ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল সীমিত রাখায় ৯০ শতাংশ মোটরসাইকেল চলাচল কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি বলছে, গত ঈদে সারা দেশে ২৫ লাখ মোটরসাইকেল চলাচল করলেও এবার সেই সংখ্যা আড়াই লাখে নেমে এসেছে। আর গত ঈদে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে ১২ লাখ ট্রিপ হলেও এবার চলেছে এক লাখ ২০ হাজার মোটরসাইকেল।
যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সূত্র কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে, ঢাকা থেকে ২০ হাজারের মতো মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়েছে।
সেই হিসাবে মহাসড়কে এবার ২০ হাজারের মতো মোটরসাইকেল চলাচল করেছে।
এদিকে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল কমায় তুলনামূলক দুর্ঘটনা কমেছে বলে মনে করছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। যদিও মোটরসাইকেল চলাচল সীমিত থাকায় মহাসড়কে ভোগান্তি বেড়েছে। সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রমাণ হলো ঈদ যাত্রা স্বস্তির হতে হলে মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিতে হবে, জীবন দিতে হবে। মহাসড়কে মোটরসাইকেল কম থাকায় দুর্ঘটনা কমলেও ভোগান্তি বেড়েছে অনেক। ’
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, এবার সংগঠনটি চারটি মহাসড়ক পর্যবেক্ষণ করেছে। এসব মহাসড়কে মোটরসাইকেল কম চলতে দেখা গেছে। পর্যবেক্ষণ থেকে তাদের ধারণা, গত ঈদের হিসাবে এবার ১০ শতাংশ মোটরসাইকেল মহাসড়কে চলাচল করেছে।
তবে গত ঈদের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা কমলেও বাস-ট্রাক দুর্ঘটনার সংখ্যা এবার বাড়বে বলে মনে করছেন সেভ দ্য রোডের মহাসচিব শান্তা ফারজানা। তিনি বলেন, এই ঈদে মোটরসাইকেল চলাচল সীমিত থাকলেও মহাসড়কে দুর্ঘটনা তেমন কমবে না। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা পাঁচ শতে পৌঁছাতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের প্রধান মুনিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, মহাসড়কে চলাচলের জন্য ঢাকা থেকে ২০ হাজারের মতো মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। উপযুক্ত কারণের ভিত্তিতে অনুমতি দেওয়া হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির দেওয়া গত ঈদ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন বলছে, গত ঈদে ১৫ দিনে সারা দেশে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত হয়। আর আহত হয় ৮৪৪ জন। যদিও সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৪৪৩ জন নিহত এবং ৮৬৮ জন আহত হয়েছে।
এর মধ্যে ঈদে মোট ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত হয়। আহত হয়েছে অন্তত ১১০ জন। এই হিসাব মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৪.০৮ শতাংশ এবং দুর্ঘটনায় মোট নিহতের ৩৪.৮৫ শতাংশ ও আহতের প্রায় ১৩.০৩ শতাংশ।
২০২১ সালের ঈদুল ফিতরে যাতায়াতের সঙ্গে তুলনা করলে গত ঈদে সড়কে ১৪.৫১ শতাংশ দুর্ঘটনা বেশি হয়েছে। নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ২২.৩৫ শতাংশ এবং আহত ২৬.৩০ শতাংশ বেড়েছে।
গতকাল সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মোটরসাইকেলের কারণেই দুর্ঘটনা বেশি হয়। সরকারের পক্ষ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করা খুবই প্রয়োজন ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারি আদেশ মানা হয়েছিল, আবার কিছু কিছু আদেশ লঙ্ঘন করে হাইওয়েতেও চলেছে মোটরসাইকেল। ছোট ছোট যানগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না হলেই সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের কারণেই দুর্ঘটনা কমেছে।