ফিলিস্তিনের রাজধানী আলকুদসে (জেরুসালেম) অবস্থিত মুসলিমদের প্রথম কিবলাখ্যাত মসজিদুল আকসা সফর করেছেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান ভিডিও ব্লগার মুহসিন ইবরাহিম। সফরকালে সেখানে নামাজ আদায় করেন এই যুবক। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আল আকসা প্রাঙ্গণে দুই রাকাত নামাজ আদায় আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত।’
সোমবার আলজাজিরায় প্রকাশিত সাক্ষাতকারে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন, ‘প্রেম ও ভালোবাসায় সিক্ত এ ভ্রমণ ছিল পুরোপুরি অন্য রকম। তবে সবচেয়ে বড় দুঃখজনক বিষয় হলো, একজন সশস্ত্র সৈনিক অনুমতি দেয়ার পরই আপনি মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করতে পারবেন, এর আগে নয়।’
প্রথম বারের মতো পবিত্র মসজিদুল আকসা ভ্রমণে দুর্দান্ত মুহূর্তগুলো দর্শকদের কাছে তুলে ধরেন মুহসিন ইবরাহিম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইস্টাগ্রাম ও টিকটক প্লাটফর্মে এসব ভিডিও শেয়ার করেন তিনি।
আলজাজিরার সাক্ষাৎকারে বাবা ও চাচাদের দুঃখের কথা জানিয়ে ইবরাহিম বলেন, ‘আমার দাদা ফিলিস্তিন ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে আমার বাবা ও চাচারা আর এখানে আসতে পারেননি। তাই সব সময় দুঃখ ও আক্ষেপ প্রকাশ করেন। এমনকি মসজিদুল আকসা থেকে যখন তাদের সাথে ভিডিওকলে কথা হয়েছে, তখন তারা অশ্রু ঝরান। অনেক আকাঙ্ক্ষা থাকলেও তারা এ পবিত্র ভূমিতে আসতে পারছেন না।’
কানাডার পাসপোর্টধারী হলেও ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত হওয়ায় তল্লাশির মুখোমুখি হতে হয় ইবরাহিমকে। তিনি জানান, ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত জানতে পেরে ইসরাইলের দখলদার সৈনিকরা আমাকে বিরক্ত করা শুরু করে। তারা আল কুদস ভ্রমণে আসার কারণ সম্পর্কে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে।
বিমানবন্দর থেকে হয়রানি শুরুর কথা জানিয়ে ইবরাহিম বলেন, ‘আমি আরব জানতে পেরে পুলিশ আমার পাসপোর্টে একটি সিল যুক্ত করে। প্রথমে আমি এর অর্থ বুঝতে না পারলেও তদন্তের সময় পর্যটককে দুই ভাগ করা হয়- ইসরাইলি ও বিদেশী। এরপর আরব ও অন্যান্যদের আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানি করা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রবেশপথে আরব ও অন্যদের মধ্যে তফাত এখানেই। অন্য সবাই সহজেই ঢুকতে পারলেও আরবদের নানাভাবে হয়রানিতে পড়তে হয়।’
বিভিন্ন দেশে থাকা সবাইকে ফিলিস্তিন ভ্রমণে আসতে উৎসাহ দেন ইবরাহিম। তিনি বলেন, ‘ইসরাইলি দখলদাররা মনে করে এটা তাদের ভূমি। কিন্তু আমরা বার বার সেখানে গেলে তাদের এ অনুভূতি স্তিমিত হয়ে পড়বে। আমরা তাদের স্মরণ করিয়ে দেব যে তা আমাদের ভূমি। আমরা তাতে ফিরে আসব।’ ভবিষ্যতে নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আসার কথাও জানান এ তরুণ ব্লগার।
ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত হওয়ায় গর্বিত মুহসিন ইবরাহিম। কানাডা বা যেকোনো দেশে ভ্রমণে গেলে তিনি নিজেকে ফিলিস্তিনি বলে পরিচয় দেন। আর কেউ দেশ সম্পর্কে না জানলে তার কাছে দেশটির গল্প বর্ণনা করেন।