মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের স্ত্রী রোসমাহ মনসুরকেও এবার ঘুষগ্রহণ মালমলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। দেশটির হাইকোর্টে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষগ্রহণের মাললায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টম্বর) দেশটির হাইকোর্টের একজন বিচারক সারাওয়াকের একটি সৌর শক্তি প্রকল্পের সাথে যুক্ত মোট ১৯৪ মিলিয়ন রিঙ্গিত (৪০৯৫.৩৪ মিলিয়ন টাকা) তিনটি অভিযোগে সাবেক ফার্স্ট লেডিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের স্ত্রী রোসমাহ মানসর ঘুষ চাওয়া ও গ্রহণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এর জন্য তার ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ঘুষের পরিমাণের পাঁচগুণ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
এর আগে সারাওয়াকের একটি সৌর শক্তি প্রকল্পের সাথে যুক্ত মোট ১৯৪ মিলিয়ন রিঙ্গিত (৪০৯৫.৩৪ মিলিয়ন টাকা) তিনটি অভিযোগের জন্য দোষী নন। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টম্বর) হাইকোর্টের একজন বিচারক ওইসব অভিযোগে প্রাক্তন ফার্স্ট লেডিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
তার স্বামী নাজিব দুর্নীতির দায়ে ১২ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে শুরু করার কয়েকদিন পর এই রায় আসে।
এর আগে মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের স্ত্রী ঘুষ চাওয়া ও গ্রহণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
গত মাসের শেষ দিকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিপুল পরিমাণ অর্থ কেলেঙ্কারির মামলায় মালয়েশিয়ায় দু’মেয়াদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ১২ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। পরে তাকে জেলে প্রেরণ করা হয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিলের (ওয়ানএমডিবি) অর্থ কেলেঙ্কারির প্রথম মামলায় ২০২০ সালে নাজিব রাজাককে ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং ২১০ মিলিয়ন রিঙ্গিত জরিমানা করেছিলেন আদালত। সুপ্রিম কোর্ট ওই রায় বহাল রাখে।
হাইকোর্টের রায় সঠিক ছিল বলে সর্বসম্মতভাবে মালয়েশিয়ার সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি বেঞ্চ রায়ে ঘোষণা দিয়েছেন।
আপিলের রায়ে ১২ বছরের সাজা নিশ্চিত হওয়ার পর নাজিব রাজাককে দেশটির কাজাং জেলখানায় প্রেরণ করা হয়। এ সময় জেলখানার ফটকে তার অনুসারীদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। তারা বিষণ্ণ ও কান্নারত অবস্থায় নাজিবের সাথে অন্যায় হয়েছে বলে দাবি করেন।
বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে নাজিব রাজাকের স্ত্রীর বিরুদ্ধেও মামলা চলছিল। ৭০ বছর বয়সী তার বিলাসবহুল পণ্য এবং গহনা প্রেমের জন্য পরিচিত। মালয়েশিয়ার পুলিশ যখন ২০১৮ সালে এই দম্পতির সম্পত্তিতে অভিযান চালায়। তখন তারা একটি ১৬ লাখ ডলার মূল্যে সোনা এবং হীরার নেকলেস, ১৪টি টিয়ারা এবং ২৭২টি হার্মিস ব্যাগ পেয়েছিল।
২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় নতুন অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ (ওয়ানএমডিবি) তহবিলটি গঠন করা হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৫ সালে ব্যাংক ও শেয়ারহোল্ডারদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে এই তহবিলের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে, তহবিল থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার অবৈধভাবে আত্মসাৎ করে তা ব্যক্তিগত হিসাবে হস্তান্তর করা হয়েছে।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নাজিব রাজাক ও তার জোটের ঐতিহাসিক পরাজয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রাখে ওয়ানএমবিডি আর্থিক কেলেঙ্কারি। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসেন দেশটির আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র দু‘মাসের মধ্যে নাজিবের বিরুদ্ধে প্রতারণার তিনটি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি অভিযোগ আনা হয়। সব মিলে তার বিরুদ্ধে মোট ৪২টি অভিযোগ আনা হয়। এর বেশিরভাগই ওয়ানএমবিডি তহবিল সংক্রান্ত।
১৯৭৬ সালে তার প্রয়াত বাবা, দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী আবদুল রাজাক হোসেনের মৃত্যুর পর প্রথম পেকান আসনে ২৩ বছর বয়সে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নাজিব রাজাক জয়ী হন। দু‘বছর পর তিনি উপমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৮২ এবং ১৯৮৬ সালের মধ্যে পাহাং-এর মেন্টেরি বেসার হয়েছিলেন তিনি, তারপরে তিনি বেশ কয়েকটি মন্ত্রিসভা পোর্টফোলিও অধিষ্ঠিত করেছিলেন।
নাজিব রাজাক ২০০৪ সালে আবদুল্লাহ আহমাদ বাদাভির উপ-প্রধানমন্ত্রী হন এবং ২০০৯ সালে তার স্থলাভিষিক্ত হন। দেশের ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠেন, ওই পদটি তিনি ২০১৮ সালের ৯ মে ১৪তম সাধারণ নির্বাচনে তার বারিসান ন্যাশনাল সরকার উৎখাত হওয়া পর্যন্ত ৯ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।