বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আশংকা করছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্বোচ্চ সূদ হার ঘোষণা করেছে।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বলছে, ভোগ্যপন্যের মূল্য বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার চেষ্টায় সূদ হার বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প উপায় ছিল না। মার্চ মাসের পর এটি তৃতীয় দফা সূদ হার বৃদ্ধির ঘটনা ঘটলো।যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় এই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বলেছে, গত মাসেও মুদ্রাস্ফীতি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ভোক্তাদের জীবনে নাভিশ্বাস ওঠেছে। অর্থনীতিবিদরা দ্রব্যমূল্য আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন। তারা বলেছেন, অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ব্যাংকগুলোর ঋণের ওপর ফেডারেল সূদ হার বছর শেষে ৩.৪ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। ফলে মর্টগেজ, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য ঋণের ওপর সূদ হার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে জনগণের ওপর আর্থিক চাপ আরও বাড়তে পারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের সর্বত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার জন্য একই পন্থা অবলম্বন করতে শুরু করেছে, যা সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।
কৌশল নির্ধারণী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইরয়াই পার্থিনন এর প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রেগরি ড্যাকো বলছেন, ‘অধিকাংশ অগ্রসর অর্থনীতির দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং কিছু বিকাশমান দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের অর্থনৈতিক নীতিমালাকে কঠোর করছে। আমরা গত কয়েক দশক যাবত যে আন্তর্জাতিক পরিবেশ দেখতে অভ্যস্ত তার পরিবর্তন ঘটে চলেছে এবং বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে।’
যুক্তরাজ্যে ভোগ্যপন্যের মূল্য গত এপ্রিল মাসে ৯ শতাংশ বেড়েছে। গত দেড় মাসে মূল্য সূচক আরও বেড়েছে। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড গত ডিসেম্বর মাসের পর থেকে এ পর্যন্ত সূদ হার পঞ্চম দফা বৃদ্ধি করেছে। ব্রাজিল, কানাডা ও অষ্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও সুদ হার বাড়িয়েছে। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক আভাস দিয়েছে, আসছে গ্রীষ্মে তারা সূদ হার বৃদ্ধি করবে।
২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার জন্য ফেডারেল রিজার্ভ বছরে দু’বার ০.২৫ শতাংশ হারে সূদ হার বৃদ্ধি করেছিল। ওই সময় ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল বলেছিলেন, ‘তারা দ্রুত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশ্কংকা করছেন না।’
গত সপ্তাহে মুদ্রাস্ফীতির হার ৮.৬ শতাংশে উন্নীত হওয়ায় ফেডারেল সরকার সংকটে পড়েছে। গত ৩০ বছরে মুদ্রাস্ফীতি হার এত দ্রুত এই পরিমাণ কখনো বাড়েনি। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কী করা যেতে পারে তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। পাওয়েল বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনা দরকার। তিনি স্বীকার করেন যে মুদ্রাস্ফীতি অসহনীয় পর্যায়ে পৌছে গেছে।
কোন কোন পর্যবেক্ষক বলছেন যে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পেরে ওঠার মতো ব্যবস্থা ফেডারেল রিজার্ভের নেই। তারা অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি এখনো বুঝতে অক্ষম। কারণ পাওয়েল গত বছর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমস্যাকে সাময়িক ও সরবরাহ ব্যবস্থার সমস্যার সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করেছিলেন। মূলত তখন থেকে মুদ্রাস্ফীতি তীব্র হতে শুরু করে। এরপর ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি নাজুক করেছে। কোভিডের আক্রমণতো আগে থেকেই ছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালিত অধিকাংশ সমীক্ষায় দেখা গেছে যে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হওয়ার আশঙ্কা থেকে মুক্ত হতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ। তারা মনে করছেন যে ফেডারেল রিজার্ভ দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল পর্যায়ে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও তাদের পক্ষে পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা হয়ত সম্ভব হবে না।