ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি পরবর্তী রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুকে মনোনীত করেছে। তাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণার পর থেকেই তাকে নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। যদি কোন দুর্ঘটনা না হয় তবে তিনিই হবেন ভারতের প্রথম নারী ও আদিবাসী রাষ্ট্রপতি।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মতো সাওতাল নেত্রী দ্রৌপদী মুর্মুও খুব সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। ওড়িশায় জন্ম নেয়া দ্রৌপদী এর আগে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল ছিলেন। তিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সরকারি কর্মী হিসেবে। প্রথমে ওড়িশার রাজ্য সরকারের ক্লাস-৩ কর্মী পরে স্কুল শিক্ষিকা হয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিকভাবে সফল দ্রৌপদীর ব্যক্তিগত জীবনে বেদনা পূর্ণ।
কাউন্সিলর থেকে শুরু করে রাজ্যের মন্ত্রী পরে রাজ্যপাল হয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে তিনি অত্যন্ত সফল হলেও তার ব্যক্তিগত জীবন ছিল দুঃখময়। তিনি তার স্বামী শ্যাম চরণ মুর্মুকে হারিয়েছেন। তার দুই ছেলেও ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। তার একমাত্র মেয়ে ইতিশ্রী মুর্মু এখন একটি ব্যাংকে অফিসার হিসেবে কর্মরত। তার বাবা ও দাদা দুজনেই গ্রাম প্রধান ছিলেন।
১৯৫৮ সালের ২০ জুন জন্মগ্রহণ করেন দ্রৌপদী। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ওড়িশা সরকারের জলসম্পদ ও শক্তি দফতরে জুনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন। ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টার সাম্মানিক শিক্ষক ছিলেন। এরপর কাউন্সিলর হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন দ্রৌপদী। পরে রায়রংপুর উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন হয়েছিলেন। পরে রায়রংপুর বিধানসভা থেকে দু’বার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিজু জনতা দল তথা নবীন পট্টনায়েকের সরকারের পরিবহণ, মৎস্য এবং পশুপালন দফতরের মন্ত্রীও ছিলেন। এরপর ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল হয়েছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সেই পদে ছিলেন আদিবাসী নেত্রী। আর এবার সব ঠিক থাকলে তিনি দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন।
জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা
জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা প্রদান করা হলো এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে। জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদীকে সিআরপিএফ-এর নিরাপত্তা দেয়া হবে। এর আগে বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করেন এনডিএ-র তরফে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে।
জেপি নড্ডা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেব দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে সিআরপিএফ-কে নির্দেশ দেয়া হয় দ্রৌপদীর নিরাপত্তা প্রদানের জন্য। এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণার পরই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তার ওপর হুমকির মূল্যায়ন করে। সেই রিপোর্টের পরিপ্রক্ষিতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্রৌপদীর নিরাপত্তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
ওড়িশায় নিযুক্ত ১৪ থেকে ১৬ জন আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ান বর্তমানে দ্রৌপদীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। রাজ্য এবং ভারতজুড়ে যেখানেই দ্রৌপদী ভ্রমণ করবেন, নিরাপত্তারক্ষীরা তার সাথে যাবেন। নিরাপত্তা কর্মীরা ওড়িশার রায়রাংপুরে তার বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বেও থাকবেন।
উল্লেখ্য, দ্রৌপদী মুর্মু তার নির্বাচনে নিজের জন্য সমর্থন চাইতে বিধায়ক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে দেখা করবেন আগামী এক মাস। এর জন্য তিনি দেশজুড়ে ভ্রমণ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত এই সিআরপিএফ কমান্ডো গ্রুপই দ্রৌপদীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।