বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (২৪ মে) রাতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন এক টুইট বার্তায় এ ঘোষণা দেন। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু চ্যানেল আই’র তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশ নেন।
ডোনাল্ড লু ঘোষিত ভিসা নীতির বিষয়ে ব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। আলোচনায় রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদের পাশাপাশি ভোট বানচালের নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়নকারীদের সতর্ক করেছেন ডোনাল্ড লু।
যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই নীতি নিতে গেল, এটা কি জরুরি -সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে লু বলেন, আমি খুব পরিষ্কার বলতে চাই, আমরা কারও বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেইনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন নতুন পলিসি ঘোষণা করেছেন। এতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে কারও বিরুদ্ধে ভিসায় বিধিনিষেধ দিতে পারবে, যাদেরকে মনে হবে যে তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছেন। তিনি হতে পারেন সরকারের, বিচার বিভাগের, আইন প্রয়োগকারী অথবা বিরোধী দলীয় সদস্য। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বজুড়ে নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন গণতন্ত্র।
নতুন ভিসা পলিসির অধীনে কাউকে চিহ্নিত করা হবে কীভাবে -এ বিষয়ে লু বলেন, এই নীতি সরকার ও বিরোধী দলীয় সদস্যদের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ করা হবে। উদাহরণ হিসবে ধরুন, যদি আমরা দেখতে পাই বিরোধী দলীয় কোনো সদস্য নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে সহিংসতায় জড়িত, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শনে জড়িত, তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হবে না। একইভাবে আমরা যদি দেখি সরকারি কোনো সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ভোটারদের ভীতি প্রদর্শনে জড়িত, সহিংসতায় জড়িত মুক্ত মত প্রকাশ বাধাগ্রস্ত করছেন, তাহলে ওই সদস্যকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেবো না।
ভিসায় বিধিনিষেধ পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কিনা -এ সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, হ্যা এই নীতি খুব পরিষ্কার। পরিবারের ঘনিষ্ঠদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। স্বামী স্ত্রী এবং সন্তানরাও ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় পড়বেন। যাদের ভিসায় এমন বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে, তাদেরকে অবিলম্বে জানিয়ে দেওয়া হবে।
সুনির্দিষ্টভাবে কারা বিধিনিষেধের আওতায় পড়বেন – এই নীতি আমাদেরকে অনুমোদন করে চারটি ক্ষেত্র – ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, ভোট জালিয়াতি মুক্ত মত প্রকাশকে প্রত্যাখ্যান করা ও স্বাধীনভাবে সভা -সমাবেশ করায় বাধা, সহিংসতা করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা।
এই প্রক্রিয়া সুষ্ঠু এবং গঠনমূলক হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা ব্যবহার করা হবে সরকার ও বিরোধী দলের ক্ষেত্রে সমভাবে। আমরা কোনো বিশেষ দলকে সমর্থন করি না। কোনো বিশেষ প্রার্থীকে সমর্থন করি না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু অবাধ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।
গত ১৪ মে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা কমিয়ে দেওয়ার ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে এ ঘোষণা দেওয়া হলো কিনা – এমন প্রশ্নে লু বলেন, তা নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে অবহিত করেছি গত ৩ মে। ফলে ওই ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমাদের এই সিদ্ধান্ত এমন নয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই ঘটনায় প্রতিশোধ নেয়নি বা এই নীতি ঘোষণা করেনি।
লু বলেন, আমাদের এই নীতির লক্ষ্য হলো সহিংসতা রোধ করা। আগামী বছরে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উৎসাহিত করা। আমার সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়। আমাদের এই নীতি প্রধানমন্ত্রী, সরকার, বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ ও বাংলাদেশিরা যাতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পায়, তার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক।
বাংলাদেশের নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ কেন – জিল্লুর রহমানের এমন প্রশ্নে লু বলেন, বাংলাদেশে কয়েকবার সফরের সুযোগ হয়েছে আমার। এই দেশটি আমাদের কাছে খুব স্পেশাল। জনগণের মধ্যে সম্পর্ক, পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কোম্পানির মধ্যে সম্পর্ক আছে। বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রকে উৎসাহিত করা আমাদের কেন্দ্রীয় প্রবণতা। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ যারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করে।
লু বলেন, আমি জানি এই নীতি অনেক প্রশ্ন সৃষ্টি করবে। আমি আবারও জোর দিয়ে বলতে চাই, আমরা সবচেয়ে গঠনমূলক এবং ইতিবাচক উপায়ে এই নীতি গ্রহণ করছি। আমরা বাংলাদেশে সংলাপ চাই। সরকার বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ – সবার উদ্যোগ চাই, যাতে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয় যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। এটা হতে পারে বাংলাদেশের কঠিন সময়। এই নির্বাচন হতে পারে আনন্দের। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অগ্রগতি হতে পারে এর মধ্য দিয়ে।