প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম উচ্চ রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশ। ২০১৯-২০ অর্থ-বছরে রেমিট্যান্স হিসেবে ১৮.২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জিত হয় এবং ২০২০-২১ অর্থ-বছরে এটি রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে যা পূর্ববর্তী অর্থ-বছরের তুলনায় ৩৬.১০ শতাংশ বেশি। সেই সুবাদে প্রবাস আয় প্রাপ্তিতে বিশ্বে সপ্তম স্থান অধিকার করে বাংলাদেশ।
বুধবার (১৫ জুন) জাতীয় পার্টির এমপি রুস্তম আলী ফরাজীর এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ অধিবেমনে সভাপতিত্ব করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থ-বছরে রেমিট্যান্স কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এবং জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ১৭.৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জিত হয়েছে, যা পূর্ববর্তী অর্থ-বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬.২৫ শতাংশ কম। বিগত ২০১৯-২০, ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৭-২০১৮ অর্থ-বছরের প্রথম ১০ মাসের রেমিট্যান্সের গড় ছিল ১৩.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কোভিড পূর্ববর্তী তিন বছরের প্রথম ১০ মাসে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের গড় অপেক্ষা ২০২১-২২ অর্থ-বছরের প্রথম ১০ মাসে পাওয়া প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি ২৮.৯১ শতাংশ বেশি। কাজেই, চলতি অর্থ-বছরে রেমিট্যান্স হ্রাস পেয়েছে না বলে বলা যেতে পারে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কোভিড পূর্ববর্তী স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, ২০২০-২১ অর্থ-বছরে কোভিড অতিমারির সময় প্রবাস আয়ে অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চলতি ২০২১-২২ অর্থ-বছরে বিগত ২০২০-২১ অর্থ-বছরের তুলনায় প্রবাস আয় বেশ কিছু কারণে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। হ্রাসের কারণগুলো হলো: ২০২০-২১ অর্থ-বছরে শুরুতে কোভিড অভিমারিতে প্রবাসীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে তাদের জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছিলেন। অনেকে চাকরি হারিয়ে কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে সব অর্থ দেশে নিয়ে এসেছেন। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। অনেক প্রবাসী নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতি কোডিড-১৯ অভিমারিকে সফলভাবে মোকাবেলা করে স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসলেও বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগকারী প্রধান প্রধান দেশের অর্থনীতিসমূহ এখনও স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসেনি। ফলে ওইসব দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীদের প্রবাস আয় তুলনামূলকভাবে কম থাকায় রেমিট্যান্স পাঠানো কমে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ-যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়েছে। ফলে, ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরেও অর্থের লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২২ এর প্রথম চার মাসে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৮ জনের বিদেশে কর্মসংস্থান।
প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনা পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও প্রবাস নিয়োগ বেড়ে চলেছে। ২০২০ সালে কোভিডের সময় ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন বাংলাদেশী কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থাণ হয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম চার মাসে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৮ জন প্রবাসে নিয়োগ পেয়েছেন।
তিনি জানান, জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানো ও বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর মাধ্যমে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি ও বৈধ পথে প্রবাস আয় পাঠানোকে আকর্ষণীয় করে তোলার মাধ্যমে পুনরায় রেমিট্যান্স প্রবাহ জোরদার করতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্যহলো- বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৭০টি দেশে ১ কোটি ২০ লাখের অধিক কর্মী কর্মরত আছে। সরকার বিদেশগামী কর্মীদের নিরাপদ অভিবাসন ও সম্মানজনক পেশা নিশ্চিতকরণের উপর গুরুত্বারোপ করছে। কোভিড-১৯ অতিমারির চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় সরকার নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানে সচেষ্ট রয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে প্রতি বছর ১ হাজার কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশগামী প্রত্যেক কর্মীকে মাইক্রো চিপস সম্বলিত স্মার্টকার্ড দেয়া হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে ভিসা যাচাই উদ্ভাবনের ফলে বিদেশগামী কর্মীরা সহজেই ভিসা যাচাই করতে পারছেন এবং তারা হয়রানী ও আর্থিক ক্ষতি হতে নিরাপদ থাকছেন।