশ্বকাপের আগে বিভিন্ন দেশের পতাকা বিক্রি করে আসছেন।
আগে তিনি এসব পতাকা বাইরে থেকে কিনে এনে খুচরো ও পাইকারি বিক্রি করতেন। ২০১৮ বিশ্বকাপের সময় প্রায় ১৮ লাখ টাকার পতাকা বিক্রি করেছেন তিনি। তখন থেকে বিভিন্ন পাইকাররা তাকে উৎসাহিত করেন নিজেই পতাকা তৈরি করতে। তাই এবার নিজ বাড়িতে এসব পতাকা তৈরি করেছেন।
তিনি জানান,এবার এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ১২ হাজার পতাকা তৈরি করেছেন। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ছাড়াও জার্মানি, পর্তুগাল, ফ্রান্স, স্পেনের পতাকার চাহিদা বেশি। অন্য দেশের পতাকাও চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে দেওয়া হয়। তবে নিজের দেশ বিশ্বকাপে খেললে আরো ভাল লাগতো বলেও জানান তিনি।
আব্দুর রউফ বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে এ বছর পতাকা বিক্রি কম হচ্ছে। এটা নিয়ে চিন্তিত আমি। কারণ ইতোমধ্যে এই কাজে প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। যে পাইকাররা এসব পতাকা কিনতে উৎসাহিত করেছিল তারা এবার সেভাবে কিনছে না। প্রতিটি সাড়ে তিন ফুট সাইজের পতাকা ৫০ টাকা ও ৬ ফুটের পতাকা ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়। বগুড়া শহরের সাতমাথাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ফেরি করেও যেসব পতাকা বিক্রি হচ্ছে সেগুলো তার হাতেই তৈরি। তারা পাইকারি কিনে নিয়ে বিক্রি করছেন।
এবার বিক্রি কম কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কারণে হয়তো মানুষ পতাকা কম কিনছে, তবে তিনি আশাবাদি বাঙালি যেভাবে ফুটবল উন্মাদনায় মেতে থাকে তাতে শেষ মূহুর্তে পতাকা বিক্রি বেড়ে যাবে। পতাকা বিক্রি করলেও সময়ের অভাবে তার ফুটবল খেলা তার দেখা হয়ে উঠেনা বলেও জানান তিনি।