বর্তমান প্রযুক্তির বিশ্বে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন ডিজিটাল যন্ত্রে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুখ গুজে বসে থাকি আমরা। কিন্তু কখনো কী ভেবে দেখেছি, আমাদের মূল্যবান মস্তিষ্ককে ডিজিটাল প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে করপোরেট কোম্পানিগুলো কীভাবে ফায়দা লুটে নিচ্ছে! ফলে আমরা লক্ষ্য পৌঁছাতে পারছি না, হারিয়ে ফেলছি মহামূল্যবান সময়। এমনকী এতে করে ক্রমাগত ডোপামিন নিঃসারণ ঘটছে। বলে রাখা দরকার, ডোপামিন মস্তিষ্ক থেকে বের হওয়া বিশেষ এক বস্তু। এটাকে বলা যায়, এক ধরনের শক্তির উৎস, যেটা আমাদের কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। সহজ কথায় বললে, আমাদের সার্বিক মুড বা মনের ভাবকে নিয়ন্ত্রণ করে ডোপামিন। আবেগ বা উত্তেজনায় আমরা কীভাবে সাড়া দেব, সেটাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যে-কাজে পুরস্কার লাভের সম্ভাবনা আছে, সেই কাজ করার প্রেরণা জোগায় ডোপামিন। বলা চলে, এটা একটা প্রয়োজনীয় নিউরোট্রান্সমিটার। দুর্ভাগ্যবশত সেটা আজ প্রযুক্তির ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে আমাদের অগোচরেই! সুপরিকল্পিতভাবে ডোপামিন অপহরণ করছে প্রযুক্তি কুশীলবরা!
চলুন জেনে নিই, কীভাবে আপনার-আমার ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার চুরি হয়ে যাচ্ছে। ‘প্রযুক্তির আসক্তি’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রেসিডেন্ট শন পার্কার এক সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করা হয়েছে মানুষকে আলাদা করতে, এক সুতোয় বাঁধতে নয়।’ অর্থাৎ ব্যাপারটা এমন, কীভাবে মানুষকে বিচ্ছিন্ন ও অলস বানানো যায়, সেই কাজটিই করে যাচ্ছে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনোযোগ আকর্ষণ ধরে রাখতে শত-সহস্র উপায়ে বিপণন করপোরেট ব্যবসায়ীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আপনাকে, আমাকে ধরে রাখতেই সামাজিক সাইটগুলো প্রতিনিয়ত ঢেলে সাজানো হচ্ছে। যার ফলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে করপোরেট ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কোটি ডলার লুফে নিচ্ছে। আর এদিকে আপনি, আমি নিজের জীবনের লক্ষ্য, সময়, মহানুভবতা ইত্যাদি দিনদিন হারিয়ে ফেলছি! আধুনিক আবিষ্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম আবিষ্কার হচ্ছে নটিফিকেশন, তথা প্রজ্ঞাপন। এই একটি আবিষ্কার, যা আপনার-আমার মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠতেই কোনো কিছু পুরস্কার পাওয়ার আশায় ক্লিক করি আমরা। এই বিষয়টাই আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসারণ ঘটায়।
কি অবাক হচ্ছেন? এই অত্যাধুনিক অ্যালগরিদম বানানো হয়েছে ফেসবুক ব্যবহারকারী তথা আপনার-আমার ওপর গবেষণা করেই। ফেসবুক ইউটিউবের সাজেশনগুলো নিখুঁত কৌশলে কাস্টোমাইজড করা আছে। আবিষ্কৃত অ্যালগরিদম বিশেষভাবে কাস্টমাইজ্ড করার ফলে আপনাকে-আমাকে অবচেতনভাবে একটা প্যাঁচের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়, যার কারণে একটার পর একটা ভিডিও আসতেই থাকে! ফলে মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমরা ক্রমাগতভাবে প্রযুক্তির প্রাচীরে জড়িয়ে যাচ্ছি নিজেদের অজান্তেই। এভাবেই আমাদের নিউরোট্রান্সমিটার কী হারে অপহরণ হয়ে যাচ্ছে, তা আমাদের ভাবনারও বাইরে! যখন আমরা ফেসবুকের নোটিফিকেশন চেক করতে যাই, তখন আমাদের একটা পুরস্কার পাওয়ার মতো অনুভূতি জন্মায়। এ প্রবণতা আমাদের মস্তিষ্কের যে কী পরিমাণে ক্ষতি করে চলেছে, তা ভাবলেই শিহরিত হতে হয়। এ অবস্থায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে পরিমিতিবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। জরুরি ও প্রয়োজন ব্যতীত ভার্চুয়াল মাধ্যমে এড়িয়ে চলাই উত্তম।