ভূ-অভ্যন্তরে বিপুল শক্তি উদিগরণের ফলে এক ধরনের কম্পনের সৃষ্টি হয়। হঠাৎ করে এই শক্তির মুক্তি ঘটলে ভূপৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এরূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। বর্তমান বিশ্বে ভূমিকম্প ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবী জুড়ে বছরে কয়েক লাখ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এগুলোর মধ্যে গড়ে ১৭টি বড় ধরনের ভূমিকম্প রিখটার স্কেলে সাত মাত্রার বেশি। আট মাত্রার ভূমিকম্প হয় বছরে গড়ে একবার। মৃদু ভূমিকম্পগুলো অনেক সময় সাধারণভাবে বোঝা যায় না।
সম্প্রতি আমাদের দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, ভূমিকম্পটি ছিল ৪ দশমিক ৩ মাত্রার। উত্পত্তিস্থলে এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। তবে বিভিন্ন কারণে এই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলন, কার্বন ডাইঅক্সাইডের বৃদ্ধি, বাঁধ নির্মাণ, বনায়ন ধ্বংস, জিওথার্মাল শক্তির স্থানান্তর ও জলবায়ু পরিবর্তন। বিশেষজ্ঞদের ধারণামতে, বাংলাদেশে যদি রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার মতো বড় ভূমিকম্প হয়, তাহলে কয়েক হাজার ভবন ধসে পড়বে। তাই নিরাপদ আবাসস্থল, পরিকল্পিতভাবে ভবন তৈরি করতে হবে। নগরায়ণ হতে হবে পরিকল্পিত। জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। তাছাড়া ভূমিকম্প হওয়ার সময় জীবন বাঁচাতে হলে প্রথমেই মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দিতে হবে। বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে এবং লিফট থাকলে তার সুইচও বন্ধ করে দিতে হবে। বাসাবাড়িতে থাকলে মাথায় বালিশ দিয়ে ঢেকে টেবিল, খাট ও শক্ত আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই মাথায় বালিশ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে, কোনো অবস্থাতেই লিফট ব্যবহার করা যাবে না। ঘর থেকে বের হওয়া না গেলে, ইটের তৈরি পাকা ঘর হলে ঘরের কোণে এবং কলাম ও বিমের তৈরি ভবন হলে কলামের গোড়ায় আশ্রয় নিতে হবে, টিনের ঘর হলে শক্ত খাট ও চৌকির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। স্কুল-কলেজ বা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকলে মাথায় ব্যাগ দিয়ে শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। গাড়িতে থাকলে গাড়ি রাস্তার একপাশে থামিয়ে গাড়িতেই অবস্থান করতে হবে। সমুদ্র বা নদীর ধারে থাকলে উঁচু জায়গায় অবস্থান করতে হবে। ঘরের বাইরে থাকলে উঁচু বাড়ি, বড় গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে থাকতে হবে। একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে।
সার্বিক পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসচেতনতা ও প্রস্তুতিই হলো ভূমিকম্প ঝুঁকি হ্রাসে সফল ব্যবস্থা। ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতন হওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ বন্ধ করা, ভূমিকম্প-পরবর্তী জরুরি উদ্ধার ও অনুসন্ধান প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। তাই ভূমিকম্প ঝুঁকি এড়াতে এখন থেকেই নগরদুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আরো সমন্বিত এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী গতিশীল করা সময়ের দাবি।