বস্তুর অস্তিত্বের সাথে সংখ্যা ও হিসাবের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। বস্তুর অস্তিত্বের অভিজ্ঞতা সংখ্যার ধারণা দেয় এবং সংখ্যা দিয়ে হিসাবনিকাশ বা গণিত হয়। সংখ্যায় গঠিত অঙ্ক যুক্তির প্রতীকীরূপ। অনেক বড় সংজ্ঞা ছোট একটি গাণিতিক সমীকরণ দ্বারা খুব সহজে বোধসাধ্য করা যায়। সংখ্যা গণিতের একক, যা প্রতিটি বস্তুর যৌক্তিক চিন্তার সহযাত্রী। তাই দু’জন আন্তনক্ষত্রীয় বুদ্ধিমান সত্ত্বার পারস্পরিক ভাব বিনিময় কেবল সংখ্যায় গঠিত গাণিতিক নিয়মের আদান-প্রদানের দ্বারা সম্ভব।
মহাবিশ্বে যেখানে পদার্থের অস্তিত্ব আছে, সেখানে ভাষা না থাকলেও অঙ্ক আছে— সংখ্যা বস্তুজ্ঞানের অবিচ্ছিদ্য অংশ, একটি বস্তুর উল্লেখ হলেই এর পরিমান, পরিমাপ, কাল, স্থান, ভর ইত্যাদি নানান ধারণা আসে। আর এই ধারণার নামই হিসাব বা অঙ্ক। যেকোনও বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণী বস্তুজগতের যেখানে পা রাখবে, সেখানে সংখ্যা ও গণিতের দেখা পাবে। অতএব অসৌরীয় কোনও জগতে মানুষ কখনও গেলে, সেখানে যদি সে কোনও বুদ্ধিমান প্রাণীর সাক্ষাৎ পায়, তবে তাদের সাথে যোগাযোগ করার একমাত্র প্রায়োগিক দিক হবে গণিত। কেননা তারা মানবসদৃশ হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তদ্রূপ যোগাযোগের জন্য তারা ভাষা কিংবা শারীরিক ইশারা ব্যবহার করবে, তাও বলা যায় না। উদাহরণ স্বরূপ: সৌরজগতের নিকটতম নক্ষত্রজগতের নাম আলফা সেন্টোরি। ঐ জগত মূলত তিন তারকা বাইনারি স্টার সিস্টেম— আলফা সেন্টোরি-এ/বি/সি। এদের মধ্যে সূর্যের সবচে’ কাছের নক্ষত্রের নাম আলফা সেন্টোরি-সি বা প্রোক্সিমা সেন্টোরি। সূর্য থেকে ওটার দূরত্ব ৪.৩৬ আলোকবর্ষ। জানা গেছে যে, সেই জগতের প্রত্যেকটি নক্ষত্র কেন্দ্র করে নানান আকার ও ভরের গ্রহ আবর্তন করছে— সৌরজগতের ন্যায় আলফা সেন্টোরির প্রতিটি নক্ষত্রের নিজস্ব জগত আছে। প্রোক্সিমা সেন্টোরি নক্ষত্র থেকে মাত্র ৭০-লক্ষ কিমি: দূরে পৃথিবীসদৃশ একটি গ্রহের সন্ধান মিলেছে, যেখানে প্রবাহমান পানির অস্তিত্ব আছে।
২০১৬-সালের ২৫-অগাস্ট ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের করা এই তথ্য প্রকাশিত হয়। উক্ত গ্রহের নাম রাখা হয় প্রোক্সিমা-বি। মহাকাশে স্থাপিত নভদুরবিন হাবল থেকে প্রাপ্ত প্রক্সিমার ছবি বিশ্লেষণ করে নক্ষত্রটি সম্পর্কে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। পুরো আলফা সেন্টোরি তারকাজগতের চৌহর্দি সৌরজগতের চেয়ে কম হলেও আড়াই থেকে তিনগুণ বড়। আর এতোবড় নক্ষত্র পরিবারে কোনও বুদ্ধিমান প্রাণী নেই, জোর দিয়ে বলা যাবে না। উক্ত অসৌরীয় গ্রহগুলোর (Exoplanet) যেকোনও একটিতে যদি বুদ্ধিদীপ্ত এলিয়েন বাস করে, তবে তারা নিশ্চয়ই হিসাব, পরিমাপ ও আকৃতি ইত্যাদি জানে ও বোঝে। হয়তো সেগুলো প্রকাশ করতে আমরা যেসব প্রতীক সংখ্যা ব্যবহার করি, তেমন নাও হতে পারে।
তথাপি বুদ্ধির সাথে হিসাবের যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে, সেটা তাদের আচরণে অবশ্যই সেখানে অবতরণ করা পৃথিবীর নভোচারীরা বুঝবে। কিন্তু সেখানে বসবাসরত বুদ্ধিমান প্রাণীরা (যদি থাকে) নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ভাষা না অন্যকিছু ব্যবহার করে, আপাতত জানা সম্ভব হয়নি। তারা ভাষা ব্যবহার করলেও মানুষ তা সেখানে অবতরণ করামাত্র বুঝবে না। তবে তারা যদি প্রযুক্তিগত উন্নতি লাভ করে, তবে সে উন্নতি গণিত বাদ দিয়ে গড়ে ওঠা সম্ভব নয়— এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। কার্যত দৃশ্যমান ভৌতজগতে বিরাজমান বস্তুরাজীর মৌলিক গুণাবলী সর্বত্র একরকম— আমাদের ধারণা সাপেক্ষে। পৃথিবীতে বসে আমরা বস্তুজগতের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে বস্তুরাজীর পরিমান যেভাবে নির্ণয় করি, সেসব অসৌরীয় যেকোনও নক্ষত্রলোকে একরকম হওয়ার কথা। আমরা আপাতত সৌরজগতের বাইরের নক্ষত্রলোক সম্পর্কে শুধু এইটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি! বস্তুত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য-উপাত্ত সবই গণিত নির্ভর।
উল্লেখ্য আলফা সেন্টোরির যেকোনও একটি গ্রহে গিয়ে আমরা নিউটনের গতিতত্ত্বের সূত্র তিনটি পৃথিবীর মতোই অনুভব করবো: ১) স্থির বস্তু সর্বদা স্থির থাকতে চায়। বহ্যিক বল প্রয়োগ না করা পর্যন্ত বস্তু সর্বদা স্থির থাকে এবং বহ্যিক বল প্রয়োগ দ্বারা চলমান বস্তু বাধা প্রয়োগ না করা হলে চলতে থাকে। ২) বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার, উক্ত বস্তুর ওপরে প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক (F=m x a)। ৩) প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান প্রতিক্রিয়া (F1 = -F2) রয়েছে; ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল সমান ও বিপরিত।
উল্লেখিত ঘটনাগুলো আমরা পৃথিবীতে যেরকম দেখি, বস্তু দ্বারা গঠিত যেকোনও বিষয় মহাবিশ্বে বিরাজমান সকল নক্ষত্রজগতে সেরকমই দেখবো। বস্তুত পদার্থবিজ্ঞানের সকল সূত্র প্রতিটি জড় প্রসঙ্গকাঠামো বা পরস্পরের সাপেক্ষে সমবেগে চলমান প্রসঙ্গ কাঠামোতে একই থাকবে। তবে যেকোনও পর্যবেক্ষক সাপেক্ষে বা যেকোনও প্রসঙ্গ কাঠামোতে আলোর বেগ ধ্রুব। উল্লেখ্য চলমান রকেটে বসে কেউ একজন সামনের দিকে একটি বল নিক্ষেপ করলো। বাইরে থেকে একজন পর্যবেক্ষক নিক্ষেপ করা বলের গতি দেখবে রকেট + বলের গতি সাপেক্ষে। কিন্তু আলোর গতি যেকোনও প্রসঙ্গ কাঠামোতে সর্বদা সমান— এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল প্রতি সেকেন্ড— প্রতিবন্ধকতা না-থাকলে সবখানেই এক। এটাকে আইস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব বলে। মহাবিশ্বের যে কোনও প্রতিবন্ধকহীন প্রান্তে আলোর গতি সমান।
প্রসঙ্গত মহাবিশ্বে প্রাথমিক চারটি বল আছে; যথা : মহাকর্ষ বল, ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিজম, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল ও সবল নিউক্লিয়ার বল। এখনে শুধু মহাকর্ষ ছাড়া বাকি তিনটি বল আমরা স্টান্ডার্ড মডেল অব এলিমেন্টারি পার্টিকেল দ্বারা ব্যাখ্যা করতে পারি। কিন্তু মহাকর্ষ স্টান্ডার্ড মডেল দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। কেননা পার্টিক্যাল ফিজিক্সে ধারণাকৃত কণা ‘গ্রাভিটন’ এখনও প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে মহাকর্ষ সাধারণ অপেক্ষবাদ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। মহাকর্ষ মূলত কণাবাদী বল (Forces) কি-না, বলা না গেলেও স্থান-কালের বক্রতা যে এর কারণে ঘটে, তা মহাবিশ্বের সবপ্রান্তে সত্য। স্থান-কালের বক্রতার ফলে তুলনামূলক অল্প ভরের (Mass) বস্তু বড় ভরের দিকে নির্দিষ্ট গতিতে ছুটে যায়— দোতলা দিয়ে লাফ দিলে বাধা না-পড়লে যে কেউ মাটিতে এজন্য পড়ে। আর ওপর থেকে পড়ন্ত বস্তুর গতি নির্ভর করে তার পতন কতো ওপর থেকে হয়েছে। এটাকে আইস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব বলে আমরা ( পৃথিবীবাসী) জানি। কিন্তু মহাবিশ্বের অন্যান্য নক্ষত্রলোকে এই একই ধারণার ব্যতিক্রম ঘটে না, তাও বর্তমানে প্রমাণিত।
সুতরাং সাধারণ অপেক্ষবাদ বলতে আইনেস্টাইন যা বুঝিয়েছেন, তা মহাবিশ্বের কোথাও অনুপস্থিত কখনও ছিলো না। বরং তিনি জানার আগেই তা বস্তুজগতের সাথে জড়িত। আর সাধারণ অপেক্ষবাদের সাথে গণিত অঙ্গাঙ্গি যুক্ত। উপরুল্লেখিত পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রগুলো মূলত বুদ্ধিমান প্রাণী মহাবিশ্বের যেকোনও স্থানে একই রকম পর্যবেক্ষণ করবে। তদুপরি এসবের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে গণিতের সহায়তা পূর্বশর্ত। নইলে বস্তুজগতে বিরাজমান কোনোটার পরিমান নির্ণয় করা সম্ভব না।
উল্লেখ্য দুই + দু’টি বস্তু একটি পাত্রে রাখা হলে, যেকোনও বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণী সেই পাত্রে চারটি বস্তুর অস্তিত্ব দেখবে। সেখান থেকে একটিকে সরানো হলে উক্ত পর্যবেক্ষক পাত্রটিতে তিনটি বস্তু দেখতে পাবে। কিন্তু প্রকৃতিতে দুই অথবা চার ইত্যাদি যাবতীয় সংখ্যার বস্তু নিরপেক্ষ কোনও অস্তিত্ব নাই। তদ্রূপ ২+২=৪ অথবা ৪ – ১ = ৩ এমন কোনও সূত্র বস্তুজগতের কোথাও খোদাই করা নাই বা দেখা যায় না। কিন্তু উক্ত সংখ্যাগুলোর অস্তিত্ব বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষ বস্তুর অস্তিত্বের সাথে কল্পনা করে। সুতরাং ধরে নেওয়া যায়, সংখ্যা ও এর দ্বারা সৃষ্ট গণিত মহাবিশ্বের যেকোনোও প্রান্তে ভাব বিনিময়ের মাধ্যম হওয়া সম্ভব।
বস্তুর অস্তিত্বের সাথে সংখ্যা ও হিসাবের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। বস্তুর অস্তিত্বের অভিজ্ঞতা সংখ্যার ধারণা দেয় এবং সংখ্যা দিয়ে হিসাবনিকাশ বা গণিত হয়। সংখ্যায় গঠিত অঙ্ক যুক্তির প্রতীকীরূপ। অনেক বড় সংজ্ঞা ছোট একটি গাণিতিক সমীকরণ দ্বারা খুব সহজে বোধসাধ্য করা যায়। সংখ্যা গণিতের একক, যা প্রতিটি বস্তুর যৌক্তিক চিন্তার সহযাত্রী। তাই দু’জন আন্তনক্ষত্রীয় বুদ্ধিমান সত্ত্বার পারস্পরিক ভাব বিনিময় কেবল সংখ্যায় গঠিত গাণিতিক নিয়মের আদান-প্রদানের দ্বারা সম্ভব।
মহাবিশ্বে যেখানে পদার্থের অস্তিত্ব আছে, সেখানে ভাষা না থাকলেও অঙ্ক আছে— সংখ্যা বস্তুজ্ঞানের অবিচ্ছিদ্য অংশ, একটি বস্তুর উল্লেখ হলেই এর পরিমান, পরিমাপ, কাল, স্থান, ভর ইত্যাদি নানান ধারণা আসে। আর এই ধারণার নামই হিসাব বা অঙ্ক। যেকোনও বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণী বস্তুজগতের যেখানে পা রাখবে, সেখানে সংখ্যা ও গণিতের দেখা পাবে। অতএব অসৌরীয় কোনও জগতে মানুষ কখনও গেলে, সেখানে যদি সে কোনও বুদ্ধিমান প্রাণীর সাক্ষাৎ পায়, তবে তাদের সাথে যোগাযোগ করার একমাত্র প্রায়োগিক দিক হবে গণিত। কেননা তারা মানবসদৃশ হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তদ্রূপ যোগাযোগের জন্য তারা ভাষা কিংবা শারীরিক ইশারা ব্যবহার করবে, তাও বলা যায় না। উদাহরণ স্বরূপ: সৌরজগতের নিকটতম নক্ষত্রজগতের নাম আলফা সেন্টোরি। ঐ জগত মূলত তিন তারকা বাইনারি স্টার সিস্টেম— আলফা সেন্টোরি-এ/বি/সি। এদের মধ্যে সূর্যের সবচে’ কাছের নক্ষত্রের নাম আলফা সেন্টোরি-সি বা প্রোক্সিমা সেন্টোরি। সূর্য থেকে ওটার দূরত্ব ৪.৩৬ আলোকবর্ষ। জানা গেছে যে, সেই জগতের প্রত্যেকটি নক্ষত্র কেন্দ্র করে নানান আকার ও ভরের গ্রহ আবর্তন করছে— সৌরজগতের ন্যায় আলফা সেন্টোরির প্রতিটি নক্ষত্রের নিজস্ব জগত আছে। প্রোক্সিমা সেন্টোরি নক্ষত্র থেকে মাত্র ৭০-লক্ষ কিমি: দূরে পৃথিবীসদৃশ একটি গ্রহের সন্ধান মিলেছে, যেখানে প্রবাহমান পানির অস্তিত্ব আছে।
২০১৬-সালের ২৫-অগাস্ট ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের করা এই তথ্য প্রকাশিত হয়। উক্ত গ্রহের নাম রাখা হয় প্রোক্সিমা-বি। মহাকাশে স্থাপিত নভদুরবিন হাবল থেকে প্রাপ্ত প্রক্সিমার ছবি বিশ্লেষণ করে নক্ষত্রটি সম্পর্কে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। পুরো আলফা সেন্টোরি তারকাজগতের চৌহর্দি সৌরজগতের চেয়ে কম হলেও আড়াই থেকে তিনগুণ বড়। আর এতোবড় নক্ষত্র পরিবারে কোনও বুদ্ধিমান প্রাণী নেই, জোর দিয়ে বলা যাবে না। উক্ত অসৌরীয় গ্রহগুলোর (Exoplanet) যেকোনও একটিতে যদি বুদ্ধিদীপ্ত এলিয়েন বাস করে, তবে তারা নিশ্চয়ই হিসাব, পরিমাপ ও আকৃতি ইত্যাদি জানে ও বোঝে। হয়তো সেগুলো প্রকাশ করতে আমরা যেসব প্রতীক সংখ্যা ব্যবহার করি, তেমন নাও হতে পারে।
তথাপি বুদ্ধির সাথে হিসাবের যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে, সেটা তাদের আচরণে অবশ্যই সেখানে অবতরণ করা পৃথিবীর নভোচারীরা বুঝবে। কিন্তু সেখানে বসবাসরত বুদ্ধিমান প্রাণীরা (যদি থাকে) নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ভাষা না অন্যকিছু ব্যবহার করে, আপাতত জানা সম্ভব হয়নি। তারা ভাষা ব্যবহার করলেও মানুষ তা সেখানে অবতরণ করামাত্র বুঝবে না। তবে তারা যদি প্রযুক্তিগত উন্নতি লাভ করে, তবে সে উন্নতি গণিত বাদ দিয়ে গড়ে ওঠা সম্ভব নয়— এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। কার্যত দৃশ্যমান ভৌতজগতে বিরাজমান বস্তুরাজীর মৌলিক গুণাবলী সর্বত্র একরকম— আমাদের ধারণা সাপেক্ষে। পৃথিবীতে বসে আমরা বস্তুজগতের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে বস্তুরাজীর পরিমান যেভাবে নির্ণয় করি, সেসব অসৌরীয় যেকোনও নক্ষত্রলোকে একরকম হওয়ার কথা। আমরা আপাতত সৌরজগতের বাইরের নক্ষত্রলোক সম্পর্কে শুধু এইটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি! বস্তুত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য-উপাত্ত সবই গণিত নির্ভর।
উল্লেখ্য আলফা সেন্টোরির যেকোনও একটি গ্রহে গিয়ে আমরা নিউটনের গতিতত্ত্বের সূত্র তিনটি পৃথিবীর মতোই অনুভব করবো: ১) স্থির বস্তু সর্বদা স্থির থাকতে চায়। বহ্যিক বল প্রয়োগ না করা পর্যন্ত বস্তু সর্বদা স্থির থাকে এবং বহ্যিক বল প্রয়োগ দ্বারা চলমান বস্তু বাধা প্রয়োগ না করা হলে চলতে থাকে। ২) বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার, উক্ত বস্তুর ওপরে প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক (F=m x a)। ৩) প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান প্রতিক্রিয়া (F1 = -F2) রয়েছে; ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল সমান ও বিপরিত।
উল্লেখিত ঘটনাগুলো আমরা পৃথিবীতে যেরকম দেখি, বস্তু দ্বারা গঠিত যেকোনও বিষয় মহাবিশ্বে বিরাজমান সকল নক্ষত্রজগতে সেরকমই দেখবো। বস্তুত পদার্থবিজ্ঞানের সকল সূত্র প্রতিটি জড় প্রসঙ্গকাঠামো বা পরস্পরের সাপেক্ষে সমবেগে চলমান প্রসঙ্গ কাঠামোতে একই থাকবে। তবে যেকোনও পর্যবেক্ষক সাপেক্ষে বা যেকোনও প্রসঙ্গ কাঠামোতে আলোর বেগ ধ্রুব। উল্লেখ্য চলমান রকেটে বসে কেউ একজন সামনের দিকে একটি বল নিক্ষেপ করলো। বাইরে থেকে একজন পর্যবেক্ষক নিক্ষেপ করা বলের গতি দেখবে রকেট + বলের গতি সাপেক্ষে। কিন্তু আলোর গতি যেকোনও প্রসঙ্গ কাঠামোতে সর্বদা সমান— এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল প্রতি সেকেন্ড— প্রতিবন্ধকতা না-থাকলে সবখানেই এক। এটাকে আইস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব বলে। মহাবিশ্বের যে কোনও প্রতিবন্ধকহীন প্রান্তে আলোর গতি সমান।
প্রসঙ্গত মহাবিশ্বে প্রাথমিক চারটি বল আছে; যথা : মহাকর্ষ বল, ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিজম, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল ও সবল নিউক্লিয়ার বল। এখনে শুধু মহাকর্ষ ছাড়া বাকি তিনটি বল আমরা স্টান্ডার্ড মডেল অব এলিমেন্টারি পার্টিকেল দ্বারা ব্যাখ্যা করতে পারি। কিন্তু মহাকর্ষ স্টান্ডার্ড মডেল দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। কেননা পার্টিক্যাল ফিজিক্সে ধারণাকৃত কণা ‘গ্রাভিটন’ এখনও প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে মহাকর্ষ সাধারণ অপেক্ষবাদ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। মহাকর্ষ মূলত কণাবাদী বল (Forces) কি-না, বলা না গেলেও স্থান-কালের বক্রতা যে এর কারণে ঘটে, তা মহাবিশ্বের সবপ্রান্তে সত্য। স্থান-কালের বক্রতার ফলে তুলনামূলক অল্প ভরের (Mass) বস্তু বড় ভরের দিকে নির্দিষ্ট গতিতে ছুটে যায়— দোতলা দিয়ে লাফ দিলে বাধা না-পড়লে যে কেউ মাটিতে এজন্য পড়ে। আর ওপর থেকে পড়ন্ত বস্তুর গতি নির্ভর করে তার পতন কতো ওপর থেকে হয়েছে। এটাকে আইস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব বলে আমরা ( পৃথিবীবাসী) জানি। কিন্তু মহাবিশ্বের অন্যান্য নক্ষত্রলোকে এই একই ধারণার ব্যতিক্রম ঘটে না, তাও বর্তমানে প্রমাণিত।
সুতরাং সাধারণ অপেক্ষবাদ বলতে আইনেস্টাইন যা বুঝিয়েছেন, তা মহাবিশ্বের কোথাও অনুপস্থিত কখনও ছিলো না। বরং তিনি জানার আগেই তা বস্তুজগতের সাথে জড়িত। আর সাধারণ অপেক্ষবাদের সাথে গণিত অঙ্গাঙ্গি যুক্ত। উপরুল্লেখিত পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রগুলো মূলত বুদ্ধিমান প্রাণী মহাবিশ্বের যেকোনও স্থানে একই রকম পর্যবেক্ষণ করবে। তদুপরি এসবের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে গণিতের সহায়তা পূর্বশর্ত। নইলে বস্তুজগতে বিরাজমান কোনোটার পরিমান নির্ণয় করা সম্ভব না।
উল্লেখ্য দুই + দু’টি বস্তু একটি পাত্রে রাখা হলে, যেকোনও বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণী সেই পাত্রে চারটি বস্তুর অস্তিত্ব দেখবে। সেখান থেকে একটিকে সরানো হলে উক্ত পর্যবেক্ষক পাত্রটিতে তিনটি বস্তু দেখতে পাবে। কিন্তু প্রকৃতিতে দুই অথবা চার ইত্যাদি যাবতীয় সংখ্যার বস্তু নিরপেক্ষ কোনও অস্তিত্ব নাই। তদ্রূপ ২+২=৪ অথবা ৪ – ১ = ৩ এমন কোনও সূত্র বস্তুজগতের কোথাও খোদাই করা নাই বা দেখা যায় না। কিন্তু উক্ত সংখ্যাগুলোর অস্তিত্ব বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষ বস্তুর অস্তিত্বের সাথে কল্পনা করে। সুতরাং ধরে নেওয়া যায়, সংখ্যা ও এর দ্বারা সৃষ্ট গণিত মহাবিশ্বের যেকোনোও প্রান্তে ভাব বিনিময়ের মাধ্যম হওয়া সম্ভব।