দেশে অসহনীয় লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎখাতে ভয়াবহ দুর্নীতির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সারাদেশে জেলা পর্যায়ে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার (৬ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদে আগামী ৮ জুন জেলা শহরে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। অবস্থান কর্মসূচি শেষে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। সোমবার (৫ জুন) রাতে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
রিজভী বলেন,সারা দেশে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে মানুষের এখন ত্রাহি অবস্থা। গ্রামে-গঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় এখন দুয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। মফস্বল শহরগুলোতে রাতে ২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। দিনের বেলাতেও পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে। রাজধানীতে ভয়াবহ খরতাপের ধুমায়িত বহ্নিতে মানুষ মনে হয় গ্যাস চেম্বারের মধ্যে বসবাস করছে।
তিনি বলেন, এখানেও দিনে-রাতে তিন-চার ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। গণতন্ত্রকে কাফন পরিয়ে তথাকথিত উন্নয়নের ইন্দ্রজাল সৃষ্টির অপপ্রয়াস এখন দেশবাসী দেখছে। শুধু নিজেদের ঘনিষ্ঠজনকে বিপুল-অর্থবিত্তের মালিক করার জন্যই রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ভর্তুকির নামে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা পকেট থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু এটি যে ছিল এক ধরনের জালিয়াতি, সেটিই এখন বিকট লোডশেডিংয়ের আত্মপ্রকাশ-তার সুষ্পষ্ট প্রমাণ জনগণ দেখতে পাচ্ছে।
রিজভী অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রয়োজনে আমেরিকা যাবো না। প্রয়োজনে অন্য মহাদেশ মহাসাগরে যাবো। ২০ ঘণ্টা ভ্রমণ করে আমেরিকা যাওয়ার দরকার নাই।’ অন্যদিকে, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ও হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে কথা বলায় বিদেশি রাষ্ট্রদুতদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। তাদের একজন মন্ত্রী বললেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে। তাহলে আমেরিকার বিরুদ্ধে হঠাৎ সরকার প্রধানসহ মন্ত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়লেন কেন? ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকার স্পষ্টত:ই বুঝে গেছে যে তারা এখন চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। সেই কারণে মনে হয় রাতে তাদের ঘুম কম হচ্ছে। তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তা দেখে তাই মনে হয়। স্বাভাবিক চিন্তা, কথাবার্তা ও আচরণের জন্য প্রকৃতির নিয়মে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সরকার প্রধানসহ ক্ষমতাসীনদের নিজেদের সন্তান-সন্ততীকে আমেরিকা এবং ইউরোপে পুনর্বাসন করে প্রধানমন্ত্রী ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের স্বার্থে ঘা লাগায় এখন ওইসব দেশ সম্পর্কে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলছেন। যেহেতু তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু দুর্নীতি আর টাকা পাচার, সেহেতু বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার বিষয়ে কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করলেই তাদের গা জ্বালা করে। জনগণের টাকায় তারা ফুর্তিবাজী করছে বলেই সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনলেই ক্ষমতাসীনদের মাথা বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের গালগল্প কোথায় গেল। সেই বাড়তি বিদ্যুৎ কোথায় গেল? কয়লা কোথায় গেল, তেলের তো বিশ্বব্যাপী দাম কমছে। কিন্তু দেশে না কি তেল পায় না। তাদের উন্নয়ন হুড়মুড় করে পড়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ নিয়ে এই সরকার মিথ্যা প্রচার করে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।