ব্রেইন ড্রেইন বা মেধা পাচার হলো কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন কিংবা শিক্ষিত মেধাবীদের বিরাট অংশের অভিবাসন তথা অন্য দেশে গমন। প্রতি বছর আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান আমেরিকা, ইংল্যান্ড বা এ জাতীয় উন্নত দেশে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই পড়াশোনা শেষ করে সেখানে চাকরিতে ঢুকে পরবর্তী সময়ে সেখানকার স্থায়ী নাগরিক হয়ে যান।
দক্ষ এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের এই বিদেশমুখিতা একটি ভাবনার বিষয় বইকি! একজন মেধাবী শুধু নিজের ব্যক্তিগত জীবনেই নয় বরং পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে মেধার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে অভূতপূর্ব অবদান রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু এই মেধাবীরা যখন নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গমন করেন, তখন নিজের দেশ ‘মেধাশূন্য’ হয়ে যায়। কিন্তু কেন মেধা পাচার হচ্ছে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়!
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৫৭টি দেশে প্রায় ৪৯ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশ গমন করেন। ২০২২ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই পাড়ি জমিয়েছেন ১১ হাজার শিক্ষার্থী। ইউনেসকোর তথ্য বলছে, ৭০ হাজার থেকে ৯০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে পাড়ি জমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সূত্রে জানা গেছে, দেশের শীর্ষ এই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ব্যাচের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশই শিক্ষার্থী বিদেশে চলে যান। তাদের খুব কমসংখ্যকই দেশে ফিরে আসেন।
এখন প্রশ্ন হলো, কেন হচ্ছে এমনটা? তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা কেন এভাবে বিদেশের প্রতি ঝুঁকছেন? বস্তুত, দেশে চাকরির অনিশ্চয়তা, শিক্ষাঙ্গনে আধিপত্যের রাজনীতি, বিদ্যাপীঠে অনুকূল পরিবেশ না থাকা, লেখাপড়ার বৈশ্বিক মানের ঘাটতি। মোটা দাগে এ চারটি কারণকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহী শিক্ষার্থীরা।
অধিকাংশ সময় দেখা যায়, আমাদের দেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অনার্স শেষ করে আরো দুই-তিন বছর দরকার হয় একটা কাঙ্ক্ষিত জব পাওয়ার জন্য। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেও মিলছে না জব। জব না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে কেউবা বেছে নেন আত্মহত্যা কিংবা কেউবা হয়ে পড়েন মাদকাসক্ত। সদ্য অনার্সে ওঠা শিক্ষার্থীদের এমন দৃশ্য চোখ এড়াতে পারে না। তারা চিন্তা করে এভাবে যে, ‘বাংলাদেশে লেখাপড়া করেও বেকার থাকতে হয়। এখানে চাকরির নিশ্চয়তা নেই। পড়াশোনার জন্য পাঁচ-ছয় বছর নষ্ট না করে আইইএলটিএস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’ যেমন চিন্তা তেমন কাজ, বর্তমানে দেশের অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষির জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।
এমতাবস্থায়, আমাদের করণীয় কী? দেশের এভাবে মেধাবী সন্তানের সেবাবঞ্চিত হওয়াটা তো কোনো শুভ লক্ষণ নয়! সুতরাং, প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা না বাড়িয়ে আমাদের শিক্ষার গুণমান বাড়ানো উচিত। কাজের অনিশ্চয়তা দূর করা, যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করতে পারলে মেধা পাচার বন্ধ করা সম্ভব হবে। নীরবে মেধা পাচার যেন না হয়, সেজন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের সচেতনতা আর সরকারের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবি।