চলতি মে মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোট ৭৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। প্রবাসী আয়-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য মিলেছে।
ফলে ডলার-সংকটের মধ্যে ঈদের পরের মাসেও প্রবাসী আয়ে গতি আসেনি বলে জানাচ্ছেন ব্যাংকাররা। ঈদুল ফিতরের মাসে, অর্থাৎ গত এপ্রিলে পুরো মাসে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। এই আয় ছিল গত বছরের এপ্রিল মাসের প্রবাসী আয়ের তুলনায় অনেক কম। সে সময় প্রবাসী আয় এসেছিল ২০১ কোটি ডলার।
ব্যাংকগুলো এখন সর্বোচ্চ প্রতি ডলার ১০৮ টাকা দামে প্রবাসী আয় কিনতে পারছে, যা কার্যকর হয়েছে ১ মে থেকে। ঈদের মাসেও প্রবাসী আয় কম আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম বাড়িয়েছে। এর আগে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ছিল ১০৭ টাকা।
সাধারণত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদের মাসে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি পরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়ে থাকেন।
ব্যাংকাররা বলছেন, বাজারে হুন্ডিতে পাঠানো ডলারের দাম পাওয়া যায় ১১০ টাকার বেশি। অন্যদিকে বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দরে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনলে ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাস্তির মুখে পড়তে হয়। এ কারণে ব্যাংকগুলো বেশি দাম দিয়ে আয় আনতে পারছে না। এ ছাড়া ঈদের পরের মাসে এমনিতেই আয় কম আসে। এর প্রভাব পড়বে চলতি মাসের প্রবাসী আয়ে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে বৈধ পথে ২০২ কোটি ২৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় বাংলাদেশে আসে, যা ছিল ফেব্রুয়ারির আয়ের চেয়ে ৪৬ কোটি ডলার বেশি। ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৬ কোটি ডলার। সেই পরিমাণ আবার জানুয়ারির তুলনায় ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার বা প্রায় ২০ শতাংশ কম ছিল। জানুয়ারিতে প্রায় ১৯৬ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে বেশি পরিমাণে প্রবাসী আয় আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরপরও ব্যাংকের মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয় প্রত্যাশামতো বাড়ছে না। এমন প্রবণতাও দেখা গেছে যে, এক মাসে প্রবাসী আয় বাড়ছে তো আরেক মাসে কমছে। এ বছরের জানুয়ারিতে প্রবাসী আয়ে কিছুটা গতি এলেও ফেব্রুয়ারিতে কমে যায়। পরের মাসেই, অর্থাৎ মার্চে আবার ভালো অবস্থা দেখা গেছে প্রবাসী আয়ে। এপ্রিলে আবার যা কমেছে।
বাংলাদেশে গত বছরের মার্চ মাস থেকে ডলার-সংকট চলছে। এখন ধীরে ধীরে এই মুদ্রার দাম বাড়ানো হচ্ছে, যাতে দেশে ডলারের প্রবাহ বাড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের ডলার বিক্রিতে এই মুদ্রার দাম ১০৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা করেছে। রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম এখন ১০৬ টাকা। আর আমদানি অর্থায়নে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম এখন ১০৭ টাকা। তবে অনেক ব্যবসায়ীকে ১১০ টাকার বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগও রয়েছে।