আষাঢ় যাই যাই করছে। বৃষ্টির অবস্থা এই আছে এই নেই। তবে আছে একটানা তাপদাহ। তারওপর পূর্ণিমার প্রভাবে বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় পানির উচ্চতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পানির চাপে নদীর তীরের বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এই চিত্র বরিশাল বিভাগের সর্বত্র।
ফলে নদী উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। প্লাবিত হয়েছে উপকূলের গ্রামের পর গ্রাম। ফেরির আশপাশের এলাকা পানিতে ডুবে থাকায় যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। আচমকা এই বিপর্যয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ। পানিমগ্ন এলাকাগুলোতে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে চাষাবাদে। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, বেশিরভাগ জমিতেই পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে আমন ধানের বীজতলা এবং সবজি।
উপকূলের পরিস্থিতি
সম্প্রতি সিলেটের টানা বন্যা আর দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে চলা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এমনিতেই এলাকার জলাধারগুলো ভরে গিয়েছিল। কয়েক দিন আগে বৃষ্টি কমলেও পূর্ণিমার প্রভাবে নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। সেই পানি পৌঁছায় উপকূলে। তাতেই প্রথমে উপচে পড়ে চাষের জমি, পরে বেশ কিছু গ্রাম পানিমগ্ন হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে আচমকা গ্রামে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকেই পানিবন্দি হয়ে পড়েন। শুক্রবার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। শনিবারও এলাকাগুলো জলমগ্ন থাকায় অনেকেই গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন। সাগর তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকার রাস্তা পানির তলায় চলে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল।
উপকূলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ধান চাষের ওপর উপকূলের অর্থনীতি নির্ভর করে। এমনিতেই শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না মেলায় পানির সংকট তৈরি হয়েছিল। ফলে বীজতলা তৈরির কাজ দেরিতে শুরু করেন চাষিরা। বীজতলায় সবেমাত্র চারাগাছ উঁকি দিয়েছে। এই অবস্থায় জমি পানিমগ্ন হয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ বীজই পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
চাষিদের দাবি, নতুন করে বীজ ফেলে ফের বীজতলা তৈরি করতে লেগে যাবে দীর্ঘ দিন। সেক্ষেত্রে সময়ে চাষ শুরু করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। পাথরঘাটার রুহিতা গ্রামের ধানচাষি শফিক মাঝি বলেন, জুনের শুরুতেই বীজ ফেলা হয়। এবার পানি না মেলায় এমনিতেই বেশ কিছুটা দেরি হয়ে যায়। এরপরে ফের নতুন করে বীজ ফেলে চাষ করা এক কথায় অসম্ভব।
কেন নদীর পানি বাড়ছে?
ওপরের দিক থেকে নেপাল ও বিহারের অঢেল জল মহানন্দায় নামছে। আবার মহানন্দার নীচের দিকে বাংলাদেশে বন্যা হওয়ায় সেখানেও নদী ভরে রয়েছে। তার সঙ্গে অসমের বন্যার জল ব্রহ্মপুত্র হয়ে পদ্মায় মেশায় তারও জলস্তর ফুলে উঠেছে। ওপর ও নীচ দুই দিকের চাপে উপচে পড়ছে মহানন্দার মাঝের অংশ। আর তাতেই মালদহ ও দুই দিনাজপুর ভাসছে।
১০ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর
বিভাগের মোট ২৩টি নদীর মধ্যে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানির প্রবাহ এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরেই নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিশেষ করে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার পর্যন্ত ১০টি নদীর পানির প্রবাহ বিপৎসীমার ওপর রয়েছে।
এর মধ্যে বরিশাল জেলার কীর্তনখোলা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ভোলার খেয়াঘাট এলাকার তেঁতুলিয়া নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, দৌলতখান উপজেলার সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, তজুমদ্দিন উপজেলার সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি ১০৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
এছাড়াও ঝালকাঠি জেলার বিশখালী নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার বুড়িশ্বর/পায়রা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, বরগুনার বিশখালী নদীর পানি ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পাথরঘাটার বিশখালী নদীর পানি ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার এবং উমেদপুরের কঁচা নদীর পানি ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তারা যা বলছেন
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম। তিনি বলেন, পূর্ণিমার প্রভাবে বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় পানির উচ্চতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। বর্ষা মৌসুমে এই চিত্র বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিক।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ বিদ্যমান থাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক রয়েছে। আগামী দুই-এক দিন এই অবস্থা থাকবে। তারপরই বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।