মনসুর আলম খোকন
সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধিঃ-
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রিফাত হোসেনের (১৩) কৈশোরের প্রাণোচ্ছল পদচারণায় কয়েকদিন আগেও মুখোর ছিল ক্লাসরুমের সামনের বেঞ্চ, স্কুলের মাঠ, বাড়ির উঠান। রিফাত পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের পুন্ডুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। তার পিতা আরিফ একজন হতদরিদ্র ঝালমুড়ি বিক্রেতা। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পাঁচজনের সংসার তার।
পুন্ডুরিয়া কারিগরপাড়া তার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, কখনো পথে, কখনো স্কুলের পাশে ঝালমুড়ি বিক্রি করে প্রতিদিন দুই থেকে তিন শ’ টাকা আয় করে রিফাতের বাবা। এই অল্প আয়ের সংসারের বড় সন্তান রিফাতের মাঝেমধ্যে মাথা ব্যাথা করতো। দিন দিন তার মাথা ব্যাথার অবস্থা অবনতি হয়। রিফাতকে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানসিক ও ব্রেন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাহরিমা মোস্তারীকে দেখানোর পর তিনি জানিয়েছেন, রিফাতের ব্রেনে টিউমারের সৃষ্টি হয়েছে এবং ব্রেনে ইনফেকশন। সেক্ষেত্রে অপারেশন ছাড়া তাকে বাঁচানো সম্ভব নয় এবং জরুরিভিত্তিতে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অন্যথায়, তার জীবননাশের আশংকা রয়েছে।
অসহায় রিফাতের শারীরিক সমস্যা দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সেই কিশোরপ্রাণ টাকার অভাবে চিকিৎসাহীন অবস্থায় আজ শুয়ে আছে বাড়ির বিছানায়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের জন্য তার অনেক টাকার দরকার। রিফাতের বাবা আরিফের পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য নেই। আরিফের সংসারে স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। রিফাতের বাবা আরিফ হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, সহায় সম্বল হিসেবে আমার কিছুই নেই। আমার ছেলের চিকিৎসা বাবদ এ পর্যন্ত ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে যা সবই কিস্তি আর ধারদেনা করেছি। একদিন ঝালমুড়ি বিক্রি না করলে আমার সংসার চলে না। কিভাবে এতো টাকা দিয়ে আমার ছেলের চিকিৎসা করাবো? বাবা হয়ে দিনরাত ছেলের কান্নাকাটি আর সহ্য করতে পারছি।
এমতাবস্থায় অসহায় হতদরিদ্র পিতা-মাতা রিফাতের সুচিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান, হৃদয়বান ও দানশীল ব্যক্তিদের সাহায্য কামনা করেছেন। পুন্ডুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলেটি অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী। তার এই বয়সে এমন জটিল রোগ আসলেই খুবই কষ্টকর। আমার স্কুল এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে যতোটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। রিফাতের সুচিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফাতেমাতুয্ জান্নাত জানান, রিফাতের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ও পরিক্ষার কাগজপত্র দেখেছি। তাতে দেখা গেছে, সে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। এজন্য জরুরিভিত্তিতে তার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউিট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের মতো বড় কোনো হাসপাতালেই এ ধরনের রোগের অস্ত্রোপচার সম্ভব।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলা প্রশাসনের সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে শিশুটির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। আমি তার খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি তার চিকিৎসা করার জন্য আর কি ধরনের সহযোগিতা করতে পারি।
রিফাতের উন্নত চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন। চিকিৎসার্থে সহযোগিতা করতে রিফাতের মা রিতা খাতুনের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি: পুন্ডুরিয়া এজেন্ট শাখা হিসাব নং- ২০৫০৭৭৭০২১৫৯৭০৫০১, বিকাশ নম্বর: ০১৭৮৪-৮৯৯১২০, নগদ নম্বর:০১৭০৯-০১০৬৪০।