মনসুর আলম খোকন
সাঁথিয়া-বেড়া (পাবনা)প্রতিনিধি:
কবরস্থানের গেটে নামকরণ নিয়ে দুই পক্ষ গ্রামবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের নলভাঙ্গা গ্রামের কবরস্থানের নামকরণ নিয়ে প্রায় এক বছর বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে সংঘর্ষের আশঙ্কায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নামকরণ নিয়ে হয়েছে সালিশি বৈঠক। সালিশি রায় মানছেন না নলভাঙ্গা গ্রামের লোকজন,এ দাবি দমদমা গ্রামের মানুষের। এ ঘটনায় গত (৩০ সেপ্টেম্বর) শনিবার সকালে দমদমা গ্রামের লোকজন কবরস্থানের মেইন গেটে “দমদমা কবরস্থান” লেখা একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়ে যায়। ওই সাইনবোর্ড কে বা কাহারা ছিঁড়ে ফেলে। পরে রবিবার রাতের কোন এক সময় কে বা কাহারা গেটের টাইলস এ লেখা নলভাঙ্গা কবরস্থান নাম ফলকটি রাতের কোন এক সময় ভেঙে ফেলে। দুই গ্রামবাসি একে অন্যদের দোষারোপ করছে।
জানা যায়, নলভাঙ্গা গ্রামের কবরস্থানে নলভাঙ্গা, খাকছাড়া-দমদমা, আংশিক চাকলা গ্রামের মানুষকে কবরস্থ করে আসছে বহু বছর আগে থেকেই। এতে কারো কোন দ্বিধাদ্বন্ধ ছিল না। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে কবরস্থানের মেইন গেটে নলভাঙ্গা কবরস্থান লেখা হয়। পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও হঠাৎ করে ছয়মাস আগে থেকে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। পাশের দমদমা গ্রামের কিছু মানুষ দাবি করে আসছে, কবরস্থানের নাম দিতে হবে নলভাঙ্গা-দমদমা কবরস্থান। এতে নলভাঙ্গা গ্রামের মানুষ রাজি না। তাদের দাবি, এখানে তাদের বাপ-দাদার দানের সম্পত্তিতে করবস্থান হয়েছে যা রেকর্ড মূলে প্রায় দশ বিঘা নলভাঙ্গার গ্রামের মানুষের। এখানে দমদমা গ্রামের মানুষের দানের সম্পত্তি অল্প, সেটুকু কবরস্থানের এরিয়ার বাইরেই রয়েছে। এ নিয়ে একাধিকবার হয়েছে সালিশ। সর্বশেষ গেল মাসে চাকলা ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ হয়। সালিশে ইউপি চেয়ারম্যানসহ গন্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ রায় দেন, নলভাঙ্গা-দমদমা দুই গ্রামের নামেই কবরস্থানের নামকরণ করা হবে এবং কবরস্থান পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে নতুন করে নলভাঙ্গা গ্রামের কোন একজনকে সভাপতি ও দমদমা গ্রামের কোন একজনকে সাধারণ সম্পাদক করা হবে। এতে আপত্তি জানান নলভাঙ্গা গ্রামবাসি।
স্থানীয়রা জানান, কবরস্থান নিয়ে রাজনীতি এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দীর্ঘদিন ধরে এই দুই গ্রামের কয়েকজন লোক অহেতুক ঝামেলার সৃষ্টি করছে। দ্রুত সমাধান হওয়ার দরকার না হলে বড় ধরনের ঝামেলা হতে পারে। চাকলা ০৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মনি প্রামানিক বলেন, “আমাদের গ্রামের কবরস্থানে অন্য গ্রামের নাম আমরা কেন যুক্ত করবো? আমরা তো কোন গ্রামের মরা মানুষ কবর দিতে মানা করছি না। আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে নলভাঙ্গা কবরস্থান নামেই পরিচিত। তাছাড়াও আমাদের মানুষেরই দশ বিঘা জমি। দমদমা গ্রামের মানুষের যে জায়গা আছে তারা সেটুকু নিয়ে আলাদা করে কবরস্থান করুক। এ বিষয়ে আমরা তো চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছিলাম, আমাদের জায়গা আলাদা করে দিতে।”
দমদমা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক রাজা বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষ থেকেই তিন/চারটি গ্রামের মানুষ ওই কবরস্থানে আত্মীয় স্বজনদের কবর দিয়ে আসছি। এতে কারও কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করেই কবরস্থানের গেটে তারা শুধু নলভাঙ্গা করবস্থান নামে নামকরণ করে ফেলে। এতে আমাদের গ্রামের মুরব্বিরা আপত্তি জানায়। এরপর অনেক সালিশ দরবার হলেও তারা শালিশের রায় মানে না। তাই আমরা দমদমা কবরস্থান সাইনবোর্ড লাগাই ছিলাম, সেটা কে বা কাহারা ছিঁড়ে ফেলেছে। আমাদের দাবি, দুই গ্রামের নামেই নামকরণ করা হোক।”
চাকলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস সরদার জানান, “আমার ইউনিয়নে কয়েক গ্রামের মাতব্বরদের সমন্বয়ে সালিশ করে দিছি। কিন্ত নলভাঙ্গা গ্রামের মানুষ সে রায় মানে নাই। শুনলাম, দুই গ্রামের কবরস্থানের নেম প্লেট ছিঁড়াছিঁড়ি, ভাংঙ্গাভাঙি হয়েছে। আমি আবারও দুই গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলে দেখি সমাধান করা যায় কি না। তা না হলে তো বড় ধরনের ঝামেলার সৃষ্ঠি হবে।”
বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. হাদিউল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “এ বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার, ইউএনও মহোদয়ও অবগত আছেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সালিশ হয়েছে। যেহেতু এটা ধর্মীও প্রতিষ্ঠান। সে কারণে সমাধানের জন্য কোন গ্রামের নামে নামকরণ না করে ইসলামিক কোন নাম দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, সেটাও নলভাঙ্গা গ্রামের মানুষ মানেনি। তারা তাদের গ্রামের নামই রাখতে চায়। এ বিষয়ে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।আইনের আওতায় আসতে হবে।”