বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মনে করে জাতিসংঘ। সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও পারমাণবিক সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কারিগরি সহায়তাসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে সংস্থাটি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে এক বৈঠকে এ কথা বলেছেন জাতিসংঘের সন্ত্রাস দমন বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (ইউএসজি) ভদ্মাদিমির ভরনকভ। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বুধবার তৃতীয় জাতিসংঘ চিফ অব পুলিশ সামিটের সাইডলাইনে ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অংশ নেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, পুলিশ সদর দপ্তর ও জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। একইদিনে গাম্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেইয়াকা সনকোর সঙ্গেও বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউএসজি ভদ্মাদিমির ভরনকভের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া সন্ত্রাস দমন বিষয়ক উদ্যোগ ও নীতিগুলো তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ভবিষ্যতে এক্ষেত্রে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘের এই অফিসের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করে যাবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ইউএসজি সন্ত্রাস দমন এবং সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া নীতি, উদ্যোগ ও সফলতার প্রশংসা করেন। তিনি ২০২৩ সালের জুনে অনুষ্ঠিতব্য সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থাগুলোর প্রধানদের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশকে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। সেইসঙ্গে সম্মেলনে বাংলাদেশের এ সংক্রান্ত উত্তম অনুশীলন ও সাফল্যগাঁথা তুলে ধরারও অনুরোধ করেন।
এদিকে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে গাম্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেইয়াকা সনকোর সঙ্গে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ‘জিরো টলারেন্স’ বা শূন্য সহনশীলতা নীতি বাস্তবায়ন করে চলেছে বাংলাদেশ সরকার।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই মন্ত্রী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, সন্ত্রাস দমন, দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে চলমান ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সাফল্য, অনুকরণীয় ভূমিকা ও অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন গাম্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি গাম্বিয়ার শান্তিরক্ষী, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন। শান্তিরক্ষী মোতায়েনপূর্বক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও তিনি গাম্বিয়াকে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাম্বিয়ার শান্তিরক্ষীদের সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট)- এর প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্পর্কে গাম্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার জন্য গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, মানবিক কারণে বাংলাদেশ সাময়িকভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, এ আশ্রয় আরও দীর্ঘায়িত করা অসম্ভব।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে দুই মন্ত্রী ফলপ্রসূ আলোচনা করেন। তারা সন্ত্রাস দমনে দুই দেশের সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করেন। দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় গাম্বিয়া বাংলাদেশের সহযোগিতা চাইলে তাকে আশ্বস্ত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া গাম্বিয়া কারাগারের পরিবেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়।
পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, বৈঠকে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি গাম্বিয়ার পুলিশ বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ সহায়তা সম্প্রসারণে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত করেন।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ উদ্যানে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু বেঞ্চ ও রোপণ করা বৃক্ষ পরিদর্শন করেন। এ সময় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি নিউইয়র্কে কনসুলেট জেনারেল অব বাংলাদেশের অফিস পরিদর্শন করেন। তারা পৌঁছালে কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।