গোল কিংবা জয় উদযাপনের ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের সাম্বা নৃত্য বহুল প্রচলিত রীতিতে পরিণত হয়েছে। যা এখন নিয়মিতই করে থাকেন রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়াস জুনিয়র। কিন্তু এ নাচের কারণেই তাকে বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। তাতে অবশ্য দমে যাওয়ার পাত্র নন ভিনিসিয়াস। তিনি বরং কড়া প্রতিক্রিয়ায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, গোলের পর উদযাপনে ‘নাচ থামবে না’।
এ বিষয়ে রিয়াল মাদ্রিদ তো বটেই ব্রাজিলের ফুটবলারদেরও পাশে পেয়েছেন সময়ের অন্যতম সেরা এই তরুণ প্রতিভা।
ঘটনার শুরু গত রবিবার মায়োর্কার বিপক্ষে ম্যাচ থেকে। সেদিন ৪-১ গোলে জয়ের ম্যাচে গোলও করেন ভিনিসিয়াস। গোলের পর স্বাভাবিকভাবেই নেচে উদযাপন করেন ভিনিসিয়াস। যা আবার একদমই পছন্দ হয়নি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মিডফিল্ডার কোকের।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠে খেলতে নামবে রিয়াল। এই ম্যাচের আগে সংবাদমাধ্যমে কোকে জানান, ওয়ান্দা মেট্রোপলিটনে (অ্যাটলেটিকোর হোম গ্রাউন্ড) এভাবে নাচলে ‘সমস্যা’ হয়ে যাবে। তবে কী সমস্যা? কোকে সেটি খোলাসা করেননি।
পরে স্প্যানিশ ফুটবল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পেদ্রো ব্রাভো শুক্রবার টেলিভিশনে এক লাইভ অনুষ্ঠানে ২২ বছর বয়সী ভিনিসিয়াসকে বানরের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘প্রতিপক্ষকে আপনার (ভিনিসিউস) সম্মান করতে হবে। আপনি যদি সাম্বা নাচতে চান, তাহলে ব্রাজিলের সাম্বাড্রোমে যান। স্পেনে, আপনাকে প্রতিপক্ষকে সম্মান করতে হবে এবং বানরের মতো আচরণ বন্ধ করতে হবে।’
ব্রাভোর এমন মন্তব্যের পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন ভিনিসিয়াস ও ব্রাজিলের ফুটবলাররা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিনিসিয়াসের সমর্থনে নানান উৎসাহমূলক বার্তা দিয়েছেন কিংবদন্তি পেলে, নেইমার জুনিয়রসহ ব্রাজিলের তারকা ফুটবলাররা। ভিনিসিয়াসের ক্লাব রিয়াল জানিয়েছে তারাও এসব সহ্য করবে না, প্রয়োজনে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এরই মধ্যে মন্তব্য ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ক্ষমা চেয়ে ব্রাভো জানিয়েছেন, তিনি মূলত রূপক অর্থে কথাটি বলেছিলেন। এ বিষয়ে সবশেষ মুখ খুলেছেন ভিনিসিয়াস নিজেই। বিশদ এক ভিডিওবার্তায় ভিনিসিয়াস জানিয়ে দিয়েছেন, নাচ থামবে না।
এ তরুণ ফুটবলারের ভাষ্য, ‘এই উদযাপনকে গ্রহণ করুন, এটিকে সম্মান করুন। যাই হোক না কেন, আমি থামব না! সপ্তাহখানেক আগে কিছু লোক আমার নাচের সমালোচনা শুরু করেছিল। কিন্তু এই নাচ আমার একার নয়।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘রোনালদিনহো, নেইমার, (লুকাস) পাকুয়েতা, (অ্যান্টনিও) গ্রিজমান, জোয়াও ফেলিক্স, ম্যাথিউজ কুনহাও এভাবে নেচেছে। নাচগুলো ব্রাজিলিয়ান ফাঙ্ক গায়ক ও সাম্বা নৃত্যশিল্পী, লাতিন রেগেটন গায়ক এবং কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের অন্তর্গত। বিশ্বে এসব নাচ উদযাপন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অংশ।’
এসময় সমালোচকদের এক হাত নিয়ে ভিনিসিয়াস বলেন, ‘তারা (সমালোচকরা) বলে আমাদের আনন্দ তাদের বিরক্ত করে। ইউরোপে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্রাজিলিয়ানের সফল হওয়ার আনন্দ তাদের অনেক বেশি বিরক্ত করে। তবে আমার জেতার ইচ্ছা, আমার হাসি, আমার চোখের ঝলকানি অনেক বড়।’