ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সম্মুখ সমর থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার কারণে রুশ অনেক সেনা আর যুদ্ধে ফিরতে চাচ্ছেনা। রাশিয়ান মানবাধিকার-বিষয়ক আইনজীবী এবং কর্মীরা এমনটাই জানিয়েছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রুশ সেনা সের্গেই (ছদ্মনাম) চলতি বছরের শুরুতে পাঁচ সপ্তাহ ইউক্রেনে লড়াই করেছেন। তিনি বলেন, অন্যকে হত্যা করতে এবং নিজে মরতে আমি আর ইউক্রেনে ফিরে যেতে চাই না।
তিনি এখন রাশিয়ার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন এবং সম্মুখ সমরে যাওয়া এড়াতে আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন। ইউক্রেনে ফিরে যাওয়া এড়াতে এই রকম আইনি পরামর্শ নিতে আইনজীবীদের দ্বারস্থ হওয়া শত শত রাশিয়ান সেনার মধ্যে সের্গেই একজন।
সের্গেই বলেন, ইউক্রেনে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে তিনি এখন ট্রমাটাইজড হয়ে আছেন। তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম আমরা রুশ সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী। আর এই আত্মবিশ্বাস থেকে অন্ধকারে দেখার (নাইট ভিশন) যন্ত্রের মতো অতিপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়াই ইউক্রেনে অভিযানে যাওয়ার আশা করেছিলাম।
তিনি বলেন, আমরা চোখ বাঁধা বিড়াল ছানার মতো ছিলাম। আমাদের সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে আমি অবাক হয়েছি। আমাদের সরঞ্জাম দিতে তারা বেশি খরচ করতে রাজি না। কেন যে সেগুলো দেওয়া হলো না?
এক আইনজীবী জানান, সমমনা দুই সহকর্মীকে নিয়ে আইনজীবীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন সের্গেই। পরে ওই আইনজীবী তাদেরকে অস্ত্র জমা দিতে এবং ইউনিট হেডকোয়ার্টারে ফিরে যেতে পরামর্শ দেন।
আইনজীবী তাদের বলেন, হেডকোয়ার্টারে ফিরে তাদের চিঠি লিখে জানানো উচিত তারা ‘নৈতিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত’ এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আর পারবেন না।
আইনজীবীর পরামর্শে চিঠি দেওয়া হলে পরবর্তীতে সের্গেইকে জানানো হয়, নিজ ইউনিটে ফিরে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এভাবে চলে গেলে তা পদত্যাগ হিসেবে ধরা হবে এবং এতে তাকে সাজার মুখে পড়তে হবে।
রাশিয়ার মানবাধিকার-বিষয়ক আইনজীবী অ্যালেক্সি তাবালভের মতে, রাশিয়ায় চুক্তিবদ্ধ সেনা সদস্যদের চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজ ইউনিটে থাকতে সেনা কমান্ডাররা ভয়ভীতি দেখান। তবে তাবালভ এও বলেছেন, রাশিয়ার সামরিক আইনে এমন একটি ধারা আছে, যেখানে সেনাদেরকে যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যানের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
কনফ্লিক্ট ইন্টেলিজেন্স টিম একটি মিডিয়া প্রকল্প যা গোপন সাক্ষাৎকার এবং ওপেন সোর্স উপাদানের ভিত্তিতে ইউক্রেনে রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর অভিজ্ঞতার তদন্ত করছে। এই টিমের সম্পাদক হলেন রুসলান লেভিয়েভ। তার ভাষ্যমতে, সের্গেইয়ের মতো রাশিয়ান সেনাদের সম্মুখ সমরে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানানো কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।