জুয়েল সাদত,
সোস্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে বাজে সংস্করন অনলাইন মোবাইল টিভির অপব্যবহার। ভাইরাল যুগে আক্রান্ত সমাজ। রুহুল আমিন নামের একজন সমাজ সচেতন জানালেন, আজকাল নিজের স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য করে কেউ টিকতে পারছেন না, আপনার দরজার সামনে দশটি মোবাইল ফোন ডান্ডা লাগানো ভাইয়েরা উপস্থিত হয়ে যান। এটা কি পরিমান ভয়াবহ রুপ নিয়েছে তা ভুুক্তভোরীরা জানেন। এই ডান্ডা লাগানো মোবাইল ফোনের সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল করোনা কালীন সময়। যদিও তখন তা বাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, আলোচনা নির্ভর। আজ তার বিস্তৃতি বাংলাদেশের শহর ছাড়িয়ে গ্রাম গঞ্জেও।
আগে আমরা অনলাইন সাংবাদিকতা নিয়ে তার অপব্যবহার নিয়ে কথা বলতাম। এখন অনলাইন টিভির আগাছা গুলো নিয়ে দু:চিন্তায়। বর্তমানে ভাল ভাল জাতীয় কাগজের অনলাইন ভার্সন যেমন আছে, ঠিক তেমনি দেশের সেরা কাগজ গুলোর অনলাইন টিভির বা সোস্যাল মিডিয়ার ফেসবুক পেজেও লাইভ থাকে। এ থেকে বুজা যাচ্ছে, জীবন যেদিকে যাচ্ছে, চাহিদা যেখানে মুল মিডিয়াও সেদিকে এগুচ্ছে।
ভাইরাল করে ভিউ বাড়ীয়ে এক অস্থির প্রতিযোগিতায় সমাজ ধাবিত। ফেসবুক পেজে বাড়ীতে বসে অনেকে নানা ব্যবসা করছেন, সেটা অনেক ভাল মাধ্যম। তবে মোবাইল ডান্ডায় লাগিয়ে যে অপসাংবাদিকতা করছেন, তার জন্য শংকিত।
একটা উদাহরন দেই, রাত্রি নামের একজন সহশিল্পী সাকিব খানের বউ বলে ভাইরাল হলেন, বেশ কিছুদিন ঐ মহিলাকে নিয়ে ট্রল হল। এখন তিনি বলছেন, তিনি কখনও তা বলেন নি, মোবাইল টিভির ভাইয়েরা তাকে দিয়ে বলিয়েছেন। সাকিব খান তাকে সহযোগীতা করতেন। তার ছেলেটা বাহাদুরের ছেলে। তার হাতে কিছু টাকা দিয়ে ভিডিও ভাইরাল করে সেই মোবাইল অনলাইন এর ভাইয়েরা কয়েক লাখ টাকা বানিয়েছেন। এখন আবার শুনা যায় ভুয়া ডিউ ও ভুয়া ফলোয়ার করা যায়। ডান্ডা লাগানো মোবাইল টিভির অসাংবাদিকরা তাদের বড় সংখ্যার ভিউ দেখিয়ে নানা চটকাদার ইন্টার্ভিউ নিচ্ছেন। অনেক স্টার সেই ভুয়া ফলোয়ার দেখে কথা বলতে শুরু করেন। একটা ঘটনা যেখানেই ঘটুক টিভি চ্যানেল একসেস পায় না, মোবাইলের সাংবাদিকরা উপস্থিত। এদের সাংবাদিক বলা যায় কিনা আমার সন্দেহ। যদিও এর মধ্যে অনেকে ভাল কাজ করে থাকেন, জনজীবন এর দুর্ভোগ তুলে ধরেন। তবে কাজের চেয়ে অকাজ করেন বেশী মানুষ। এই বৃহৎ গোষ্ঠীর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নাই। এরা অনেকের নুন্যতম যোগ্যতা নাই সাংবাদিকতার, তারপরও কোন এক মোহে বা সামান্য টাকার লোভে জড়িয়ে গেছেন।
দুই
যারা এই মাধ্যমে ভাল কনটেন্ট ক্রিয়েট করতে পারেন, তারা অনেক ভাল করছেন। ফুড টেষ্টিং, ট্রাভেল চ্যানেল, ইংরেজী শিক্ষা, আরবী শিক্ষা, অনলাইন টিচিং, স্টুডেন্ট কনসালটেন্সিসহ অনেক মাধ্যমে অনেকে জনজীবন এর উপকার হচ্ছে। অনেক এন্টারপ্রেনার মোটিভেশন করে হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য বদলাচ্ছেন। আমরা শংকিত অপসাংবাদিকতা নিয়ে। সংবাদের স্বচ্ছতা নিয়ে। তিলকে তাল না বানানো থেকে দুরে থাকার জন্য।
যারা শিক্ষিত যারা অনেক ভাল ধারনা রাখেন তারা এগিয়ে আসুক কোন অসুবিধা নাই। তারা তাদের কমনসেন্স ও মেধা খাটিয়ে সমাজকে ভাল কিছু দিতে পারবেন। কিন্তু এ মাধ্যমে বেকার এক অশিক্ষিত বড় জনগোষ্ঠী জড়িত, যার কারনে আমাদের শংকা।
সাংবাদিকতা একটা মহত কাজ, সেটা প্রিন্ট, অনলাইন, মুলধারার টিভি বা অনলাইন মোবাইল টিভিই হউক সেখানে পেশাদারীত্ব থাকতে হবে। সমাজের কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ বিচার করতে হবে। যেহেতু মোবাইল টিভি অনেক জনপ্রিয় হচ্ছে, লাখ লাখ লোক দেখছে, সেটা ভাইরাল হয়ে যায়। তাই আপনি কি ছাড়বেন সেটা বিবেকের বিষয়। সমাজের ভাল কাজে আসবে কিনা বিবেচনা করতে হবে। সাংবাদিকতায় মোজো হতে যাচ্ছে অন্যতম হাতিয়ার। অনলাইম মোবাইল টিভির সাংবাদিকতাকে এক অর্থে মোজো বলে। সিলেটের অনুজ প্রতিভাবান সাংবাদিক সাদিকুর রহমান সাকী মোজো সাংবাদিকতা কে উন্নত করার জন্য দুটো সফল ট্রেনিং দিয়েছেন সম্প্রতি সিলেট ও বিয়ানীবাজারে। আমি সহ অনেকের কাছে পরামর্শ চাইলেন, আমি বললাম শিক্ষিত ছেলেদের ট্রেনিং দিতে পার। নুন্যতম গ্রাজুয়েট ও ভাল ট্রেইনার জরুরী। সাদিকুর রহমান সাকী অনেক ভাল কাজে জড়িত, এই মোজো হতে যাচ্ছে আাগামীর অন্যতম মিডিয়া। যেই বিষয় নিয়ে আজকের আলোকপাত।
আমাদের সমাজে অনাচে কানাচে অনেক সমস্যা, অনেক অনিয়ম, অনেক অনৈতিক কাজ, অনেক সরকারী অপব্যয় হয়ে থাকে। সেগুলো উঠে আসতে পারে এই মাধ্যমে। কারও পারিবারিক বা সামাজিক বা ব্যাক্তিগত বিষয়কে প্রাধান্য না দিলে এটা হতে পারে অনেক বড় মাধ্যম। অনেকেই অনেক সম্মানীত ব্যাক্তিদের নানা ভাবে হয়রানী করে তাদের জীবন অতিষ্ট করে তোলে বুঝে বা না বুঝে অনেক ডান্ডায় লাগানো মোবাইলের অপসাংবাদিকরা এই কাজগুলো করেন। যার কারনে অনেকে আত্বহত্যা করতে বাধ্য হন। মানুষের মর্যাদাহানী হলে মানুষ বাচতে পারেন না। তাই এই মাধ্যমটাকে একটা নীতিমালায় আনতে হবে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে তার দ্রæত বিচার করলে অপব্যবহার কমবে।
সব জিনিসের ভাল মন্দ দুটো দিক থাকে। এই মোবাইল সাংবাদিকতার ভাল দিক বলে শেষ করা যাবে না । সব অনিয়মের বিরুদ্ধে এ মাধ্যম কাজ করলে এটা সমাজের লাইটহাউস হবে। তবে এর মাধ্যমে যাতে কেউ হেনস্থা না হতে পারেন, বিব্রতবোধ না করেন তার নীতিমালা দরকার। আমরা দেখছি ভাইরাল ও ভিউ বাড়ানোর এক অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত সবাই। যা মোটেই কাম্য নয়। সমাজের পজিটিভ কাজে ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু মুল টিভি সারা দেশের আনাচে কানাচে সার্ভিস দিতে পারে না, তাই এই মাধ্যমে সব সম্ভব।
এই মাধ্যমটাকে সুন্দরভাগে ব্যবহার করতে পারলে সমাজ সরল রেখায় চলে আসবে।।