জান্তা সরকারের অধীনে থাকা মিয়ানমারের ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষের অবস্থা এখন ভয়ংকর বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রুস স্থানীয় সময় গত বুধবার এ মন্তব্য করেছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সংস্থাটির মানবাধিকার পরিষদে কথা বলার সময় টম অ্যান্ড্রুস বলেন, গত বছর সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় আসার পর দেশটির মানুষের অবস্থা ‘খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে, এরপর ভয়ংকরের দিকে গেছে’। টম অ্যান্ড্রুস বলেন, ‘২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর যে সংকট দেখা দেয় তাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ব্যর্থ হয়েছে।’ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে, যৌন সহিংসতা, নির্যাতন, বেসামরিকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত অভিযান ও হত্যা।
টম অ্যান্ড্রুস জাতিসংঘে এসব বিষয় উত্থাপনের ঠিক আগের দিন মিয়ানমারের সাগাইন এলাকার একটি স্কুলে হেলিকপ্টার হামলা করে জান্তা বাহিনী। হামলায় অন্তত ১১ শিশু নিহত হয়। সামরিক বাহিনী দাবি করছে, ওই স্কুলে জান্তা বিরোধীরা লুকিয়ে ছিল। তাই এ হামলা করা হয়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারে সংকট শুরু হয়। ওই দিনই নতুন করে দেশটির পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। সামরিক অভ্যুত্থানের পরপরই দেশটিতে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে দেশটির জনগণ। তাদের থামাতে বলপ্রয়োগ করে জান্তা সরকার। শুরু হয় সংঘর্ষ। এখনো পর্যন্ত দেশটিতে ২ হাজার ৩০০ মানুষ জান্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে।
মানবাধিকার পরিষদে অ্যান্ড্রুস জানান, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে ২৯৫ শিশু। মৃত্যুর প্রহর গুনছেন ৮৪ জন রাজবন্দী।
এদিকে, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ওপর জাতিসংঘের মাধ্যমে চাপ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন বর্জন করারও আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। গত বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। এ সময় সাম্প্রতিক হামলার উদাহরণ দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।