ফরিদ সুমনঃ-
ন্যাটো-র সদস্য হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার জন্য রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমন করেছে প্রায় ২ বছর হয়েছে। দুই পক্ষের দাবি অনুসারে লাখখানেক মানুষ মারা গিয়েছে! দুই দেশের ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ নষ্ট হয়েছে। পৃথিবীব্যাপি শতকোটি মানুষ আর্থিক ক্ষতির মুখে পরেছে। এর ফলে পুরো পৃথিবীর কত ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে সে হিসাব জানা যাবে না কোন দিনই।
হামাস ইসরায়েলকে চমকে দিয়ে ৭অক্টবর বিশ্বকে একটা বড় রকম ঝাকুনি দিয়েছে। ফলাফল একটা দেশ একেবারেই ধ্বংস হওয়ার পথে।
ভেনেজুয়েলা ও প্রতিবেশি কিউবাকে হুমকির মধ্যে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র, তবে নিজের ভূখন্ডের কাছাকাছি কোন রকম যুদ্ধ চায়না তারা তাই এ দেশ দুইটা যুদ্ধ থেকে মুক্তি পেয়েছে।
এশিয়া-আফ্রিকা, ইউরোপ আমেরিকার কাছে যুদ্ধ অনুশীলন-ভূমি। তাই সে মহাদেশ দুটির প্রতিটা কর্নারে তারা যুদ্ধ পরিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে একের পর এক। ভিয়েতনামে শুরু করে আফগানিস্তান এসে আটকে গিয়েছিলো ন্যাটো বাহিনি, সেখান থেকে পালিয়েছে ঠিকই কিন্তু কোথাও যুদ্ধ না থাকলেতো তাদের যুদ্ধ ব্যবসা চলবে না! আর সে জন্যই রাশিয়াকে তাতাতে ইউক্রেনকে লেলিয়ে দিলো ন্যাটো। ঘাড়ের উপরে উঠতে যাওয়া ন্যাটোকে ধাক্কা দিতে রাশিয়া আক্রমন করল ইউক্রেনে। ধ্বংস হলো ইউক্রেন, অশান্ত হলো পৃথিবী, এতে কী লাভ হলো যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটোর?
অস্ত্রের খোঁজে ইরাক গেলো যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো, ইরাক ধ্বংস হলো কোথাও এক বিন্দু অস্ত্র খুজেঁ পেলোনা, জাতীসংঘ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো কারো কোন জবাবদিহি করতে হলো না, এটা কোন সভ্যতা! এর থেকেতো পশুদের সভ্যতাও অনেক উন্নত।
অস্ত্রে সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র চায় পৃথিবীটা তাদের অস্ত্রে ভরে উঠুক! সে জন্য তারা লোন দিতেও রাজি। নিজের দেশের প্রতিটা মানুষের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে একটা ভয়ংকর সমাজ সৃষ্টি করেছে, কারো জীবনের কোন নিশ্চয়তা নাই। যেখানে সেখানে জখন যার ইচ্ছে হয় গুলি করে দিচ্ছে, এটা নাকি তাদের সাংবিধানিক অধিকার(!) এটা কোন সভ্য সমাজ! বাইডেন-ট্রাম্পের দেশের থেকেতো আমাজন জঙ্গলও অনেক সভ্য। এখন তারা মেতেছে পৃথিবীটাকে অগ্নিকুন্ড বানাতে। যারাই তাদের থেকে অস্ত্র কিনতে অস্বিকার করছে তাদের উপর নেমে আসছে নানা রকম হুমকি, এমনকি তাদের যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
ন্যাটোকে সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে রাশিয়ার মুখে তুলে দিয়ে পুরো জাতিটাকে শঙ্কটে ফেলে দিয়েছে, ইউক্রেন এখন পারছে না যুদ্ধ চালাতে আবার যুদ্ধ থেকে বের হতেও দেয়া হচ্ছে না। রাশিয়া যদি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের দিকে যায় (মনে হচ্ছে রাশিয়া সেটাই চাচ্ছে) তবে ইউক্রেনের দাতারা ধৈর্য রাখতে পারবে না, তাই যদি হয় তবে ফলাফল হবে একটা জাতী পৃথিবী থেকে চিরো দিনের জন্য হারিয়ে যাবে আর একটা সমৃদ্ধ দেশ জনশূন্য হয়ে বিরানভূমিতে রুপান্তরিত হয়ে যাবে!
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল গাজাকে প্রায় মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে। আমরা ধরে নিতে পারি সেখানে সরকারী হিসাবে যা বলছে মারা যাচ্ছে তার ৫ থেকে ৬গুন মানুষ, যাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু। এই যে এতো শিশু মারা যাচ্ছে এটা কী যুদ্ধাপরাধ না? ইউক্রেনে বেচে যাওয়া শিশুদের রাশিয়া তুলে নিয়ে নিরাপত্তার সাথে (রাশিয়া বলেছে) রক্ষা করার ব্যাবস্থা করলে যদি যুদ্ধাপরাধ হয় তবে এতো শিশু হত্যা করলে যুদ্ধাপরাধ নয় কেন? এখন ইন্টারন্যাশনাল আদালত কোথায়? এখন কী করে তারা? একটা হুলিয়া কী বের হবে তাদের থেকে? নাকি তা করার সাহস নাই? তারা নিরপেক্ষ হলেতো সে সাহস থাকার কথা।
কোন দেশ যদি নিজেকে পৃথিবীর মোড়োল মনে করে তবে তার হাতে দুইটা পথ থাকে, একটা পৃথিবীকে নরক জন্ত্রনায় ডুবিয়ে দেয়া আর একটা স্বর্গ সুখে ভাসিয়ে রাখা। যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে মোড়োল ভাবতে শুরু করেছে ২য় মহাযুদ্ধ থেকে। আর তখন ইউরোপকে নরক বানিয়ে জাপানকে একদম নরকের সপ্তমে ডুবিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে না তুলতেই রাশিয়া আবার নিজেকে ক্ষমতার শীর্শে নিয়ে যাওয়ার মিশন শুরু করে, আর চীন এগিয়ে চলেছে একই লক্ষে। এদের হাত থেকে নিজেকে বাচাতে এবার যুক্তরাষ্ট্র বেচে নিলো সেই জাপানকে, সব রকম সহায়তা দিয়ে উৎপাদনে নিয়ে গেল। কিন্তু সাথে একটা সর্ত দিলো জাপান কখনো সেনাবাহিনী গঠন করবে না, তাদের নিরাপত্তার দিকটি দেখবে তারা, আর এই করতে গিয়ে তারা জাপানে গোটা একটা গ্যারিসন স্থাপন করলো। চীন-রাশিয়া আটকাতে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে দিয়েছে পরমানু স্থাপনা আর জাপানকে দিয়েছে প্রযুক্তি আর সেনা। ফলাফল পৃথিবীটা নরক হওয়ার প্রথম পর্ব কৃতিত্বের সাথে সেট করেছে তারা। আর তারই ফল এখন ভোগ করছে পৃথিবীবাসী। এখন ইরান, উত্তর কোরিয়া বা অন্য কেউ যদি পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ হয় তাতে বাধা দেয়ার নৈতিক অধিকার কী যুক্তরাষ্ট্রের আছে?