ভোর থেকেই গুডি গুডি বৃষ্টি পড়ছিল। মনটা খারাপ হয়ে গেলো কারন প্রায় ১০ দিন আগে আমরা কয়েক বন্ধু পরিবারসহ ঠিক করেছিলাম বনভোজনে যাবো “বিয়ার মাউন্টেন”-এ কিন্তু সাঁত- সকালে বৃষ্টির ছিটে- ফোটা দেখতে পেয়ে সবাই ভাবছিলাম এই বুঝি আমাদের পরিকল্পনাটি বাতিল হয়ে যাবে। তারপরও আমরা অপেক্ষায় রইলাম সময়ের সাথে সাথে হয়তো মেঘ ফুড়ে সূর্য উকি দেবে কারণ এখানকার আবহাওয়া কখন যে কি রকম থাকবে তা বলা মুস্কিল, এই রোদ, এই বৃষ্টি আবার কখনো বা স্নো, সে এক আজব ব্যাপার।
অবশেষে সময়ের সাথে সাথে বৃষ্টি থেমে গেলো আর আকাশে সূর্য হেসে দিল। আর আমরাও কাল বিলম্ব না করে তডি- ঘড়ি করে মহা আনন্দে গাড়ীতে গিয়ে উঠে পড়লাম। আমরা যখন মারিও কুমো ব্রিজ পার হচ্ছিলাম তখন সামনের গাড়ী থেকে থামার ইঙ্গিত দিলো। ব্রিজ পার হয়ে দেখলাম তাদের গাড়ী থামিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বাসা থেকে আমরা ৩ টি গাড়ী নিয়ে বের হয়েছিলাম, আমরা ছিলাম ১৭ জন। শেষ পর্যন্ত জানা গেলো বনভোজনের জন্য আনা মুরগীর রান ও থান ফ্রিজ থেকে আনাই হয়নি যা দিয়ে আমরা রোস্ট করত চেয়েছিলাম। এবার বুঝলাম গাড়ী থামাতে কেন বলছিল।
সবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো, বিরিয়ানী হবে অথচ রোস্ট হবে না এটা কেমন হলো? যা হোক পরে অবস্হার ভাবগতি দেখে মেনে নিতে হলো। আমাদের গাড়ী স্পটে পৌঁছানোর পর সকালের নাস্তার প্যাকেট সরবরাহ করা হলো যদিও বেলা কম হয়নি তাই কেউ না খেয়ে এসেছে এমন নয় তবে নাস্তার প্যাকেটে কি কি আছে জানার কৌতুহলবশতঃ প্যাকেটটি খুলে দেখলাম সেখানে আছে ‘সিদ্ধ ডিম’, সাগর কলা, পরোটার সাথে কলিজা ভুনা।
নাস্তা খাবার পর যে যার মত চারিদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। আমাদের দলে ছিল ৩ জন। আমরা পাহাড়ের এক কোনে সরোবরের নিকট বসে বসে আড্ডা দেবার জন্য গাল-গপ্প চালিয়ে গেলাম, কোন বিষয়বস্তু ছিল না তবে যেকোন বিষয়ের উপর এক একজন পান্ডিত্ব দেখাতে কোন কসুর করলাম না। এক পর্যায়ে রাজা-বাদশা-সম্রাটদের কথা উঠল তখন একজন বল্লেন, সম্রাট আশোক এবং সম্রাট আকবর কেন বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি এত প্রীত ছিলেন? আর বুদ্ধ পূর্নিমাই বা কি? এত ঘটা করে তারা উদযাপন করে অথচ এর মহাত্বই বুঝতে পারি না।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বৌদ্ধ ধর্ম থেকে যা জানা ছিল তাই বল্লাম, পুলক জানতে চাইলো আমি এত কিছু জানি কি ভাবে? আমি বিনয়ের সাথে জানালাম বই পডে, স্কুলে শিক্ষক ও গৃহ শিক্ষক এবং বৌদ্ধ ধর্মাবল্ববী কিছু বন্ধুর কাছ থেকে শুনে, অবশ্য এ ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আমার স্বর্গীয় পিতার কাছ থেকে অনেক বিষয়ে জেনেছি।
সেদিন আমি বলেছিলাম ঠিক এই ভাবে,- খৃীস্টপূর্ব ৬২৪ অব্দে শুভ বৈশাখী পূর্নিমা তিথিতে শাক্যরাজ শুদ্ধোদনের ও রানী মহামায়া দেবীর পুত্ররূপে সিদ্ধার্থ বা গৌতম বুদ্ধ কপিলাবস্তু নগরে লুম্বিনী উদ্যানে জন্ম গ্রহন করেন।জীবের জরা, ব্যাধি ও মরণ দুঃখের উৎস সন্ধানের মানসে মাত্র ২৯ বছর বয়সে রাজসিংহাসন, মাতা-পিতা এমন কি স্তী-পুত্রের মায়াবন্ধন ছিন্ন করে তিনি গৃহত্যাগ করেন। দীর্ঘ ৬ বৎসর সাধনা করে খৃীস্টপূর্ব ৫৮৯ অব্দে উরুবেলা নামক স্থানে বোধিবৃক্ষমূলে তিনি বোধিজ্ঞান লাভ করেন। সেদিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। তখন থেকেই তিনি বুদ্ধ বা জ্ঞানী নামে আখ্যায়িত হয়েছেন। আর তার প্রচারিত ধর্মকে বলা হয় বৌদ্ধ ধর্ম এবং ধর্মানুসারীদের বলা হয় বৌদ্ধ। যে স্হানে তিনি জ্ঞান লাভ করেন তার নাম বুদ্ধগয়া। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর স্বধর্ম প্রচারের পর ৮০ বৎসর বয়সে খৃীস্টপূর্ব ৫৪৪ অব্দে কুশীনগর নামক স্হানে তিনি ইহলোক (মহাপরিনিব্বান) ত্যাগ করেন। সেদিনও ছিল বৈশাখী পূর্নিমা। তাই বৈশাখী পূর্নিমাকে বলা হয় বুদ্ধ পুর্ণিমা।
আমি এ পর্যন্ত বলার পর একটু থামলাম, সাথে সাথেই বাকী দুজন হা হা করে উঠল, আরে থামলে কেন? তাদের দিকে তাকিয়ে বল্লাম বলছি, একটু দম নিতে দাও খেয়াল করলাম আমার শ্রোতারা মনোযোগ সহকারে কথাগুলি গিলছে অতএব আবার শুরু করতে হলো, এবার আসা করি তোমরা বুঝতে পেরেছো, বৌদ্ধ ধর্মে এই বুদ্ধ পূর্ণিমা তাদের কাছে মহা পবিত্র কেন? পুলক কথার মাঝে কথা বলে উঠলো, তাহলে এই দাঁড়ালো যে এই পূর্ণিমা রাতে, গৌতম বুদ্ধের জন্ম, মৃত্যু ও বোধি প্রাপ্তের দিন যা বুদ্ধ পূর্ণিমাতেই ঘটে ছিল, তাই তো? আমি মাথা ঝাকিয়ে সায় (সাই) দিয়ে বল্লাম তোমরা কি জানো গৌতম বুদ্ধ কি শিক্ষা দিয়েছেন? সে বিষয়ের উপর বল্লাম, অন্ধ বিশ্বাসের বশবর্তি হয়ে মান্য বা অমান্য করতে নাই, কোন ধর্ম বা দার্শনিক মত তা যতবড পন্ডিতের উপদিষ্ট বা সমর্থিত হোক, যত অধিক সংখ্যক লোকের সম্মানিত ও আচরিত হোক, এমন কি তোমাদের পিতা-মাতামহ পরাম্পরায় প্রতিপালিত হোক না কেন? ততক্ষন তা সত্য বলে গ্রহন করবে না, যতক্ষন ঐ মত তোমাদের বিবেকের সাথে যাচাই করে সত্যাসত্য নির্ণয় করতে পারে নাই।
বুদ্ধের মতবাদ কর্মবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। বুদ্ধ বলেছেন, কর্মই হোক সবকিছু, কর্মই মানুষকে নিয়ন্তন করে। নীচকূলে জন্মগ্রহণ করেও যদি সে সৎকর্ম করে তবে সে ব্রক্ষ্মত্ব লাভ করে। আর ব্রাক্ষণকূলে জন্মগ্রহণ করেও যদি কুক্রিয়াসক্ত হয় তাতে সে অধঃপতিত হয়, বংশ মর্যাদা তাকে অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। কর্ম দ্বারাই মানুষের মান নির্ণয় হয়। অর্থাৎ এর মানে দাঁড়ালো, যে যেমন কাজ করবে সে তেমন ফল লাভ করবে। মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ণয় করে তার প্রতিটি কার্যক্রম। কর্মনুযায়ী ফল লাভ নিশ্চিত। কর্মের ফলাফল থেকে পরিত্রান পাবার উপায় নেই।
বুদ্ধের নির্দেশিত চারি আর্য সত্য, যথাঃ দুঃখ, দুঃখের কারণ, দুঃখবোধ এবং দুঃখ রোধের পন্থা। তৃষ্ণা হল সকল দুঃখের মূল কারণ, আর তাই তৃষ্ণাকে মন থেকে অপসারিত করতে পারলেই মানব তার দুঃখবোধ কে অব্যাহতি দিতে পারবে সকল দুঃখকে, আর এই পথ অবলম্বন করতে হলে ৮ টি পথ বা পন্থা রয়েছে এই পথকেই বলা হয় মধ্যপথ বা মধ্যপন্থা। সেই ৮ টি পথ হলোঃ(১) সম্যক বাক্য অর্থ্যাৎ সৎ বাক্য (২)সম্যক দৃস্টি অর্থাৎ প্রকৃত দৃস্টি (৩) সম্যক সংকল্প অর্থ্যাৎ সৎ চিন্তা (৪) সম্যক কর্ম অর্থ্যাৎ সৎ কাজ (৫) সম্যক জীবিকা অর্থ্যাৎ সৎভাবে জীবন- যাপন (৬) সম্যক বীর্য অর্থ্যাৎ সুশোভন প্রচেস্টা (৭) সম্যক স্মৃতি অর্থ্যাৎ মনকে সদা জাগ্রত অবস্থায় রাখা, (৮) সম্যক সমাধি অর্থাৎ মনের সুসমাহিত ভাব।
জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মরণ দুঃখ হতে পরিত্রানের উপায় হিসাবে বুদ্ধ চাতুরার্য্য সত্য ও আর্য অস্টাঙিক মার্গের বিধানের কথা বলেছেন। এ দুঃখ অবসান করতে পারলেই নির্বান লাভ হয়। এই নির্বান করুনাময় ও আনন্দময়। নির্বানে লাভ, দ্বেষ, মোহ, সখ্যতা, ক্লেশ, তীরজনিত দুঃখ নেই। নির্বান শান্তি লঙন ও দুঃখের উপশম। বেদনা নামের কোন বর্ণ বা আঁকার তাতে নেই। চ্যুত হওয়ার মত কোন অবস্থা এতে অবশিষ্ট থাকে না। সর্ব্বোচ দুঃখের নিরোধক হচ্ছে নির্বান।
জগতের সকল প্রাণীই সুখী হউক।
তোমরা কি জানো পৃথিবীতে কত সংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মের লোক আছে? কেউ বল্লো, ১৫০ মিলিয়ান আবার কেউ বল্লো, ৬ শত মিলিয়ন, নিজেদের মতামত দিয়ে তারা আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল। তাদের মধ্যে কে সঠিক বলেছে সেটা জানার জন্য, তাদের ধারণা তাদেরই কেউ জয়ী হয়েছে। এবার আমি মুখ খুল্লাম, জানালাম এখন আমি যেটা বলবো সেই পরিসংখ্যাটি কয়েক বছর আগের তারপরও এই সংখ্যাটিই আপাততঃ ধরা হয়। তার আগে বলে নেওয়া ভাল তোমাদের কেউ জয়ী হওনি। আসল সংখ্যা হলোঃ- ৫২০ মিলিয়ান।
ভোর থেকেই গুডি গুডি বৃষ্টি পড়ছিল। মনটা খারাপ হয়ে গেলো কারন প্রায় ১০ দিন আগে আমরা কয়েক বন্ধু পরিবারসহ ঠিক করেছিলাম বনভোজনে যাবো “বিয়ার মাউন্টেন”-এ কিন্তু সাঁত- সকালে বৃষ্টির ছিটে- ফোটা দেখতে পেয়ে সবাই ভাবছিলাম এই বুঝি আমাদের পরিকল্পনাটি বাতিল হয়ে যাবে। তারপরও আমরা অপেক্ষায় রইলাম সময়ের সাথে সাথে হয়তো মেঘ ফুড়ে সূর্য উকি দেবে কারণ এখানকার আবহাওয়া কখন যে কি রকম থাকবে তা বলা মুস্কিল, এই রোদ, এই বৃষ্টি আবার কখনো বা স্নো, সে এক আজব ব্যাপার।
অবশেষে সময়ের সাথে সাথে বৃষ্টি থেমে গেলো আর আকাশে সূর্য হেসে দিল। আর আমরাও কাল বিলম্ব না করে তডি- ঘড়ি করে মহা আনন্দে গাড়ীতে গিয়ে উঠে পড়লাম। আমরা যখন মারিও কুমো ব্রিজ পার হচ্ছিলাম তখন সামনের গাড়ী থেকে থামার ইঙ্গিত দিলো। ব্রিজ পার হয়ে দেখলাম তাদের গাড়ী থামিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বাসা থেকে আমরা ৩ টি গাড়ী নিয়ে বের হয়েছিলাম, আমরা ছিলাম ১৭ জন। শেষ পর্যন্ত জানা গেলো বনভোজনের জন্য আনা মুরগীর রান ও থান ফ্রিজ থেকে আনাই হয়নি যা দিয়ে আমরা রোস্ট করত চেয়েছিলাম। এবার বুঝলাম গাড়ী থামাতে কেন বলছিল।
সবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো, বিরিয়ানী হবে অথচ রোস্ট হবে না এটা কেমন হলো? যা হোক পরে অবস্হার ভাবগতি দেখে মেনে নিতে হলো। আমাদের গাড়ী স্পটে পৌঁছানোর পর সকালের নাস্তার প্যাকেট সরবরাহ করা হলো যদিও বেলা কম হয়নি তাই কেউ না খেয়ে এসেছে এমন নয় তবে নাস্তার প্যাকেটে কি কি আছে জানার কৌতুহলবশতঃ প্যাকেটটি খুলে দেখলাম সেখানে আছে ‘সিদ্ধ ডিম’, সাগর কলা, পরোটার সাথে কলিজা ভুনা।
নাস্তা খাবার পর যে যার মত চারিদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। আমাদের দলে ছিল ৩ জন। আমরা পাহাড়ের এক কোনে সরোবরের নিকট বসে বসে আড্ডা দেবার জন্য গাল-গপ্প চালিয়ে গেলাম, কোন বিষয়বস্তু ছিল না তবে যেকোন বিষয়ের উপর এক একজন পান্ডিত্ব দেখাতে কোন কসুর করলাম না। এক পর্যায়ে রাজা-বাদশা-সম্রাটদের কথা উঠল তখন একজন বল্লেন, সম্রাট আশোক এবং সম্রাট আকবর কেন বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি এত প্রীত ছিলেন? আর বুদ্ধ পূর্নিমাই বা কি? এত ঘটা করে তারা উদযাপন করে অথচ এর মহাত্বই বুঝতে পারি না।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বৌদ্ধ ধর্ম থেকে যা জানা ছিল তাই বল্লাম, পুলক জানতে চাইলো আমি এত কিছু জানি কি ভাবে? আমি বিনয়ের সাথে জানালাম বই পডে, স্কুলে শিক্ষক ও গৃহ শিক্ষক এবং বৌদ্ধ ধর্মাবল্ববী কিছু বন্ধুর কাছ থেকে শুনে, অবশ্য এ ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আমার স্বর্গীয় পিতার কাছ থেকে অনেক বিষয়ে জেনেছি।
সেদিন আমি বলেছিলাম ঠিক এই ভাবে,- খৃীস্টপূর্ব ৬২৪ অব্দে শুভ বৈশাখী পূর্নিমা তিথিতে শাক্যরাজ শুদ্ধোদনের ও রানী মহামায়া দেবীর পুত্ররূপে সিদ্ধার্থ বা গৌতম বুদ্ধ কপিলাবস্তু নগরে লুম্বিনী উদ্যানে জন্ম গ্রহন করেন।জীবের জরা, ব্যাধি ও মরণ দুঃখের উৎস সন্ধানের মানসে মাত্র ২৯ বছর বয়সে রাজসিংহাসন, মাতা-পিতা এমন কি স্তী-পুত্রের মায়াবন্ধন ছিন্ন করে তিনি গৃহত্যাগ করেন। দীর্ঘ ৬ বৎসর সাধনা করে খৃীস্টপূর্ব ৫৮৯ অব্দে উরুবেলা নামক স্থানে বোধিবৃক্ষমূলে তিনি বোধিজ্ঞান লাভ করেন। সেদিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। তখন থেকেই তিনি বুদ্ধ বা জ্ঞানী নামে আখ্যায়িত হয়েছেন। আর তার প্রচারিত ধর্মকে বলা হয় বৌদ্ধ ধর্ম এবং ধর্মানুসারীদের বলা হয় বৌদ্ধ। যে স্হানে তিনি জ্ঞান লাভ করেন তার নাম বুদ্ধগয়া। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর স্বধর্ম প্রচারের পর ৮০ বৎসর বয়সে খৃীস্টপূর্ব ৫৪৪ অব্দে কুশীনগর নামক স্হানে তিনি ইহলোক (মহাপরিনিব্বান) ত্যাগ করেন। সেদিনও ছিল বৈশাখী পূর্নিমা। তাই বৈশাখী পূর্নিমাকে বলা হয় বুদ্ধ পুর্ণিমা।
আমি এ পর্যন্ত বলার পর একটু থামলাম, সাথে সাথেই বাকী দুজন হা হা করে উঠল, আরে থামলে কেন? তাদের দিকে তাকিয়ে বল্লাম বলছি, একটু দম নিতে দাও খেয়াল করলাম আমার শ্রোতারা মনোযোগ সহকারে কথাগুলি গিলছে অতএব আবার শুরু করতে হলো, এবার আসা করি তোমরা বুঝতে পেরেছো, বৌদ্ধ ধর্মে এই বুদ্ধ পূর্ণিমা তাদের কাছে মহা পবিত্র কেন? পুলক কথার মাঝে কথা বলে উঠলো, তাহলে এই দাঁড়ালো যে এই পূর্ণিমা রাতে, গৌতম বুদ্ধের জন্ম, মৃত্যু ও বোধি প্রাপ্তের দিন যা বুদ্ধ পূর্ণিমাতেই ঘটে ছিল, তাই তো? আমি মাথা ঝাকিয়ে সায় (সাই) দিয়ে বল্লাম তোমরা কি জানো গৌতম বুদ্ধ কি শিক্ষা দিয়েছেন? সে বিষয়ের উপর বল্লাম, অন্ধ বিশ্বাসের বশবর্তি হয়ে মান্য বা অমান্য করতে নাই, কোন ধর্ম বা দার্শনিক মত তা যতবড পন্ডিতের উপদিষ্ট বা সমর্থিত হোক, যত অধিক সংখ্যক লোকের সম্মানিত ও আচরিত হোক, এমন কি তোমাদের পিতা-মাতামহ পরাম্পরায় প্রতিপালিত হোক না কেন? ততক্ষন তা সত্য বলে গ্রহন করবে না, যতক্ষন ঐ মত তোমাদের বিবেকের সাথে যাচাই করে সত্যাসত্য নির্ণয় করতে পারে নাই।
বুদ্ধের মতবাদ কর্মবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। বুদ্ধ বলেছেন, কর্মই হোক সবকিছু, কর্মই মানুষকে নিয়ন্তন করে। নীচকূলে জন্মগ্রহণ করেও যদি সে সৎকর্ম করে তবে সে ব্রক্ষ্মত্ব লাভ করে। আর ব্রাক্ষণকূলে জন্মগ্রহণ করেও যদি কুক্রিয়াসক্ত হয় তাতে সে অধঃপতিত হয়, বংশ মর্যাদা তাকে অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। কর্ম দ্বারাই মানুষের মান নির্ণয় হয়। অর্থাৎ এর মানে দাঁড়ালো, যে যেমন কাজ করবে সে তেমন ফল লাভ করবে। মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ণয় করে তার প্রতিটি কার্যক্রম। কর্মনুযায়ী ফল লাভ নিশ্চিত। কর্মের ফলাফল থেকে পরিত্রান পাবার উপায় নেই।
বুদ্ধের নির্দেশিত চারি আর্য সত্য, যথাঃ দুঃখ, দুঃখের কারণ, দুঃখবোধ এবং দুঃখ রোধের পন্থা। তৃষ্ণা হল সকল দুঃখের মূল কারণ, আর তাই তৃষ্ণাকে মন থেকে অপসারিত করতে পারলেই মানব তার দুঃখবোধ কে অব্যাহতি দিতে পারবে সকল দুঃখকে, আর এই পথ অবলম্বন করতে হলে ৮ টি পথ বা পন্থা রয়েছে এই পথকেই বলা হয় মধ্যপথ বা মধ্যপন্থা। সেই ৮ টি পথ হলোঃ(১) সম্যক বাক্য অর্থ্যাৎ সৎ বাক্য (২)সম্যক দৃস্টি অর্থাৎ প্রকৃত দৃস্টি (৩) সম্যক সংকল্প অর্থ্যাৎ সৎ চিন্তা (৪) সম্যক কর্ম অর্থ্যাৎ সৎ কাজ (৫) সম্যক জীবিকা অর্থ্যাৎ সৎভাবে জীবন- যাপন (৬) সম্যক বীর্য অর্থ্যাৎ সুশোভন প্রচেস্টা (৭) সম্যক স্মৃতি অর্থ্যাৎ মনকে সদা জাগ্রত অবস্থায় রাখা, (৮) সম্যক সমাধি অর্থাৎ মনের সুসমাহিত ভাব।
জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মরণ দুঃখ হতে পরিত্রানের উপায় হিসাবে বুদ্ধ চাতুরার্য্য সত্য ও আর্য অস্টাঙিক মার্গের বিধানের কথা বলেছেন। এ দুঃখ অবসান করতে পারলেই নির্বান লাভ হয়। এই নির্বান করুনাময় ও আনন্দময়। নির্বানে লাভ, দ্বেষ, মোহ, সখ্যতা, ক্লেশ, তীরজনিত দুঃখ নেই। নির্বান শান্তি লঙন ও দুঃখের উপশম। বেদনা নামের কোন বর্ণ বা আঁকার তাতে নেই। চ্যুত হওয়ার মত কোন অবস্থা এতে অবশিষ্ট থাকে না। সর্ব্বোচ দুঃখের নিরোধক হচ্ছে নির্বান।
জগতের সকল প্রাণীই সুখী হউক।
তোমরা কি জানো পৃথিবীতে কত সংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মের লোক আছে? কেউ বল্লো, ১৫০ মিলিয়ান আবার কেউ বল্লো, ৬ শত মিলিয়ন, নিজেদের মতামত দিয়ে তারা আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল। তাদের মধ্যে কে সঠিক বলেছে সেটা জানার জন্য, তাদের ধারণা তাদেরই কেউ জয়ী হয়েছে। এবার আমি মুখ খুল্লাম, জানালাম এখন আমি যেটা বলবো সেই পরিসংখ্যাটি কয়েক বছর আগের তারপরও এই সংখ্যাটিই আপাততঃ ধরা হয়। তার আগে বলে নেওয়া ভাল তোমাদের কেউ জয়ী হওনি। আসল সংখ্যা হলোঃ- ৫২০ মিলিয়ান।