যতই দিন যাচ্ছে বাংলাদেশে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। এর প্রধান কারণ পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পরেও চাকরি মিলছে না। দিনের পর দিন বেকারত্বের অভিশাপের বোঝা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। বিবিএসের জরিপ মতে, দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখের বেশি। তবে আইএলও এবং সিডিপি বলছে, এ সংখ্যা কয়েক কোটি! একটি রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পদ সে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী। এই তরুণ জনগোষ্ঠীর ওপরেই নির্ভর করে একটি দেশের ভবিষ্যৎ।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সমীক্ষা মতে, প্রতিবছর দেশে ২২ লাখ চাকরিপ্রত্যাশী শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন। এদের মধ্যে চাকরির সন্ধান পান মাত্র ৭ লাখের মতো। বাকি চাকরিপ্রত্যাশীরা কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার থেকে যান। এভাবে প্রতিবছরই বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের ফলে পুরো পৃথিবী পরিণত হয়েছে গ্লোবাল ভিলেজে। ফ্রিল্যান্সিং এ সময়ের জনপ্রিয় পেশা হিসেবে পুরো বিশ্বের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বলে রাখা দরকার, ফ্রিল্যান্সিং একটি মুক্ত ও স্বাধীন পেশা। এ পেশায় কাজ করার জন্য প্রয়োজন শুধু কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ। যথাযথ প্রশিক্ষণের পর এগুলো ব্যবহার করে ঘরে বসেই নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করা যায়। উপার্জন করা যায় বৈদেশিক মুদ্রা। মুক্ত পেশা হওয়ায় এতে ধরাবাঁধা কোনো সময় নেই। নয়টা টু পাঁচটা অফিসের ঝক্কি নেই। যে কেউ এ মহাসুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য জনপ্রিয় সাইট হচ্ছে ফাইভার, ফ্রিল্যান্সার, আপওয়ার্ক ইত্যাদি। এসব সাইটে ডেটা এন্ট্রি, কনটেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, এসইও, গ্রাফিক ডিজাইন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মতো নানা ধরনের কাজ পাওয়া যায়। নিজেকে দক্ষ করে তোলা গেলে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজের অভাব হয় না। ফ্রিল্যান্সিং পেশায় সফল হতে দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। যিনি যত বেশি দক্ষ, তিনি তত বেশি সফল। এই প্রেক্ষিতে বর্তমানে দেশের অনেক তরুণ ফ্রিল্যান্সিং পেশার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকে খুব ভালো কাজও করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬ লাখের বেশি ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। যারা নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
উল্লেখ করার মতো বিষয়, সঠিক গাইডলাইনের অভাবে অনেকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। কীভাবে কাজ করতে হয়, কীভাবে কাজ পেতে হয়—এসব বিষয় জানা নেই অনেকের। ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর জন্য অনেক কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে সত্য, তবে এসব কোচিং সেন্টারে ক্লাস করতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়, তা অনেকের পক্ষেই দেওয়া সম্ভব হয় না। অথচ দেশের এ বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখতে পারলে বয়ে বেড়াতে হবে না বেকারত্বের গ্লানি। নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসেই উপার্জন করা যাবে অর্থ। মনে রাখতে হবে, দেশে যে পরিমাণ চাকরিপ্রত্যাশী রয়েছেন, সে পরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। তাই নিজ উদ্যোগে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে দক্ষ করে তোলাই শ্রেয়। বর্তমানে দেশের ফ্রিল্যান্সারদের বার্ষিক আয় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে বেশকিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। সরকারি উদ্যোগে ৩০ হাজার ফ্রিল্যান্সারকে স্মার্টকার্ড প্রদান করা হয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে অর্থ আনার ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে ৪ শতাংশ প্রণোদনা। ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এর পরিসর আরো বৃদ্ধি করা গেলে দেশের অনেক শিক্ষিত বেকার তরুণকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হবে। আসল কথা হলো, ফ্রিল্যান্সিং পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে প্রচারণা বাড়াতে হবে। সত্যি বলতে, মানবসম্পদ বেকার থাকা মানে দেশের অগ্রগতির চাকা থমকে থাকা। এক্ষেত্রে দেশের শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীকে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় দক্ষ করে গড়ে তোলা গেলে দেশের মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটবে। বেকারমুক্ত সম্ভাবনাময় এক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।