আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে সিআইএর হামলায় আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি এ দাবি করেছে। তবে বৃহস্পতিবার তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেন, তারা জাওয়াহিরি মরদেহ খুঁজে পায়নি। তাঁরা এ বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। ।
মার্কিন কর্মকর্তাদের ভাষ্য, হামলার সময় আল-কায়েদার এই নেতা কাবুলে একটি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ড্রোন থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এতে জাওয়াহিরির মৃত্যু হয়।
কাবুলে এ হামলা হওয়ায় জাওয়াহিরি তালেবানদের কাছে আশ্রয় পেয়েছিলেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ওই সময় কাবুলে মার্কিন হামলাকে আন্তর্জাতিক নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবানের এক মুখপাত্র।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তার মতে, ২০২০ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবান যে চুক্তি করেছিল, কাবুলে জাওয়াহিরির উপস্থিতিতে তা লঙ্ঘিত হয়েছে।
আয়মান আল-জাওয়াহিরি কায়রোয় জন্মগ্রহণ করেন। যথেষ্ট ধনী পরিবারে জন্ম তার। তবে ছোটবেলা থেকেই চরমপন্থি মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। খুব অল্প বয়সেই তিনি মিশরের চরমপন্থি ইসলামিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
১৫ বছর বয়সে প্রথম গ্রেপ্তার হন জাওয়াহিরি। বেআইনি মুসলিম ব্রাদরহুড দলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণে। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট আনওয়ার সাদাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে গ্রেপ্তার হন জাওয়াহিরি। তিন বছরের জেল হয় তার। এরপর ১৯৯৭ সালে লাক্সারে পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনাতেও তার নাম জড়িয়ে যায়।
লাক্সারের ওই ঘটনার পরেই ওসামা বিন-লাদেনের সঙ্গে পরিচয় হয় জাওয়াহিরির। আফগানিস্তানে লাদেনের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন তিনি। লাদেনের ছায়াসঙ্গী হন। লাদেনের চিকিৎসক হিসেবেও কাজ করতেন তিনি।
১৯৯৮ সালে আমেরিকাকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে লাদেন একটি ফতোয়া দেন। আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেন। সেই ফতোয়ায় পাঁচ লাদেন ঘনিষ্ঠ সই করেছিলেন। জাওয়াহিরি তাদের মধ্যে একজন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে আক্রমণের পর লাদেনের সঙ্গে জাওয়াহিরিও বেপাত্তা হয়ে যান। তিনি নিহত হয়েছেন বলে একাধিকবার ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে।
বেপাত্তা থাকা অবস্থাতেই একাধিক হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে আফ্রিকায়। ২০১১ সালে লাদেন নিহত হওয়ার পর তিনি আল-কায়দার প্রধান হন। তার মাথার দাম ছিল দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার। তবে তার সময়ে আইএস আরো বড় শক্তিতে পরিণত হয়। সিরিয়া এবং ইরাকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তারা দখল করে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেন, কাবুলে ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন জাওয়াহিরি।