গাবতলী বাস টার্মিনাল।ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা।রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে গাবতলীতে টাঙ্গাইলগামী বাস ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাঁতীবাজারের স্বর্ণ দোকানের কর্মচারী টিটু প্রধানিয়া।ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জুয়েলারির অর্ডার করা স্বর্ণের গহনা তখন টিটুর কাছে।স্কুলব্যাগের মধ্যে বিশেষভাবে মুড়িয়ে রাখা প্যাকেটে থাকা স্বর্ণালংকারের ওজন ছিল ৩৮ ভরি ১৪ আনা।
বাসে ওঠার আগে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যক্তি টিটুর পথরোধ করে ব্যাগের ভেতরে কী,তা জানতে চান। স্বর্ণালংকার রয়েছে- এটা জানানোর কিছু সময় পরপরই অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজন ডিবির পরিচয়ধারী ব্যক্তির সঙ্গে এসে যোগ দেয়।তেজগাঁও থানায় নেওয়ার কথা বলে একটি মোটরসাইকেলে তাঁকে তুলে বেড়িবাঁধে নেওয়া হয়। এরপর সেখানে কিছু সময় অবস্থানের পর সিএনজি অটোরিকশায় তুলে তাঁকে বিজয় সরণিতে আনা হয়।বিজয় সরণির ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি আটকা পড়লে দ্রুত স্বর্ণালংকারভর্তি ব্যাগ নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।রোববার মধ্যরাতে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনা দারুস সালাম পুলিশকে অবহিত করেন টিটু।এরপর যে মোটরসাইকেলে তাঁকে তুলে বেড়িবাঁধ নেওয়া হয়েছিল,সেটির নম্বর পুলিশকে সরবরাহ করেন।এতে ঘুরে যায় তদন্তের মোড়। মোটরসাইকেল নম্বরের সূত্র ধরে ছিনতাইয়ের সঙ্গে পুলিশের একজন সদস্যকে সন্দেহে রাখা হচ্ছে।তাঁর নাম জাহিদুল ইসলাম।তিনি রূপনগর থানায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত।এ তথ্য সামনে আসার পর গতকাল সোমবার জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।থানা থেকে তাঁকে ক্লোজ করে মিরপুরের ডিসি অফিসে সংযুক্ত করা হয়।এ ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশও।এর আগে ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি তাঁতীবাজারের ব্যবসায়ীদের ৯০ ভরি স্বর্ণ ডিবি পরিচয়ে লুট করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আট সদস্য।এ ব্যাপারে রাতে ডিএমপি কমিশনার মোহা.শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন,স্বর্ণ লুটের ঘটনা জানার পর গুরুত্বসহকারে তদন্তের জন্য মিরপুর বিভাগের ডিসিকে নির্দেশ দিয়েছি।ঘটনায় পুলিশ জড়িত থাকলে তাকে অপরাধী হিসেবেই দেখা হবে।তদন্তে পুলিশের যার নাম আসবে,তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে।
এ বিষয়ে রূপনগর থানার ওসি আরিফুর রহমান সরকার বলেন,দারুস সালাম থানায় স্বর্ণ লুটের একটি মামলায় এএসআই জাহিদুলকে ডিসি অফিসে নেওয়া হয়েছে।এর বেশি কিছু জানি না।এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে মামলার বাদী ও তাঁর দোকান মালিককে ফোনে পাওয়া যায়নি।
অবশ্য স্বর্ণ ছিনতাইয়ে এএসআই জাহিদুল ইসলামকে আটক করা হলেও এ বিষয়ে পুলিশ লুকোচুরি করে।মিরপুর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে দারুস সালাম জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার,সহকারী পুলিশ কমিশনার এবং দারুস সালাম থানার ওসির ব্যবহূত সরকারি ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হয় কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
জানা গেছে,রূপনগর থানা পুলিশের ‘হোন্ডা টহল টিম’ নামে একাধিক টিম রয়েছে।প্রতিদিন দুই থেকে তিনটা মোটরসাইকেল নিয়ে পুলিশ সদস্যরা টহলে বের হন।প্রতি মোটরসাইকেলে দু’জন থাকেন।এই টিমের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ আছে।পথচারী ও রিকশাযাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন যানবাহনের মানুষকে তল্লাশির নামে নানাভাবে হয়রানি করা হয়।গত বছরের শেষের দিকে এএসআই সুব্রত ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন পুলিশের হাতে।