আগস্টে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। তবে আগের মাস জুলাইয়ের তুলনায় কমেছে প্রায় ৬ কোটি ডলার। গত এক মাসের রেমিট্যান্সপ্রবাহের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মাসের প্রথম ১৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার, যা গড়ে প্রতিদিন ৭ কোটি ৬১ ডলার। কিন্তু শেষ ১৪ দিনে এসেছে ৭৭ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, যা গড়ে ৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। শেষ দুই সপ্তাহে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো আগের মতো আর বেশি দাম দিয়ে রেমিট্যান্স আহরণ করছে না। আর এ কারণেই রেমিট্যান্সপ্রবাহে মাসের শেষ দিকে এসে কমে গেছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রবাহ ধরে রাখার বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ বেড়ে গেছে। গত দুই মাসে আড়াই শ’ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে রিজার্ভ থেকে। এ কারণে রিজার্ভ কমে ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার, আর গত মাস আগস্টে এসেছে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার। এ হিসাবে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে কম এসেছে প্রায় ৬ কোটি মার্কিন ডলার।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, অর্থবছরের শুরুতে রেমিট্যান্স পাঠালে আড়াই শতাংশ নগদসহায়তা দেয়া হয়, যা চলমান রয়েছে। কিন্তু জুলাইয়ে ডলার সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বেশি মূল্য দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে। একপর্যায়ে প্রতি ডলার আনতে ব্যয় হয় ১১৫ টাকা পর্যন্ত। এক দিকে নগদসহায়তা, অপর দিকে বাড়তি মূল্যপ্রাপ্তি সবমিলেই ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হন প্রবাসীরা। এ ধারা গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ছিল। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রাবাজার হঠাৎ করেই অস্থিতিশীল হয়ে যায়। খোলাবাজারে ডলারের মূল্য ১২০ টাকা উঠে যায়। ব্যাংকগুলোও আমদানি ব্যয় মেটাতে নগদ ডলার কিনতে ১১৯ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বেশি মূল্য দিয়ে রেমিট্যান্স আহরণ করায় মুদ্রার বিনিময়জনিত ক্ষতি কাটাতে ব্যাংকের নগদ ডলারের দাম বেড়ে যায়।
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য ব্যাংকগুলোতে তদারকি জোরদার করে। একপর্যায়ে ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি হেডকে অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি ছয় ব্যাংকের এমডিকেও বৈদেশিক মুদ্রা কারসাজির দায়ে শোকজ করা হয়। এর ফলে বাকি ব্যাংকগুলো সতর্ক হয়ে যায়। তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দরে ডলার লেনদেনের উদ্যোগ নেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আমদানি দায় মেটাতে ডলার লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেয় ৯৫ টাকা ৫ পয়সা। এ দর এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেনি বেশির ভাগ ব্যাংক। তবে নগদ ডলার ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকার মধ্যে নামিয়ে এনেছে বেশির ভাগ ব্যাংক। আর এজন্য ব্যাংকগুলো আর আগের মতো বেশি মূল্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে না। এর প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক রেমিট্যান্সে। আর এ কারণেই গত মাসের প্রথম ১৭ দিন যেখানে গড়ে ৭ কোটি ৪২ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, সেখানে পরের ১৪ দিনে গড়ে প্রতিদিন রেমিট্যান্স এসেছে সাড়ে ৫ কোটি ডলার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডলার সঙ্কটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিদিনই সরকারি কেনাকাটার আমদানি দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে আড়াই শ’ কোটি মার্কিন ডলার বিক্রি করেছে। আর এ কারণে ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আগামী সপ্তাহে আকুর দায় (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) পরিশোধ করতে হবে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার।
এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আরো কমে যাবে। এমনি পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। কারণ, ইতোমধ্যে এলসির দায় গত জুন শেষে ডেফার্ড হয়েছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। আর এ কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ থাকবে। এ পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। যদিও আমদানি ব্যয় কমে আসছে। গত মাসে পণ্য আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের হারের (এলসি ওপেন) চেয়ে নিষ্পত্তি বেড়ে গেছে। এমনি পরিস্থিতিতে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিসহ রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানোর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।