নিবার সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাসহ প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণহানি ও তিন শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশের ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোগুলোর (আইসিডি) সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিএম ডিপো পরিচালনার ক্ষেত্রেও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি, অদক্ষতা ও সীমাবদ্ধতার কথা উঠে এসেছে। জানা গেছে, বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে কেমিক্যাল তথা রাসায়নিক পণ্য মজুত, সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই।
এমনকি এ সংক্রান্ত সব বিষয় তদারকির জন্য নেই আলাদা কোনো কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আইসিডি পরিচালনার জন্য প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংশোধিত নীতিমালা জারি করেছিল। কিন্তু সেই নীতিমালায় রাসায়নিক পণ্যের বিষয়ে কিছু বলা নেই। ওই নীতিমালায় শুধু উচ্চ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ পণ্য রাখার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সরকারি নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে।
তবে বেসরকারি আইসিডিগুলোতে আইএসপিএস কোড অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ডিপোগুলোতে আইএসপিএস কোড যথাযথভাবে মানা হচ্ছে কি না, তা মনিটর করা হচ্ছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়েও তদারকি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। ডিপোগুলোতে রাসায়নিক বা বিস্ফোরক দ্রব্য হ্যান্ডলিং হলেও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়ারও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ডিপোতে কী হ্যান্ডলিং হচ্ছে না হচ্ছে বা কীভাবে হচ্ছে, তা জানার সুযোগ থাকছে না বিস্ফোরক অধিদপ্তরের।
বলা বাহুল্য, এতসব সীমাবদ্ধতার কারণে আইসিডিগুলো কীভাবে নিরাপত্তার সঙ্গে পরিচালিত হবে, তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ডিপো কর্তৃপক্ষ বলছে, এনবিআরের নীতিমালা ও আইএসপিএস কোড অনুসরণ করেই তাদের ডিপো পরিচালিত হচ্ছিল। তারা দুর্ঘটনাটিকে নাশকতা হিসাবেই দেখছেন।
কথা হচ্ছে, ওই নীতিমালায় তো রাসায়নিক পণ্য মজুত, সংরক্ষণ ও সরবরাহের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। যদি তাই হয়, তাহলে প্রশ্ন ওঠে-বিএম ডিপোতে রাসায়নিক পণ্য কি যথাযথভাবে মজুত ও সংরক্ষণ করা হয়েছিল? ওদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বিএম ডিপো পরিদর্শন শেষে ওই ডিপোতে আইএসপিএস কোড অনুসরণ করা হচ্ছিল বলে মন্তব্য করেছেন। আমাদের কথা হলো, সবই যদি নিয়মমতো পরিচালিত হয়ে থাকে, তাহলে বিস্ফোরণ ঘটল কীভাবে?
সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো বিস্ফোরণের ঘটনা এ খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য এক অশনিসংকেত। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যে পুনরাবৃত্তি হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাই চট্টগ্রাম বন্দরের আইসিডিগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি এখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে। আর এ জন্য সর্বাগ্রে দরকার কেমিক্যাল মজুত, সংরক্ষণ ও সরবরাহের সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন। বিএম ডিপোর বিস্ফোরণ তদন্তে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত টিম কাজ করছে। বিস্ফোরণের কারণ যা-ই পাওয়া যাক না কেন, কেমিক্যাল মজুত ও সংরক্ষণের নীতিমালা প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই।