কোভিড-১৯ মোকাবিলা, মহামারি-পরবর্তী ধাক্কা সামলানো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, বৈশ্বিক মন্দা প্রভৃতি মোকাবিলায় অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক রাখা হয়ে উঠেছে কষ্টসাধ্য। এসবের মধ্যে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠেছে ‘বেকারত্ব’। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখের মতো। তথ্যটি সাত বছর আগের। বিগত সাত বছরে এ বেকারত্ব কমানো যায়নি। বরং এ সংখ্যা এখন কয়েক গুণ বেশি! নানাবিধ কারণে দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে বেকারত্বের হার। অনেক প্রবাসী দেশে ফিরেছেন, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতির মুখে কর্মী ছাঁটাই করেছে, বন্ধ হয়েছে ছোট, মাঝারি ক্ষুদ্র শিল্প। দেশে চাকরির বাজারও বেশ অস্থির। দিন কয়েক আগে দেশের একটি জব প্ল্যাটফরমের কর্মশালায় বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর লাইন চোখে পড়েছে সবার। অর্থাৎ, সোজাসাপটাভাবে বললে, দেশে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বেকারত্ব। এভাবে বেকারত্ব ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য যে ‘বড় প্রতিবন্ধকতা’ তা কে না বলবে?
এমতাবস্থায়, দেশের অর্থনীতিকে উন্নত করতে, প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি অব্যাহত ও বেগবান রাখতে প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। দক্ষ মানব বলতে সাধারণভাবে কর্মীদের জ্ঞান, দক্ষতা, উত্পাদনশীলতা, প্রতিভা ও যোগ্যতা বৃদ্ধিকে বোঝায়। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি অতি জরুরি। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি তথ্যবহুল গবেষণা, দক্ষ প্রশিক্ষক ও পরামর্শক নিয়োগসহ নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। বিশেষ করে, কারিগরি শিক্ষায় জোর দেওয়া সময়ের দাবি। গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিশেষত তরুণ প্রজন্ম ফ্রিল্যান্সিং পেশায় যুক্ত হচ্ছেন, যা থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আরো বাড়ানো হলে, এ খাত থেকে আরো বেশি পরিমাণে সুফল পাওয়া যাবে। যার ফলে এক দিকে দেশের বেকারত্ব কমবে, পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্বাস্থ্যবান হবে।
সত্যি বলতে, কেবল দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠলেই দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি বেগবান হবে। প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধি পাবে। জিডিপি-জিএনপির গতি স্বাভাবিক ও ত্বরান্বিত হবে। তাছাড়া এতে করে বড় আকারের প্রকল্প ছাড়া উচ্চ পারিশ্রমিকে বাইরের কর্মী এনে কাজ করানোর দরকারও পড়বে না। বিপরীতে, বিভিন্ন দেশে দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানি করে দেশের রেমিট্যান্স-প্রবাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে, যা ভবিষ্যতের জন্য অতি জরুরিও বটে।