পুলিশ হেফাজতে মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরো বেশ কয়েক জন ইরানি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে আমিনির চল্লিশা উপলক্ষ্যে তার কবরে সমবেত হওয়া মানুষের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ার কথা জানিয়েছে কুর্দি মানবাধিকারের একটি গোষ্ঠী।
জানা গেছে, ১২ জনের বেশি ইরানি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পুলিশি হেফাজতে ইরানি তরুণী মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ সহিংসভাবে দমন করায় ঐ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছ। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের গোয়েন্দাপ্রধান মোহাম্মদ কাজেমি, সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের গভর্নর হোসেন মোদারেস খিয়াবানি।
এছাড়া কালো তালিকায় রয়েছেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) দুজন কর্মকর্তা। তাদের একজন ইসফাহান শহরের পুলিশপ্রধান। এ ছাড়া জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের সাত জন কারা কর্মকর্তা রয়েছেন ঐ তালিকায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ বলেছে, গত জুনে আইআরজিসির গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হওয়ার পর থেকেই কাজেমি ইরানের সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ সহিংসভাবে দমন করেছেন। আইআরজিসি ও এর বাসিজ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী জাহেদান এলাকায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৮০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় সিস্তান ও বেলুচিস্তানের গভর্নর খিয়াবানিকে দায়ী করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানের দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হ্যাকারদের প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও ইরান সরকারের ওপর ইন্টারনেটের সেন্সরশিপ পরিচালনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে ২২ বছরের মাহশা আমিনির মৃত্যুর ৪০ দিন পার হয়েছে। আমরা আমিনির পরিবার ও ইরানের জনগণের জন্য শোক এবং তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানাচ্ছি। যদিও পুলিশের হেফাজতে মাহশা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে ইরান জুড়ে যে বিক্ষোভ চলছে, তার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।
এদিকে মৃত্যুর ৪০ দিন উপলক্ষ্যে শোক জানাতে কুর্দি অধ্যুষিত শহর সাকেজে পুলিশি নির্যাতনে নিহত ইরানি তরুণী মাহশা আমিনির কবরে অনেক মানুষ জড়ো হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। সমবেত জনতাকে লক্ষ্য করে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী গুলিও ছোড়ে বলে দাবি করেছেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী। কুর্দির একটি মানবাধিকার গোষ্ঠীও সাকেজ শহরের জিনদান স্কয়ারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি এবং টিয়ারগ্যাস ছোঁড়ার কথা জানিয়েছে। বুধবার মাহশার মৃত্যুর ৪০ দিন পূরণ হয়। যদিও তার স্মরণে পরিবার থেকে তেমন কোনো আয়োজন ছিল না। কিন্তু পুরো প্রদেশ থেকে বহু মানুষ মাহশার জন্য শোক জানাতে তার শহরে এদিন উপস্থিত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন বলেন, মাহশার স্মরণে শোক প্রকাশ করতে লোকজন কবরস্থানে জড়ো হয়। এ সময় দাঙ্গা পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এমনকি সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। তবে এ বিষয়ে ইরানি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা যায়নি। ইরানের আধা সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা জানায়, কবরস্থানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ জড়ো হয়। তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ বেধে গেলে ঐ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, সাকেজ শহরে প্রচুর দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করার পরও হাজার হাজার মানুষ মিছিল করে মাহশাকে যেখানে কবর দেওয়া হয়েছে, সেই কবরস্থানের দিকে যাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, মাহশার চল্লিশায় আবার বিক্ষোভ উসকে উঠতে পারে আশঙ্কায় নিরাপত্তা বাহিনী থেকে মাহশার পরিবারকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছিল তার চল্লিশার আয়োজন না করতে। করা হলে ‘তাদের ছেলেদের গ্রেফতার করা হবে’। যদিও কুর্দিস্তান প্রদেশের গভর্নর অভিযোগ অস্বীকার করে রাষ্ট্রায়াত্ত সংবাদমাধ্যমকে বলেন, চল্লিশার অনুষ্ঠান আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত তার পরিবারের ছিল।