২ শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার
গ্রেফতারকৃতদের দাবি তারা ছাত্রলীগে যুক্ত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এক ছাত্রীকে শারীরিক হেনস্তা ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় মূল হোতাসহ জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- ৭ (র্যাব)।
গ্রেফতারকৃতরা হলো চবির ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র মো. আজিম (২৩), নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র মো. নুরুল আবছার বাবু (২২), হাটহাজারী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র মো. নুর হোসেন শাওন (২২), হাটহাজারী কলেজের অর্নাসের ২য় বর্ষের ছাত্র মো. মাসুদ রানা ও সাইফুল ইসলাম।
শনিবার বেলা ১১ টায় র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আফসার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ৪ জনকে গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। বিকেলে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় সাইফুলকে। গ্রেফতারকৃত সবাই বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশেপাশের এলাকার ছাত্রলীগ কর্মী।
এর আগে শুক্রবার রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলে তল্লাশি চালানো হয়। জড়িতদের একজন হলে অবস্থান করছেন এমন সংবাদের ভিত্তিতে তল্লাশি করা হলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায় নি।
ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত আটক ৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ চবি শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি দুজনকে একই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপারিশ করবে কর্তৃপক্ষ। বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিং এ বিষয়টি জানান চবি প্রক্টর অধ্যাপক রবিউল হাসান ভূঁইয়া। তিনি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব হেলথ এন্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেফতার যুবকরা নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।
তবে ছাত্রলীগে তাদের কোনো পদ নেই বলে তাদের সংগঠনটির কর্মী হিসেবে তুলে ধরতে চাননি র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।
এই ঘটনার ‘হোতা’ হিসেবে গ্রেফতার মোহাম্মদ আজিমকে ছাত্রলীগের সমর্থক হিসেবে স্বীকার করলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেছেন, এই অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না।
‘আজিম নিজেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতির অনুসারী ও অন্যরা অপর পক্ষের বলে দাবি করেছেন। যেহেতু তাদের কোনো পদ-পদবি নেই, র্যাব বলেছে তাদের আমরা কোনো দলের কর্মী বলতে পারি না।’
রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে হলে ফেরার পথে এক ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে পাঁচজন। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ।
ঘটনার পরদিন সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের বাধায় তা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর এক বন্ধু।
তবে রুবেলের দাবি, তিনি ওই ছাত্রীকে অভিযোগ দিতে বাধা নয়, বরং সহযোগিতা করেছেন।
ইতোমধ্যে রুবেলকে ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থী’ কাজ করায় শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেই নোটিস পেয়ে বুধবার ঢাকায় যায় রুবেল।
যৌন নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রী মঙ্গলবার থানায় মামলা করেন, তাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। সেদিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
যৌন নিপীড়নের এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা কর্মসূচি পালন করছে।