চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাসেও বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে। জুলাই-আগস্টের কোনো মাসেই আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি ব্যাংক খাত। আগস্ট মাসে এ খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর আগের মাসেও প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।
আগস্টের এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ কম। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট মাস শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। তখন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া আগের মাসের তুলনায় খাতটিতে ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। ব্যাংককাররা বলছেন, ডলারের বাজারের অস্থিরতা, এলসি খোলার পরিমাণ কমে যাওয়া, ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাওয়া এবং ব্যাংক খাতে তারল্যসংকটের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে।
আগের মাস জুলাইয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এ খাতে ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২২ সালের আগস্টে ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। সাধারণভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকে। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রথম বারের মতো তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে। করোনা ভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর ব্যাপক হারে কমে গিয়ে ২০২০ সালের মে মাসের শেষে প্রবৃদ্ধি নামে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। তবে পরের মাস জুন থেকে তা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে।
আর্থিক-সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এসবের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে, ডলার-সংকট বেশ ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। এ সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে। এতে রিজার্ভের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সোমবার রিজার্ভ থেকে ৩৫০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। এর ফলে বর্তমানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১০৫ কোটি ডলারের কাছাকাছি।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমানো হয়। তখন অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগ হয় ব্যাংক খাতের মাধ্যমে। নতুন বিনিয়োগ মানেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি। লক্ষ্যমাত্রা কমানোর ফলে এটি বিঘ্নিত হতে পারে। বিনিয়োগের অগ্রগতি স্তিমিত হতে পারে। এর ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কর্মসংস্থানে।