বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ৪০টি ম্যাচের মধ্যে জিতেছে বাংলাদেশ ১৪টিতে। ২০০৩ বিশ্বকাপের হতাশা বাদ দিলে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চের অবশিষ্ট প্রতিটি আসরেই অন্তত একটি ফেভারিট দলকে হারানোর গর্ব আছে বাংলাদেশের। তবে ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিশ্বকাপে ব্যতিক্রর্মী গল্প রচনা করেছে বাংলাদেশ দল। এক আসরে একাধিক ফেভারিটকে হারানোর প্রথম এবং একমাত্র কৃতিত্ব এই একটি আসরেই দেখাতে পেরেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সময়ের সেরা দল ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে পর্যুদস্ত করেছে বাংলাদেশ সেই আসরে। ২০০৭ বিশ্বকাপের সেই আসর কভারের স্মৃতিচারণ করেছেন ক্রীড়া সাংবাদিক শামীম চৌধুরী।
‘বি’ গ্রুপে ভারত, শ্রীলঙ্কার পাশে বাংলাদেশ, বারমুডা। বিশ্বকাপে গ্রুপিংটা এমনভাবেই করা হয়েছিল যেন গ্রুপ রাউন্ডেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। দ্বিতীয় রাউন্ড জমিয়ে তোলার জন্য সেবারের বিশ্বকাপের ফরম্যাটে পরিবর্তন এনে প্রথম বারের মতো ২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইট পর্ব প্রবর্তন করেছে আইসিসি। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ভারত, সেমিফাইনালিস্ট শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারবে না বাংলাদেশ দল—তা ধরেই নিয়েছিল সবাই। ঐ আসরকে সামনে রেখে খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, এমনকি বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীদেরও। বারমুডাকে হারিয়ে ত্রিনিদাদেই শেষ হয়ে যাবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। সেভাবেই বাংলাদেশ দলের দেশে ফেরার রিটার্ন টিকিটও আগে থেকে ঠিক করা ছিল।
বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিটি আইল্যান্ডের সময়ের ব্যবধান ১০ ঘণ্টা। পত্রিকার হয়ে সেই বিশ্বকাপ কভার করা ছিল তাই প্রিন্ট মিডিয়া থেকে সেবার বিশ্বকাপ কভার করা পাঁচ ক্রীড়া সাংবাদিকের জন্য মহা চ্যালেঞ্জ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সময় সকাল ১০টায় ম্যাচ শুরু, বাংলাদেশে তখন রাত ৮টা! তখন পত্রিকার মেকআপ শেষ হয়ে ছাপার জন্য প্রস্তুত হবে। ম্যাচের আগের দিনের অনুশীলন দেখে, দুপুরে অফিসিয়াল প্রেস কনফারেন্স কভার করে প্রিভিউ রিপোর্ট লিখবেন যখন, তখন বাংলাদেশে মধ্যরাত। অর্থাৎ এই রিপোর্ট ছাপা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রিভিউ রিপোর্টটা তৈরি করতে হবে আগে-ভাগে! বাংলাদেশ সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে নিউজ প্রেরণে ক্যারিবিয়ান সফরে একটি রাতেও পারিনি ঘুমুতে।
ঢাকা থেকে সকালে দোহার ফ্লাইট, দোহার ১১ ঘণ্টা ট্রানজিটে বিনা ভিসায় দোহা ঘুরে দেখা, হোটেলে সময় কাটিয়ে মধ্য রাতে লন্ডনের ফ্লাইটে ওঠা, লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরে নেমে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস করে সাড়ে ১১ ঘণ্টার ফ্লাইটে টোবাগো! সেখান থেকে দ্রুতগামী ফেরিতে করে ক্যারিবিয়ান সী পাড়ি দিয়ে ত্রিনিদাদে। আকাশ এবং সমুদ্র পথ মিলিয়ে ৪৬ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে ভ্রমণ ক্লান্তিতে লেখার ধৈর্যই থাকার কথা নয়। অথচ, ত্রিনিদাদে নেমে নিজেদের বুকিং করা হোটেলের দিকে না যেয়ে, কোনো রেস্টুরেন্টে খাবার না খেয়ে লাগেজ নিয়ে সোজা চলে গেছি টিম হোটেলে প্রিভিউ রিপোর্টের মাল মসল্লা জোগাড় করতে। ত্রিনিদাদ হিল্টনে বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট দল একই ফ্লোরে। লবি-ডাইনিংয়ে হাবিবুল-মাশরাফি-আশরাফুলদের সঙ্গে শচীন-সৌরভ-দ্রাবিড়দের দেখা হয়, হাই-হ্যালো হয়। ভারতের বড় বড় স্টারদের সঙ্গে আমাদের ক্রিকেটারদের দেখা-সাক্ষাত্টাই তখন অনেক বড় ব্যাপার। হিল্টন হোটেল থেকে টিম ম্যানেজমেন্টের অনুমতি নিয়ে দ্রাবিড়-হাবিবুলের সংক্ষিপ্ত ইন্টারভিউ নিয়ে নিজেদের হোটেলে পৌঁছে চেকইন করতে করতে রাত অনেক হয়ে গেছে। না ঘুমিয়ে ঐ রাতে তিন-চারটা রিপোর্ট ই-মেইলে পাঠিয়ে ভোরে পেলাম দুঃসংবাদ। খুলনায় সড়ক দুর্ঘটনায় মানজারুল ইসলাম রানা এবং সাজ্জাদুল হাসান সেতুর জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। পর পর দুই রাত কেটে গেছে আকাশে, এক রাত নির্ঘুম কেটেছে রিপোর্ট লিখতে। ভোরের ঘুম কেড়ে নিয়েছে মানজারুল-সেতুর মৃত্যুশোক। মানজারুল রানার থাকার কথা ছিল বিশ্বকাপ দলে। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের নায়ক এই বাঁ হাতি স্পিন অলরাউন্ডার ছিলেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রাথমিক স্কোয়াডে। বিশ্বকাপ দলে বাঁ হাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাক এবং উদীয়মান বাঁ হাতি স্পিন অলরাউন্ডার সাকিবের জায়গা হওয়ায় ১৫ জনের দলে জায়গা হয়নি মানজারুল রানার। সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে মাত্র ২১ বছর বয়সে মানজারুল ইসলাম রানার মৃত্যুশোক কতোটা আচ্ছন্ন করেছে ক্রিকেট দলকে, তা দেখতে এবং রিপোর্ট করতে প্রথমে ছুটে গেলাম টিম হোটেলে, পরে সেখান থেকে অনুশীলন ভেন্যু কুইন্স পার্ক ওভালে। বাংলাদেশ দলের কোনো ক্রিকেটারের অনুশীলনে মন নেই। সবার মুখ ফ্যাকাশে। সম বয়সী বন্ধু মানজারুলের মৃত্যুশোকে একটু বেশিই ভেঙে পড়েছেন মাশরাফি। কাঁদছেন ডুকরে ডুকরে।
এমন একটা পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপে হট ফেভারিট ভারতের বিপক্ষে খেলবে কী করে বাংলাদেশ দল? এটাই ছিল শঙ্কা। ম্যাচে জয়-পরাজয়ের চেয়েও তখন বড় কথা বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে মানজারুল রানার শোকটা জানিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজার আলী আসিফ খান তখন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির সদস্য সচিব। আমার অনুরোধে আইসিসিকে বলে কালো ব্যাজ ধারণ করে ম্যাচের আগে এক মিনিট নীরবতা পালনে উনি একটা ভূমিকা রেখেছিলেন। কুইন্স পার্ক ওভালের প্রেসবক্সে ঢুকেই পেলাম আইসিসির অফিসিয়াল শুভ্যেনির। যেখানে মানজারুল রানার ছবিসহ প্রোফাইল ছাপা হয়েছে। বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলের সবার সঙ্গে আছেন তিনিও। অথচ, তিনি নেই। চলে গেছেন চিরদিনের জন্য।
বন্ধুকে হারানোর সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করেছেন মাশরাফি (৪/৩৮)। ইনিংসের তৃতীয় এবং নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে মাশরাফির আউট সাইড অব ডেলিভারি কাটার হয়ে উড়িয়ে দিয়েছে শেভাগের স্ট্যাম্প! মাশরাফির চতুর্থ ওভারে উথাপ্পা দিয়েছেন পয়েন্টে ক্যাচ। প্রথম স্পেলে (৭-২-২০-২) এই দুটি শিকারের পর শেষ স্পেলে (২.৩-০-১৮-২) আগারকার, মুনাফ প্যাটেলকে করেছেন বিদায় মাশরাফি। ইনিংসের মাঝে বাঁ হাতি স্পিনার রাজ (৩/৩৮) এবং রফিকের (৩/৩৫) বোলিংও ছিল দেখার মতো। এই ত্রয়ীর বোলিং শচীন-সৌরভ-দ্রাবিড়-শেবাগ, গম্ভীরদের ভারতকে মাত্র ১৯১ রানে অল আউট করেছে বাংলাদেশ দল। জহির খান, আগারকার, হরভাজন সিংয়ের বোলিংয়ের জবাব দিয়ে বাকি দায়িত্বটা পালন করেছেন তিন তরুণ তামিম (৫১), সাকিব (৫৩), মুশফিক (৫৬*)। ঐ একটি জয়ই বিশ্বকাপে ফেলেছে শোকের ছায়া। ভারতের বিদায়ে স্তব্ধ হয়েছে আইসিসি। বাংলাদেশের কাছে হেরে যাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে ভারত অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় এবং ভারতের তত্কালীন অস্ট্রেলিয়ান কোচ গ্রেগ চ্যাপেলকে পড়তে হয়েছে ভারত মিডিয়ার তোপের মুখে। একটি প্রশ্ন ছিল—‘ বিশ্বকাপে এই হারের পর দেশে কী তোমরা নিরাপদে ফিরতে পারবে?’ সংবাদ সম্মেলনে ঐ রিপোর্ট ছাপা হওয়ার পর ধোনির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ হয়েছে।
আইসিসির সব হিসেব উলটে দিয়ে প্রথম বারের মতো গ্রুপ রাউন্ডের হার্ডল পেরিয়েছে বাংলাদেশ। আর সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিকীকরণ হয় যে দলটিকে ঘিরে, সেই ভারত বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপ রাউন্ডেই নিয়েছে বিদায়! দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে বড় হারেও (১৯৮ রান) বাংলাদেশকে পড়তে হয়নি দুশ্চিন্তায়। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে বারমুডাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে এই প্রথম বিশ্বকাপে রাউন্ডের হার্ডল পেরিয়েছে বাংলাদেশ দল। উঠেছে সুপার এইটে। গ্রুপ রাউন্ডে ভারতের বিদায়ে বিশ্বকাপকে ঘিরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর্যটন ব্যবসায় নেমেছে ধস। যে হোটেল রুমের এক রাতের ভাড়া ছিল ২৫০ ডলার, তা নেমে এসেছে ১৩০ ডলারে, ১৩০ ডলারের রেস্ট হাউজের রুম রেন্ট নেমে এসেছে ৮০ ডলারে! এক আইল্যান্ড থেকে অন্য আইল্যান্ডের ফ্লাইট ভাড়াও গেছে কমে। সুপার এইট, সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে ভারতের সম্ভাব্য ম্যাচগুলো দেখতে বিশেষ প্যাকেজ বুকিং করেছিলেন যারা, ভারতের বিদায়ে তাদের অধিকাংশ আসেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজে। বারবাডোজে বলিউড সুপার স্টার দম্পতি অক্ষয়-টুইঙ্কেলের সঙ্গে দেখা হলো একটি শপিং মলে। ভারত-ইংল্যান্ডের সম্ভাব্য ম্যাচ দেখবেন বলে প্যাকেজ কিনে বারবাডোজে এসে দেখেছেন তারা বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ! ইন্টারভিউতে সেই অসন্তোষের কথা প্রকাশ করেছিলেন তারা।
সুপার এইটে তেমন প্রত্যাশা ছিল না বাংলাদেশ দলের। অনেকেই বলছিল—‘বাংলাদেশ খামোখা সুপার এইটে উঠছে।’ সুপার এইটে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে সন্তুষ্টি নিয়ে দেশে ফেরার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ দলের। তবে প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। এন্টিগায় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে গায়ানায় এসে অন্য এক বাংলাদেশ দল হাজির। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে মিডিয়াকে পর্যটকের চোখেই দেখেছে বিশ্বকাপের লোকাল অর্গানাইজিং কমিটি (এলওসি)।
বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেয়নি তারা। মিডিয়া সেন্টারে পর্যন্ত একদিনের ওয়াইফাই ইন্টারনেট কিনতে হতো ২৫ ডলার দিয়ে। গায়ানায় ইন্টারনেট সুবিধা দিতে পারবে না, এ ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছিল এলওসি! তার পরও নিয়েছিলাম ঝুঁকি। গায়ানায় পৌঁছে তো অবাক। বিমানবন্দর থেকে নেমে তাদের গণপরিবহন মাইক্রোতে উঠে হাই ভলিউমে হিন্দি গান শুনতে পেলাম। সিনেমা হলগুলোতে চলছে হিন্দি ছবি। এই দেশটির নাকি ৬০ শতাংশ অধিবাসী ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তখন দেশটির প্রেসিডেন্টও ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ব্রাজিলের প্রতিবেশী এই দেশটিকে ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জের অংশ কেন করা হলো, তা বুঝতেই পারছি না। এখানকার আবহাওয়া বাংলাদেশের মতো। তরতাজা পুঁইশাক, লালশাক, পালং শাক—বাংলাদেশের সব তরকারির দেখা পেলাম এখানে। খাল-বিল, নদীর মাছ রাস্তাঘাটেও বিক্রি হচ্ছে। গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামের উইকেটের চেহারাও মিরপুরের মতো। দর্শক যারা এসেছিলেন, তারাও সবাই বাংলাদেশের সমর্থক! ঢাকা থেকে ১৮ হাজার কিলোমিটার দূরে এসেও যেন চেনা পরিবেশ। এতেই চাঙ্গা বাংলাদেশ দল।
সে সময়ে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে নাম্বার ওয়ান দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ার ৪৩৫ রানের চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিয়ে অবিশ্বাস্য জয় নিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফিতে চোখ রাখা দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাটিতে নামিয়েছেন আশরাফুল অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে। ক্যালিস, পোলক, এনটিনি, নেল, ল্যাঙ্গাভেল্ট, কেম্পের মতো সময়ের সেরা বোলারদের স্কুপ, প্যাডেল স্কুপে আশরাফুল করেছেন হতভম্ব। আশরাফুল শো-তে বাংলাদেশ করেছে ২৫১/৮ স্কোর। এক পর্যায়ে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৮৪/৪। সেখান থেকে পঞ্চম উইকেট জুটিতে আফতাবকে নিয়ে ৭৬ রানে চ্যালেজিং স্কোরের আবহ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। ক্যালিসকে এক ওভারে পর পর ২ বলে ফাইন লেগ এবং স্কোয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি মেরে আশরাফুল পেয়েছেন ছন্দ। এনটিনিকে এক ওভারে ৩টি বাউন্ডারির একটি তার মাথার উপর দিয়ে, পরেরটি প্যাডেল স্কুপ, শেষটি পয়েন্ট দিয়ে! ডেথ ওভারে ল্যাঙ্গাভেল্টের ২টি ইয়র্কার ডেলিভারির সাজা দিয়েছেন আশরাফুল পয়েন্ট এবং ফাইন লেগ দিয়ে স্কুপ শটে বাউন্ডারি দিয়ে।
শেষ ওভারে ১৩ রান কঠিন মনে হয়নি তার কাছে। তবে শেষ ওভারের প্রথম বলে আন্দ্রে নেলকে ফুলটস ডেলিভারিতে স্কুপ শটে ছক্কা মারতে ক্যাচ দিয়ে আসতে হলো আশরাফুলকে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরির সুযোগটা হাতছাড়া হলো। ৮৩ বলে ১২ বাউন্ডারিতে আশরাফুলের ৮৭ রানের ইনিংস এবং বাংলাদেশের স্কোর ২৫১/৮ দেখে পাকিস্তান লিজেন্ডারি ওয়াসিম আকরাম কমেন্ট্রিতে বলেছিলেন—‘এ তো দেখি বাংলাদেশের মতো স্লো উইকেট, আউটফিল্ড। জয়ের জন্য এই পুঁজি যথেষ্ট।’ তার পূর্বানুমান ঠিকই ছিল। স্মিথ, বাউচার, গিবস, ক্যালিস, কেম্প, পোলক, প্রিন্সের মতো লম্বা ব্যাটিং লাইন আপকে সেদিন হতে হয়েছে বিধ্বস্ত। রাজ (২৩/২৫), রাসেল (২/৪১), সাকিবের (২/২৬) বোলিংয়ে ৬৭ রানে জিতে সেরা আপসেটের জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ দল। প্রচলিত রেওয়াজ ভেঙে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য সেই জয় শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আশরাফুল কথা বলেছেন মাঠের মধ্যে! আইসিসির মিডিয়া ম্যানেজার পর্যন্ত সেই সংবাদ সম্মেলন রেকর্ড করেছেন! গায়নায় সেই জয়ের পর আশরাফুলের কদর গেছে বেড়ে।