জমি-জিরাত, অর্থকড়ি, সোনা-গহনা নিয়ে মানুষ যুগে যুগে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। পুরাণে আছে, সুন্দরী হেলেনের জন্য ট্রয়বাসীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছিল গ্রিকরা, ধ্বংস হয়েছিল ট্রয় নগরী। এখনও দেশে দেশে লড়াই হয় তেল-গ্যাস, নদী-সাগরের পানি নিয়ে। তাই বলে মেঘ নিয়ে লড়াই? বিস্ময়কর হলেও সত্য, পানি সংকটে থাকা মধ্যপ্রাচ্যে মেঘ নিয়ে প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে ইরান। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে চলছে দোষারোপ, কথার লড়াই।
ইরানের কর্মকর্তারা কয়েক বছর ধরেই প্রতিবেশী দেশগুলো পানির এক বড় উৎস থেকে তাঁদের বঞ্চিত করছে বলে অভিযোগ করে আসছেন। পানির এ উৎস কোনো জলাধার, নদী বা সাগর নয়। এটি আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ। ২০১৮ সালে তীব্র খরা ও উষ্ণতার মধ্যে ইরানের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, আকাশে তাঁদের মেঘ থেকে পানি চুরি হয়ে যাচ্ছে। দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ডের এক কর্মকর্তা তো সরাসরি বলেই ফেলেন, ইসরায়েল ও আরেকটি দেশ ইরানের আকাশের মেঘ যাতে বৃষ্টি না ঝরায়, সেজন্য কাজ করছে। এই ‘আরেকটি দেশ’ হলো আরব আমিরাত। কারণ, তখন ইরানের এ প্রতিবেশী দেশটি মেঘে রাসায়নিক ছিটিয়ে বৃষ্টি ঝরানোর একটি প্রকল্প শুরু করেছিল।
আমিরাতে কয়েকটি এলাকায় বিমান নিয়ে কয়েকজন পাইলট ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকেন। আকাশে মেঘের খেলা দেখলেই তাঁরা রাসায়নিক নিয়ে উড়াল দেন। নব্বইয়ের দশকে আমিরাতে মাত্র ১ লাখ লোকের বাস ছিল। বর্তমানে দেশটিতে ১০ লাখের বেশি মানুষের বাস। এ কারণে ক্রমেই পানির সংকট তীব্র হচ্ছে।
আরব আমিরাতের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ততটা ভালো নয়। এ কারণে এ ধরনের অভিযোগে বিস্ময়ের কিছু নেই। আমিরাতের ওই প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য পানি চুরি নয়, বরং আকাশে যে মেঘ আছে, তা বৃষ্টিতে রূপান্তর।
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে বৃষ্টির হার একেবারেই কম। ওই অঞ্চলের ১৯টি দেশের মধ্যে ১২টিতে বছরে বৃষ্টির হার গড়ে ১০ ইঞ্চির চেয়েও কম। গত ৩০ বছরে এ হার আরও কমেছে। এ অবস্থায় দেশগুলোর সরকার পানি পেতে মরিয়া। এরই অংশ হিসেবে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকারগুলো। এর মধ্যে রয়েছে, মেঘে রাসায়নিক ছিটিয়ে বৃষ্টি ঝরানোর চেষ্টা। এ জন্য শত শত কোটি টাকাও খরচ করা হচ্ছে।
মেঘে রাসায়নিক দিয়ে বৃষ্টি ঝরানোর চেষ্টায় আছে ইরানও। এ দৌড়ে পিছিয়ে নেই মরক্কো ও ইথিওপিয়া। সম্প্রতি সৌদি আরব বৃহৎ পরিসরে এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ দেশগুলো ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের আরও আধা ডজন দেশ এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ভাবছে।
রাসায়নিক দিয়ে কৃত্রিমভাবে মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরানোর এ চেষ্টা খুব যে নতুন- এমন নয়। ৭৫ বছর আগে থেকেই এ ধরনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি এখনও প্রমাণ করে দেখানোর অপেক্ষায় রয়েছে। তাঁরা এক অঞ্চলের মেঘে রাসায়নিক দিলে অন্য অঞ্চলের মেঘ ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এমন ধারণা উড়িয়ে দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রুজার্স ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া বিজ্ঞানী অ্যালেন রোবক বলেন, মেঘে রাসায়নিক দিয়েই আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন না, বৃষ্টি হবে। তবে প্রক্রিয়া যে একেবারেই ব্যর্থ হয়, তা বলা যাচ্ছে না। যদি ব্যর্থই হতো, তাহলে মেঘ থেকে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি ঝরাতে এত অর্থকড়ি খরচ করত কেন দেশগুলো?