বিসিএস পরীক্ষা বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা হলো দেশব্যাপী পরিচালিত একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। এটি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিসিএস (প্রশাসন), বিসিএস (কর), বিসিএস (পররাষ্ট্র) ও বিসিএস (পুলিশ)সহ ২৬ পদে কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য পরিচালিত হয়, যা পূর্বে ২৭টি ছিল, ২০১৮ সালে ইকোনমিক ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একত্রিত করা হয়। বিসিএস পরীক্ষা পর্যায়ক্রমে তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়—প্রাথমিক পরীক্ষা (এমসিকিউ), লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ)। পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ১.৫ থেকে ৪ বছর সময় লাগে।
পিএসসির তথ্যমতে, ৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫০ জন প্রার্থী। যার মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হবে। ননক্যাডার নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জন। সর্বোচ্চ জনবল নেওয়া হবে চিকিৎসা খাতে। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন পদে নিয়োগ পাবেন ৫৩৯ জন। এ ছাড়া শিক্ষা ক্যাডারে ৪৩৭ জন, পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪ ও প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেবে সরকার। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রকৌশল ও মেডিকেলের অনেক শিক্ষার্থীও মনে করছেন বিসিএস ক্যাডারে, বিশেষ করে পররাষ্ট্র, প্রশাসন বা পুলিশের মতো ক্যাডারে যোগ দিলে চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হওয়ার চেয়ে বেশি সামাজিক মর্যাদা ও ক্ষমতা পাওয়া যায়। এ কারণে তারা নিজেদের পড়ালেখার বিষয় ছেড়ে পুলিশ বা প্রশাসন ক্যাডারের দিকে ঝুঁকছেন। এখন প্রশ্ন হলো, বিসিএস কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদের চেয়ে বড় কোনো পদ? যদি সেটা হয়ে থাকে, তাহলে ডিপার্টমেন্টে প্রথম স্থান অধিকারীরা কেন বিসিএস বাদ দিয়ে ডিপার্টমেন্টের টিচার হওয়ার তালে জীবন, যৌবন সব একবারে নষ্ট করতে সচেষ্ট হন?
পক্ষান্তরে বিসিএস যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদের চেয়ে ছোট কোন পোস্ট হয়ে থাকে, তাহলে কেন আমাদের শিক্ষক মহোদয়গণ আমাদের ব্যাচের যে ছেলেটি ডিপার্টমেন্টে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তাকে প্রায়ই বলেন, তুমি বিসিএসে ট্রাই করো, দেখো, ভালো কিছু হয়েও যেতে পারো?
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী চার কিংবা পাঁচ বছর পড়ে তার ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া সাবজেক্টটির তত্ত্ব, তথ্য, উপাত্ত কিংবা বিশাল-বিশাল জ্ঞানের খুব কমই আহরণ করেন বা করতে সামর্থ্য হন, তাই পাঁচ বছর পড়ার পর তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর কোনো প্রশ্ন করা হলে তিনি তিন বার মাথা চুলকে নিয়ে তারপর বলেন, ‘হয়তো এমন একটা হবে কিছু।’ মানে কিছুই জানেন না তিনি, কিংবা ঝাপসা একটু-আধটু জানেন ঐ বিষয়ে অথবা কিচ্ছু মনে নেই তার!
আবার অনার্স কিংবা মাস্টার্সে পঠিত বিষয়ের ওপর একেবারে অজ্ঞ, মানে কিছু জানা না থাকলেও বিসিএস হওয়া সম্ভব। সুতরাং এই বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে বিসিএসের জন্য আলাদা কোনো কোর্স চালু করা বর্তমান সময়ের দাবি। হাস্যকর মনে হলেও আসলে বাস্তবতা এটাই। এ দেশে বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় এর চেয়ে ভালো গঠনমূলক সুপারিশ আর দ্বিতীয়টি আছে বলে মনে হয় না। সব সমস্যা কাটিয়ে বিসিএসনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে না তুলে অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি, গবেষণা, উদ্যোক্তা, ব্যবসা, ফ্রিল্যান্সিংসহ অন্যান্য দিকে ঝোঁক বাড়াতে হবে বেকারত্ব সমস্যা কাটাতে।