যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংকের পতনের ধাক্কায় বিশ্ব জুড়ে ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন ঘটেছে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ব্যাংক দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মার্কিনিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ব্যাংক দুটির পতনের ধাক্কায় অন্য ব্যাংকগুলোও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এতে বিশ্ব জুড়ে ব্যাংকের শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হয়।
সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের (সুইস ব্যাংক) শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। গত বুধবার এই ব্যাংটির শেয়ারের দরপতন হয়েছে ২০ শতাংশের বেশি। সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক নতুন তহবিল দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর এই দরপতন হলো। সিএনএন এ খবর জানিয়েছে। ইউরোপ জুড়ে শেয়ারসূচক ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসে। এছাড়া, যুক্তরাজ্যের শেয়ারবাজারে এফটিএসই ১০০ সূচক গত সপ্তাহে ৬ শতাংশ কমেছে। যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এজে বেল-এর বিনিয়োগ পরিচালক রাস মৌল্ড বলেন, ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না। মুডি’স যেসব বড় ব্যাংকের মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা কমিয়ে এনেছে সেগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের মনোভাব যে সতর্ক থাকবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থা নিরাপদে আছে বলে আশ্বস্ত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউজ এখন ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকসহ অন্যান্য ছোটখাটো ব্যাংক নজরদারির মধ্যে রেখেছে। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন, এসভিবি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ করাসহ যেসব ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে, তার বদৌলতে সেখানকার ব্যাংকব্যবস্থা যথেষ্ট সুরক্ষিত। আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে তারা বলেছেন, গ্রাহকদের তহবিল নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কর্মকর্তারা বলছেন, এখন সবচেয়ে নজরদারিতে আছে ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক। এ ব্যাংক কিছুটা বেশি চাপের মুখে। তবে এখনই তারা ফার্স্ট রিপাবলিকের বিষয়ে কিছু করছে না। বাজারে মাঝারি ব্যাংকগুলো নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা এখন জে পি মর্গান ও সিটির মতো বড় ব্যাংকগুলোতে আমানত সরিয়ে নিচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদেরা বলেন, অর্থনীতিকে কার্যকর করতে মানুষের সঞ্চয় বিনিয়োগে রূপান্তরিত করতে হয়। তবে এখানে একধরনের দ্বন্দ্ব আছে। সেটা হলো, অপ্রত্যাশিত ঘটনার ক্ষেত্রে সঞ্চয়কারীরা তাত্ক্ষণিকভাবে সঞ্চয় ভেঙে ফেলতে চান। যেমন ইউরোপের ব্যাংকগুলোর চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ব্যাংকগুলো আরো বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন আশ্বাস দিয়েছিলেন, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকে যাদের আমানত রয়েছে, তারা সবাই তাদের অর্থ তুলতে পারবেন। তাদের পুরো অর্থ যেন নিরাপদ থাকে, সরকার সেই ব্যবস্থা নিয়েছে।