গত ২৭ মে ভারতের ‘টাইমস নাও’ টেলিভিশন চ্যানেলে এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা মহানবী হজরত মোহাম্মদ সা: এবং তাঁর সহধর্মিণী উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা: সম্পর্কে নোংরা ভাষায় কটূক্তি করেন। এর কয়েকদিন পর একই রকম ভাষায় বিজেপির দিল্লি শাখার মিডিয়া বিভাগের প্রধান নবীন জিন্দাল টুইট করেন। এ অপ্রীতিকর ঘটনা ভারতসহ বিশ্বব্যাপী মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সভ্য সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের এ ধরনের কট্টর নোংরা ভাষ্য বিশ্বের দেড়শ’ কোটি মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। এ অসভ্য কথনে কত মোমিনের কলিজায় তীর বিঁধেছে, কত মুসলমান নীরবে নিভৃতে কেঁদেছেন তার হিসাব একমাত্র আল্লাহই জানেন। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় কোটি মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, নূপুরদের ঔদ্ধত্য এবং নোংরামির প্রতিবাদ করেছেন।
তারা নিজেদের জীবন বিপন্ন হলেও এত কষ্ট পেতেন না যে কষ্ট তারা হজম করছেন তাদের প্রাণের নবী সা:-এর ওপর কটূক্তি বচনে! পবিত্র কুরআন বলেছে, ‘নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর ও তাঁর স্ত্রীরা তাদের মাতা’ (৩৩ : ৬)। আসলে নবী সা: যে মুসলমানদের কতটুকু প্রিয়, রাসূলের প্রতি মোমিনদের ভালোবাসা যে কত গভীরে তার তলদেশ নূপুর শর্মাদের মতো অর্বাচীনরা কোনোদিনই অনুধাবন করতে পারবেন না। বরং নবী সা:-এর প্রতি ভালোবাসার উচ্চতা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নবী সা:-এর অনুসরণ করাকেই কুরআনে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার প্রতিফলন বলা হয়েছে (৩ : ৩১)। এমনকি আল্লাহ স্বয়ং নবী সা:-এর প্রতি ভালোবাসা ও সালাম প্রেরণ করেন এবং মুমিনদেরও নবী সা:-এর প্রতি সালাম ও দোয়া পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন (৩৩ : ৫৬)।
কাজেই এই মহান নবী সা:-এর প্রতি বিষোদগার কোটি মোমিনকে কাঁদিয়েছে, অনেকেই রাতের গভীরে ডুকরে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন! যে নবী সা:-কে গোটা বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছে (২১ : ১০৭), মানুষের ক্ষতির কারণে যিনি কষ্ট পেতেন, যিনি ছিলেন বিশ্ব মানবতার কল্যাণকামী (৯ : ১২৮) তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে কটূক্তি করা নিছক মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। না জেনেবুঝেই নবী সা:-এর চরিত্র নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে নূপুর শর্মারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন!
অথচ মহান সৃষ্টিকর্তা নিজে নবী সা:-কে শ্রেষ্ঠ স্বভাব-চরিত্রের অধিকারী বলে সনদ দিয়েছেন (৬৮ : ৪) এবং রাসূল সা:-কেই বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে (৩৩ : ২১)। কাজেই বোঝাই যাচ্ছেÑ এই নবী সা:-কে মুসলমানরা কত ভালোবাসেন! তারা প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত নামাজে তাঁকে স্মরণ করেন, তাঁর জন্য দোয়া করেন, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা পাঠান। তাছাড়া নামাজ না পড়া অনেক মুসলমানও রয়েছেন যারা সাময়িক পাপকাজে লিপ্ত থাকলেও নবী সা:-এর অপমানে অসহ্য বেদনায় বন্দুকের নলের সামনে হাসিমুখে বুক চিতিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়ে পড়েন! তাই তো ভারতে যখন বাবরি মসজিদ ভেঙেছে মুসলমানরা ব্যথিত হয়েছেন, গুজরাটে মুসলমানরা হত্যার শিকার হয়েছেন, গরু খাওয়ার জন্য তাদের মারা হয়েছে, হিজাব পরতে বাধা দেয়া হচ্ছে- ইত্যাদিতে মুসলিম উম্মাহ কষ্ট পেলেও ধৈর্য ধরেছেন। কিন্তু নবীজী সা:-এর চরিত্রের ওপর আক্রমণ দেড়শ’ কোটি মুসলমান মেনে নিতে পারেননি।
তারা প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। কারণ, মুসলমানদের নবী সা:-এর প্রতি অপবাদ কোনো দেশের সীমানার ভেতর গণ্ডিবদ্ধ থাকে না। এ আক্রমণ সারা বিশ্বের সব মুসলমানকেই আহত করে, তীব্র বেদনা দেয়। মুসলমান মায়ের সন্তান ভ‚মিষ্ট হয়েই যে নামটি শোনে, সারা জীবনের প্রতিটি দিন যে নামের চর্চা করে, ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে, দোয়া করে, স্বপ্নে দেখে, হাশরে সাক্ষাতের তীব্র আকাক্সক্ষা পোষণ করে এবং মদিনা মনোয়ারায় গিয়ে সালাম দেয়ার জন্য পাগলপারা হয়ে ছুটে যায় তারা কিভাবে এক অর্বাচীনের ন্যক্কারজনক কথন সহ্য করবে?
আল্লাহর আদেশে যে নবী সা: বিশ্ববাসীকে শান্তির দিকে আহ্বান করেছেন এবং আলো ছড়িয়েছেন (৩৩ : ৪৬), যিনি পৃথিবীকে সংবিধান প্রণয়ন থেকে শুরু করে সুন্দর সমাজ গঠনের শিক্ষা দিয়েছেন, অন্ধকারে নিমজ্জিত বিশ্ব মানবতাকে সভ্যতা শিখিয়েছেন সেই সভ্য সমাজেরই এক অসভ্য নারী তাঁকে কটূক্তি করার ধৃষ্টতা দেখিয়ে সভ্য সমাজের করুণার পাত্রীতে পরিণত হয়েছেন! যে রাসূল সা: সারাটি জীবন মানুষের কথা ভেবেছেন, সহায়-সম্পদ ও সাম্র্রাজ্যের প্রস্তাব পায়ে ঠেলে দিয়েছেন, দিন-রাত মানুষের শান্তির জন্য কাজ করেছেন, বিপ্লবের সফলতার পর তাঁকে হত্যা চেষ্টাকারী চরম শত্রুকে পরম ভালোবাসায় ক্ষমা করে দিয়েছেন সেই মানুষটিকেই বিনা উসকানিতে কলঙ্কিত করার চেষ্টা সংশ্লিষ্টদের জ্ঞানের দৈন্যতা এবং চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।
এখন প্রশ্ন হলো- কেন নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দাল এমন জঘন্য অপকর্মটি করলেন? একজন বিখ্যাত অমুসলিম লেখক মাইকেল এইচ হার্ট যে নবী সা:-কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মনীষী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন; যাঁকে ভারতের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহাত্মাগান্ধী সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছেন, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওয়া হের লাল নেহরু যাঁকে সশ্রদ্ধ সম্মান দিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যাঁকে সম্মানিত করেছেন সেই মহামানুষ রাসূল সা:-কে সামান্য একজন দলীয় নেত্রী ও নেতা এভাবে অসম্মানিত করার সাহস কী করে পেলেন? এ প্রশ্নের উত্তর ভারতীয় স্কলাররাই দিয়েছেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দির শিক্ষক অপূর্বানন্দ লিখেছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, বিজেপি পরিচালনার নীতি কৌশলের সদা-সর্বদা অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে ইসলামবিদ্বেষ (নয়া দিগন্ত, ১২ জুন ২০২২)।
শশী থারুর বলেছেন, ‘এর মধ্যে দিয়ে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি যে সংখ্যাগুরুদের মধ্যে ইসলামবিদ্বেষ ছড়িয়ে ভোট নিতে মরিয়া হয়েছে, তা তারা আরো একবার বুঝিয়ে দিয়েছে। এর আগে বহুবার মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে বিজেপি নেতারা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেছেন। তবে এবারের আক্রমণ একেবারে সীমা ছাড়িয়ে গেছে। স্বয়ং মহানবী সা:-কে অবমাননা করে তারা বক্তব্য দিয়েছেন (প্রথম আলো, ১২ জুন ২০২২)।
প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি সৌম্য বন্দোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘নূপুর-নবীনদের কটূক্তি যদিও মোটেই বিনামেঘে বজ্রপাত নয়; নিরঙ্কুশ ক্ষমতা লাভের পর থেকে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের প্রশ্রয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রসার যেভাবে ঘটে চলছে, অহরহ ঘৃণা উগ্গিরণ হয়েছে, অপরাধীদের আড়াল করতে দল ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, রাজ্যে রাজ্যে নূপুর-নবীনদের তা সাহসী ও বেপরোয়া করে তুলছে … হিন্দুত্বের নামে আট বছর ধরে যা যা হয়ে আসছে, প্রতিটির লক্ষ্য মুসলমান সমাজ’ (প্রথম আলো, ৯ জুন ২০২২)।
আসলে ভোটের রাজনীতি লক্ষ্য থাকলেও আরো বেশ কিছু উদ্দেশ্য কাজ করেছে নূপুর শর্মাদের এসব বিষোদগারে। ভারত সরকার নূপুরকে দলের প্রান্তিক পর্যায়ের লোক দাবি করলেও নূপুর কিন্তু ভারতীয় সরকারি দলের জাতীয় মুখপাত্র ছিলেন। তারা ধরে নিয়েছিল এ ধরনের বক্তব্যের পথ ধরেই দেশে দাঙ্গার সৃষ্টি করে সন্ত্রাসীর তকমা দিয়ে ভারতীয় মুসলমানদের আরো প্রান্তিক করে তোলা সম্ভব হবে।
সন্ত্রাস দমনের নামে কাশ্মিরকে কেন্দীয়করণের পথকে আরো কঠোর করা যাবে। আলকায়দা বা আইএসকে উসকানি দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে ভারতে ব্যাপক মুসলিম নীপিড়নমূলক তৎপরতাকে জায়েজ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সম্পর্কের ক্ষতে মলম দিয়ে মজবুত করা যাবে। এই উসকানির ঘটনার দ্বারা বর্তমানে ভারতে চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে নাগরিকদের মনোযোগ অন্যদিকে সরানো সহজ হবে। তা ছাড়া মোদির কাশ্মির নীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। সেখানকার ‘পণ্ডিত’ সম্প্রদায় আতঙ্কিত হয়ে কাশ্মির ত্যাগের হুমকি দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার দাবানল খুবই দরকার হয়ে পড়েছিল বিজেপি সরকারের। কিন্তু ভারতের মুসলিম নেতারা মোদির ফাঁদে পা না দিয়ে বরং মুসলমানদের ধৈর্য ধরে শান্তি রক্ষার আহ্বান জানানোতে সরকারের ষড়যন্ত্র বিফল প্রমাণিত হয়েছে।
বিজেপি সরকারদলীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের এ ধরনের মূর্খতাসুলভ নোংরা কথনের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ ২০টি মুসলিম দেশ ভারতের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এর নিন্দা জানিয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত ভারতে মুসলিম নিধন ও নির্যাতন চললেও ঐসব দেশগুলো এই প্রথমবার কড়া ভাষায় তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তাদের বেসরকারি বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি ভারতের পণ্য বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে।
যে সব দেশের নাগরিক প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ভারত সরকার পিছু হটার ইঙ্গিত দিয়েছে। নূপুর শর্মাকে দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ও নবীন জিন্দালকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে। পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে এবং থানায় তলব করেছে।
এদিকে এই দুই নেতা-নেত্রী প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তাদের মূর্খতার জন্য। অন্যদিকে ওআইসি ভারতের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় মন্তব্য করার হিম্মত দেখিয়েছে। সব মিলে ভারত এই প্রথমবার মুসলিম নির্যাতনের জন্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে! কারণ, উপসাগরীয় মুসলিম দেশগুলো ভারতের প্রায় ৮৯ লাখ নাগরিক বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। ২০২০ সালে সারা ভারতে ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠিয়েছে (প্রথম আলো, ৯ জুন ২০২২)। জানা যায়, ভারতের মোট রেমিট্যান্সের অর্ধেকেরও বেশি এসব উপসাগরীয় দেশ থেকেই আয় হয় (নয়া দিগন্ত, ১৩ জুন ২০২২)।
খোদ ভারতেই বিজেপি নেত্রীর অপকর্মের তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে। উত্তর প্রদেশের রাচিতে বিক্ষোভকালে পুলিশের গুলিতে দু’জন মুসলমান তরুণ নিহত হয়েছেন, ৩০ জন আহত হয়েছেন, ৪০০ জন গ্রেফতার হয়েছেন এবং পুলিশ ১০ হাজার অজ্ঞাত আসামি করেছে। আর প্রতিবাদকারী নেতা জাবেদ মোহাম্মদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশেও প্রচণ্ড বিক্ষোভ হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে।
বাংলাদেশের নাগরিকরা বিজেপি নেতাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্যের প্রতিবাদ করলেও বাংলাদেশ সরকার কোনো ধরনের প্রতিবাদ জানায়নি। দেশের ৯০ শতাংশ নাগরিকের হৃদয় কাঁদলেও সরকার দেশের জনমনের প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রও হতে দেখা গেছে। বাগেরহাটের চিতলমারীতে এক কলেজছাত্রী রণিত বালা এবং ঢাকায় জনৈক অ্যাডভোকেট ফেসবুকের মাধ্যমে মহানবী সা:-কে কটূক্তি করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। তবে নাগরিকরা ধৈর্যের সাথে এসব মোকাবেলা করছেন। নড়াইলে একজন রাজনৈতিক নেতা একটি কলেজের অধ্যক্ষের পদ বাগানোর উদ্দেশে সংশ্লিষ্ট হিন্দু অধ্যক্ষকে অপসারণের জন্য এ ধরনের ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন।
কিছু লোক পরিকল্পিত উপায়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলমানদের আবেগ, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার জায়গায় আঘাত করে তাদের কলিজা টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারে, তাদের চোখে অশ্রু ঝরাতে পারে, কিন্তু তাদের প্রাণের নবী সা:-এর মর্যাদা এক সুতা পরিমাণ কমাতে পারবে না। আল্লাহ পাক নিজেই নবীজী সা:-এর খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন (৯৪ : ৪)। তাঁর বিদ্রুপকারীর জন্য আল্লাহ নিজেই যথেষ্ট বলে ঘোষণা দিয়েছেন (১৫ : ৯৫)।
আর যারা নবী সা:-কে কষ্ট দেয় তাদের জন্য দুনিয়াতে রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি এবং পরকালেও রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তির ওয়াদা (৯ : ৬১ এবং ৩৩ : ৫৭)। কাজেই রাসূল সা:-এর উম্মতদের বলতে ইচ্ছে করে- কষ্ট পেয়োনা ভাইবোনেরা! ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করতে হবে এদের পরিণতি দেখার জন্য যেমনটি দেখেছি আবু লাহাবের পরিণতি (১১১ : ১-৫)। নবী সা:-এর দুশমনরাই প্রকৃতপক্ষে লেজকাটা হয়েছে (১০৮ : ৩)। বেশি দূর যেতে হবে না আমাদের দেশেও আমরা সাম্প্রতিককালে এমন ব্যক্তিদের পরিণতি দেখেছি!
তবে নবীজী সা:-এর প্রতি কটূক্তি কোনো মোমেন সইতে পারেন না। এর জন্য সামান্যটুকু ঈমানের দাবিদার ব্যক্তিকে এর প্রতিবাদ করতে হবে। প্রতিবাদটি হবে দৃঢ়-কঠোর কিন্তু অবশ্যই শান্তিপূর্ণ। কারণ নবী সা:-এর শিক্ষা কখনোই কোনো প্রতিবাদ ভায়োলেন্ট হতে পারে না। রাস্তায় মিছিল-মিটিং করে প্রতিবাদ হবে কিন্তু কোনোভাবেই ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও বা সন্ত্রাসী কায়দায় হতে পারবে না। প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিকে যার যার পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানাতে হবে। কবিতা, গদ্য, প্রবন্ধ, লেখনী, বক্তৃতা-বিবৃতি ইত্যাদি সব প্রক্রিয়ায় শালীনতা ও ভদ্রতা বজায় রেখে প্রতিবাদ করতে হবে। তবে প্রতিবাদের সবচেয়ে বড় উপায় হলো নবীজী সা:-এর জীবন চরিতের চর্চা।
তাঁর জীবন চরিত থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং বিশ্ববাসীকে এই আদর্শ জীবনালেখ্য জানাতে হবে,প্রচার করতে হবে। নূপুর শর্মারা নোংরা অপবাদ দিয়েছেন ঠিক কিন্তু আমরা কি নূপুরদের আমাদের ভালোবাসার মহামানব রাসূল সম্পর্কে জানাতে ব্যর্থ হইনি? কাজেই নবীজী সা:-এর সুন্দরতম আদর্শ জীবনের শিক্ষা প্রতিটি নাজা না মানুষের কাছে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা চালানো এখন ঈমাদের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টিও শানাবাস নামের একজন আমেরিকান ডাক্তার ১৯৯৯ সালে ‘মিনারাত’ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি কুরআন-হাদিসের বিভিন্ন অকাট্য যুক্তি দিয়ে বলতে চেয়েছেন বিয়ের সময় আম্মাজান আয়েশার রা:-এর বয়স ছিল ১৭ কিংবা ১৮ বছর (নয়া দিগন্ত, ২০ জুন ২০২২)। এটি যদি গবেষণালব্ধ অনুসিদ্ধান্ত হয় তবে কমপক্ষে ভবিষ্যতে আর কোনো নূপুর এভাবে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটানোর সুযোগ পাবেন না। কিন্তু গবেষণা হোক বা না হোক এ বিষয়ে মোমিনদের মাঝে কোনো বিতর্ক বা মন্তব্যের সুযোগ নেই। কেননা, ইসলামের এই বাস্তবতাকে মোমিনরা আল্লাহর সিদ্ধান্ত হিসেবে এবং রাসূল সা:-এর জীবন চরিতকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন।