সামগ্রিকভাবে ব্যবসাসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের আস্থা বাড়লেও উৎপাদনে ব্যবহার করা কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদ্যুত্, পানি, গ্যাস, অফিস ভাড়া ও অন্যান্য সরঞ্জামসংক্রান্ত ব্যয়ের বোঝা বাড়তে থাকায় আগামী দিনগুলোতে তাঁদের কপালের ভাঁজ আরো চওড়া হতে পারে বলে মনে করছে ব্যবসা নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান।
বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) বলছে, ২০২২ সালের মার্চ থেকে আগস্ট সময়ে করা এক জরিপে সামগ্রিকভাবে ব্যবসায় আস্থা পরিস্থিতির ইতিবাচক চিত্র দেখা গেলেও ব্যবসায় অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা তৈরি পোশাক খাতের মতো বড় খাতকেও চাপে ফেলতে পারে। এ অবস্থায় ব্যবসার ব্যয় কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে পরামর্শ দিয়েছে বিল্ড।
গতকাল রবিবার বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভে রিপোর্ট ২০২২-২৩ বা ব্যবসার আস্থা সূচক নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। এটি ছিল এ বিষয়ে তাদের পঞ্চম প্রতিবেদন। এবারের প্রতিবেদনটি তৈরিতে অবশ্য গবেষণা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে বিল্ড। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিল্ডের লজিস্টিকস ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটির কো-চেয়ার আবুল কাসেম খান, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপাল অঞ্চলের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমীন ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ ফয়েজুল আমীন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের জন্য সামগ্রিক বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স (বিসিআই) দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৪ পয়েন্ট। এই স্কোর চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত ব্যবসা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করে বিল্ড। জুন মাসের শেষে এসে সামগ্রিকভাবে ব্যবসার আস্থা সূচক ১০০ বেসিস পয়েন্টের মধ্যে ৭৮ দশমিক ২ পয়েন্ট স্কোর করতে পারে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।
মূল উপস্থাপনায় বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভেতে ছয় মাসের (ডিসেম্বর ২০২২ থেকে জুন ২০২৩) সময়কালের জন্য সেবা খাতের তুলনায় উৎপাদন খাতকে বেশি ইতিবাচক বলে মনে করা হচ্ছে। সেবা খাতের স্কোর আগামী জুন মাসের শেষ নাগাদ হতে পারে ৭৫ দশমিক ৯ পয়েন্ট। সেই তুলনায় উৎপাদন খাতের স্কোর দাঁড়াতে পারে ৮০ পয়েন্ট। তবে জরিপে দেখা যাচ্ছে, সেবা খাতের পরিচালন সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই পরিস্থিতির কারণ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা যেতে পারে বলে মনে করেন ফেরদৌস আরা বেগম। তিনি জানান, এ বছরের বিজনেস কনফিডেন্স জরিপে সাতটি বিষয়ের মধ্যে ছয়টিতেই উন্নতি দেখা গেছে। এ ছয়টি বিষয় হলো কর্মসংস্থান, ক্রয়াদেশ, সেবার চাহিদা, ব্যবসায় কার্যক্রম, বিক্রয়মূল্য ও বিনিয়োগ। শুধু ব্যবসায় ব্যয় সম্পর্কিত মতামতের ক্ষেত্রে নেতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।
বিল্ড বলছে, গবেষণায় আস্থা সূচকের মধ্যবিন্দু ধরা হয়েছে ৫০ স্কোরকে। প্রাপ্ত ফলাফল ৫০-এর কম হলে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি নেতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সেই হিসাবে তৈরি পোশাক খাতের ব্যয়সংক্রান্ত স্কোর খুবই নাজুক অবস্থায় আছে বলে মনে করছে বিল্ড। এই অবস্থায় ব্যবসায় টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ বাড়বে এবং মুনাফা কমে আসবে। তবে বাকি ছয়টি বিষয়ে সামগ্রিক স্কোর ভালো থাকায় এই একটি বিষয় সামাল দিতে পারলে ব্যবসা ভালো হবে বলে মনে করে বিল্ড। বিল্ডের গবেষণার জন্য ৫৬৭ জন উদ্যোক্তার মতামত গ্রহণ করা হয়। এটি পরিচালনা করা হয় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর সময়কালে।