বন্যা ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা বেড়েই চলেছে বাংলাদেশে। একই সঙ্গে এই দেশ ভূমিকম্প থেকে ঝুঁকিমুক্ত নয়। সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ও পাহাড় কিংবা উঁচু স্থান থেকে বৃহৎ পরিসরে শিলাচ্যুতির কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে ।
সম্প্রতি ছবির মতো সাজানো-গুছানো দেশ তুরস্কে ও সিরিয়ায় ৭.৮ রিখটার স্কেলের মাত্রার ভূমিকম্প হলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজারের বেশি। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ এখনো চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, এতে মৃতের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক ছাড়াতে পারে। সরকারি হিসাবের তথ্য মতে, তুরস্কে প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে, ৫৬ হাজারের বেশি ভবনকে বসবাসের অনুপযোগী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই ভূমিকম্পে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুরস্কে ও সিরিয়ায় কম-বেশি ৬০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিবিসির এক জরিপে বলা হয়েছে—৭.৮ রিখটার স্কেলের মাত্রার ভূমিকম্পে এত ভবন বিধ্বস্ত হওয়ার কথা নয়। ভবনগুলো নির্মাণে যেসব কাঁচামাল ব্যবহার করার কথা এবং ইমারত বিধি মানার প্রয়োজন ছিল, তার কোনোটাই মানা হয়নি। তুরস্কে এ রকম শত শত দালান ইমারত বিধি আইন মেনে নির্মাণ করা হয়নি বলে গবেষকরা প্রতিবেদনে বলছেন। তুরস্কে ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া ভবনগুলোর ১১৩ জন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং ১২ জনকে কাস্টডিতে নিয়েছে তুরস্কের পুলিশ। ২০১০ সালের হাইতিতে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর ২০২৩ সালে এসে তুরস্ক দেখল তাদের স্মরণকালের সেরা ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির তাণ্ডব।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের ফলে বাংলাদেশে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। রাজধানী ঢাকার আশপাশে বড়মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে ঢাকা মহানগরীর। ভূমিকম্প সহনীয় নিরাপদ অবকাঠামো তৈরি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করেছেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ। এ বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেছেন, ঢাকা শহরে সিটি করপোরেশনে ৪ লাখের বেশি এবং রাজউক এলাকায় ১২ লাখের বেশি ভবন ভূমিকম্প সহনীয় নয়। দুর্যোগ শুধু প্রাকৃতিক কারণে হয় তা নয়, মানুষের সৃষ্ট পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণেও হতে পারে। পরিকল্পিত নগরায়ন ও ভূমিকম্প থেকে বাঁচার জন্য পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা রাখা জরুরি। বুয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি সিডিএমপির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে, যেখানে তৈরি হবে ৭ কোটি কনক্রিটের স্তূপ।
ভূমিকম্প সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের করণীয় কী? ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে হলে যথাযথ বিধিনিষেধ মেনে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে শিক্ষিত শ্রেণী, বৃত্তবানমহল, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।