পশ্চিবঙ্গের বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত যশোর রোড সম্প্রসারণের জন্য ৩০৫টি শতবর্ষী বৃক্ষ কাটার অনুমতি দিয়েছে ভারতের আদালত।
ভারতের বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত যশোর রোড সম্প্রসারণের জন্য চার হাজার ৩৬টি গাছ কাটার পরিকল্পনা করেছিল রাজ্যের পূর্ত বিভাগ। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। মামলাটি করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গাছ স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। পরে প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ ৩৫৬টি গাছ কাটার নির্দেশ দেন। তবে শর্তও জুড়ে দেয় আদালত। একটি গাছ কাটার আগে ৫টি গাছ লাগাতে হবে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় এপিডিআর। হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
কিন্তু সেই স্থগিতাদেশ খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। স্থানীয় সময় বুধবার স্থগিতাদেশ খারিজ করে আদালত। তবে ৩০৬টি গাছ কাটার আগে ১৫০০টি গাছ লাগাতে হবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে।
রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতকে জানান, যশোর রোড সম্প্রসারণের বন্ধ থাকায় এই পথে দুর্ঘটনা ঘটছে। গত পাঁচ বছরে প্রায় ৬০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। রাস্তা সম্প্রসারণের অনুমতি পেলে প্রতিটি গাছের জন্য পাঁচটি করে গাছ লাগাবেন বলে আদালতে জানান।
এদিকে এপিডিআর-এর তরফ থেকে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতকে বলেন, এর আগে উন্নয়নের নামে বহু ক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষায় নজর দেয়নি স্থানীয় সরকার।
যশোর রোড ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের মধ্যে সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মহাসড়ক। বিস্তৃত যশোর রোডের ৩৫ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে, বাকিটা পশ্চিমবঙ্গে। ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বৃক্ষ কেটে বাংলাদেশের সরকারও সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু আন্দোলন ও আদালতের হস্তক্ষেপের পর সরকার সেই উদ্যোগ বন্ধ করে দেয়। যশোর থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল-বনগাঁ-হাবড়া-বারাসাত পার হয়ে কলকাতার শ্যামবাজার পর্যন্ত ১২৫ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই রোড।
যশোর শহরের বকচরের জমিদার ছিলেন কালী প্রসাদ পোদ্দার। তিনি এই রাস্তা নির্মাণ করেন। নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৮৪৫ সালে। এই সড়কের পাশে বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রচুর গাছ লাগানো হয়। সেই গাছই আজ শতবর্ষী গাছের তকমা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যশোর রোড়ের দুইপাশ জুড়ে।