মিয়ানমারে একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজকে লক্ষ্য করে মেশিনগান থেকে গুলি করা হয়েছে। হামলায় একজন যাত্রী আহত হয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিমানের ফিউজিলাজ (বাইরের কাঠামো)। শনিবার (১ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৯টায় দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কায়াহর রাজধানী লোইকোতে ঘটে এ ঘটনা। এ হামলায় দেশটির কোনো এক বিদ্রোহী রাজনৈতিক দলের বাহিনী দায়ী বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষে থেকে। তবে একজন যাত্রী গুলিবিদ্ধ হলেও অন্যরা অক্ষত রয়েছেন।
জানা গেছে, উড়োজাহাজটি এ সময় প্রায় ১ হাজার মিটার (৩ হাজার ২৮০ ফুট) ওপরে ছিল এবং ৬৩ জন যাত্রী ছিলেন সেটিতে। তবে উড়োজাহাজটি নিরাপদে বিমানবন্দরে অবতরণে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ও মিয়ানমারভিত্তিক বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
হামলার শিকার উড়োজাহাজটি মিয়ানমারের সরকারি বিমান পরিষেবা সংস্থার অধীন। সামরিক বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, দূরপাল্লার মেশিনগান দিয়ে বিমানটিকে লক্ষ্য এলোপাতাড়ি গুলি চালানোর আলামত পাওয়া গেছে। হামলার সময় কয়েকটি গুলি ফিউসেলেজ (উড়োজাহাজের বাইরের কাঠামো) ভেদ করে কেবিনে ঢোকায় কোনো একটি গুলিতে আহত হয়েছেন ওই যাত্রী।লোইকোর বিমানবন্দরে অবতরণের পর আহত ওই যাত্রীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভারী মেশিনগানের গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজটিকেও মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে ওয়ার্কশপে।
এদিকে, বন্দুক হামলা সত্ত্বেও উড়োজাহাজটিকে লোইকোর বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হওয়া পাইলট ও কেবিন ক্রুদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন দেশটির ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন। পাশাপাশি বলেছেন, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে সরকার।
গ্লোবাল নিউ লাইট পত্রিকাকে জাও মিন তুন বলেন, ‘প্লেনের ফিউজিলাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একজন যাত্রী আহত হয়েছেন, তবে পাইলট ও কেবিন ক্রুরা যদি আতঙ্কিত হয়ে ঠিকমতো অবতরণ না করতে পারতেন, তাহলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারত। তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
পাশাপাশি আরো বলছি, যারা এই নিষ্ঠুর পরিকল্পনা ও হামলার সঙ্গে যুক্ত, নিরাপত্তা বাহিনী অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনবে।’
তিনি সরাসরি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করেননি। তবে সামরিক সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী কারেন্নি ন্যাশনাল প্রগ্রেসিভ পার্টির হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মিয়ানমারের কয়েকটি সরকারবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। সেসবের মধ্যে কারেন্নি ন্যাশনাল প্রগ্রেসিভ পার্টি অন্যতম। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় তিন প্রদেশ কারেন, কায়াহ ও কাচিনজুড়ে তাদের সংগঠন ও কার্যক্রম বিস্তৃত। তবে কারেন্নি ন্যাশনাল প্রগ্রেসিভ পার্টি বন্দুক হামলার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পার্টির শীর্ষ নেতা খু ড্যানিয়েল মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘কোনো ঘটনা ঘটলেই তার দায় চাপানো জান্তার স্বভাব। এবারও তারা তাই করছে। কিন্তু তাদের এই অভিযোগ সত্য নয়। কারণ আমাদের পার্টির সামরিক উইং আজ সকালে কোনো অপারেশনে যায়নি।’